দেশজুড়ে

তিন সংকট ভোগাচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার যাত্রীদের

ফেরি স্বল্পতা, তীব্র স্রোত আর মূল চ্যানেলে পানি কমে যাওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ঘাটে ফেরি পারের অপেক্ষায় যানবাহনগুলো আটকা থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস পার করা হলেও পণ্যবাহী ট্রাক আটকা থাকছে দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত।

Advertisement

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, ঈদের আগে থেকেই তীব্র স্রোতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। যা এখানও বিদ্যমান। এর সঙ্গে বর্তমানে যোগ হয়েছে ফেরি স্বল্পতা। ১৯টি ফেরির মধ্যে ৫টি বিকল থাকায় বর্তমানে চলাচল করছে ১৪টি ফেরি।

এছাড়া পাটুরিয়া প্রান্তের ঘাটের বেসিন ও মূল চ্যানেলে পানি কমে যাওয়ায় ফেরি চলাচল করছে প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে। এতে সময় বেশি লাগায় কমে গেছে ট্রিপ সংখ্যা। বেড়েছে যাত্রী দুর্ভোগ। প্রায় প্রতিদিনই দুই প্রান্তে পারাপারের অপেক্ষায় যানবাহন আটকা থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আটকা পড়া যানবাহনের যাত্রী বিশেষ করে নারী ও শিশুরা শিকার হন চরম দুর্ভোগের।

কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রী জানান, সারা বছরই কোনো না কোনো সমস্যা লেগেই থাকে ঘাট দুটিতে। বিভিন্ন উৎসবের সময় এটা মানা গেলেও অন্য সময় মানা যায় না। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই যাত্রী ভোগান্তির শেষ নেই ঘাটে।

Advertisement

বাসচালক আরিফুর রহমান অভিযোগ করেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে বসে থাকলেও মাঝে মধ্যে ভিআইপি পার করার নামে পরে আসা যানবাহন আগে পার হয়। এসময় খুব কষ্ট লাগে। তারপরও প্রতিবাদ করতে পারি না। কারণ ঘাটতো তাদের ইচ্ছেয় চলে।

এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, প্রতিদিন দুপুরের দিকে যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। এসময় যানবাহন গুলোকে ঘাটে বেশি সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ রেখে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হয়। কাউকে ইচ্ছা করে বসিয়ে রেখে অন্য কাউকে পারাপার করার সুযোগ নেই। বাসের সিরিয়াল ব্রেক করে ভিআইপি পারাপারের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে চলাচলকারী মোট ১৯টি ফেরির মধ্যে বর্তমানে চলাচল করছে ১৪টি ফেরি। এর মধ্যে রো-রো ফেরি শাহ আলী, খানজাহান আলী এবং কে-টাইপ ফেরি কপোতী মেরামতের জন্য নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ও কুমারী নামের ফেরি দুটি মেরামত করা হচ্ছে বিআেইডব্লিউটিসির স্থানীয় ভাসমান কারখানায়।

Advertisement

বিআইডব্লিউটিসির নির্বাহী প্রকৌশলী এনামূল হক অপু জাগো নিউজকে জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে চলাচলকারী রো-রো ফেরিগুলোর বেশির ভাগই অনেক পুরাতন।একারণে প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। বড় ধরনের সমস্যা হলে নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ডে এবং ছোট খাটো সমস্যা হলে ভাসমান কারখানায় মেরামত করা হয়। ফেরি সচল রাখতে রাতদিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এদিকে বর্ষা মৌসুম শেষ না হতেই পাটুরিয়া ঘাটের বেসিন ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটের মূল চ্যানেলে অস্বাভাবিক ভাবে পানি কমে গেছে। সেখানে বড় ধরনের ডুবোচর পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বৃহস্পতিবার থেকে পাটুরিয়া প্রান্তে একটি ড্রেজার বসিয়ে খনন কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। ড্রেজিংয়ের কারণে শনিবার সারাদিন ৫ নম্বর ঘাট বন্ধ ছিল।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পাটুরিয়া প্রান্তে ড্রেজিং কাযক্রম শুরু হয়েছে। যেখানে সমস্যা দেখা দেবে সেখানেই ড্রেজিং করা হবে। আগামীতে ড্রেজারের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/এমএস