বিনোদন

জাজের চোখে যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালায় অসঙ্গতি

পুরনো নীতিমালা সংশোধন করে যৌথ প্রযোজনার ছবির জন্য নতুন নীতিমালা আসছে শিগগির। সম্প্রতি নতুন নীতিমালার একটি খসড়াও প্রকাশ করেছে সরকার। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ২০১২ সালের নীতিমালার ভিত্তিতে নতুন নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে।

Advertisement

তবে এই নীতিমালায় কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরেছে দেশের শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। জাজ মাল্টিমিডিয়া এই খসড়ার কিছু অসঙ্গতি ও তাদের মতামত তুলে ধরেছে তাদের ফেসবুক অফিসিয়াল পেজে।

প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফেসবুক অফিসিয়াল পেজে লিখেছে-

যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের নীতিমালা - ২০১৭ (প্রস্তাবিত) গ.(০২) যেকোনো ব্যবসায় ব্যবসায়ী তার কিছু গোপনীয়তা রাখবে। তাই বিনিয়োগের পরিমাণ জানা একজন প্রযোজকের জন্য অবশ্যই অস্বস্তিকর। তাছাড়া সিনেমা সম্পূর্ণভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত সঠিক বাজেট করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যেমন, বৃষ্টি বা শিল্পীর অসুস্থতার কারণে শুটিং ৩ দিন বেড়ে গেলে, সিনেমার খরচ ১০ লক্ষ টাকা বেড়ে যায়। যা কখনই পূর্বে অনুমান করা সম্ভব নয়।

Advertisement

(০৪) যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের বিদেশি প্রযোজকের প্রদত্ত অনুমতি / ছাড়পত্র / এন্ডোরসমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। এবং তা প্রিভিউ কমিটিকে সিনেমা দেখানোর সময় তা দাখিল করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন দ্বারা সত্যায়িত করা, যৌথ প্রযোজনার প্রক্রিয়াকে জটিল করবে।

(০৬) যৌথ প্রযোজনায় নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের পরীক্ষা ও পর্যালোচনার কমিটিতে অবশ্যই শিল্পী সমিতির প্রতিনিধি থাকার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। কারণ চলচ্চিত্রে একজন শিল্পী শুধু মাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করে। তাই শিল্পী সমিতির প্রতিনিধিত্ব এই প্রক্রিয়ার শুধু জটিলতাই বাড়াবে।

(০৭) চলচ্চিত্রের প্রযোজক অথবা তার মনোনীত প্রতিনিধিকে বাছাই কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতে দেওয়া বঞ্চনীয়।

(০৯, ১০ ও ১১) যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণের জন্য আবেদন পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে বিএফডিসি তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে এবং মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। বিএফডিসির সিদ্ধান্ত পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে, মন্ত্রণালয় তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বাধ্য থাকবে। আবার কেন ফাইল বিএফডিসি তে আসবে? এর কোনো প্রয়োজন নেই। এতে শুধুই সময় ক্ষেপণ মাত্র। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনই চূড়ান্ত অনুমোদন বলে বিবেচনা করতে হবে।

Advertisement

(ঙ)(০১) যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রের কাহিনী মৌলিক হতে হবে, কিন্তু যদি কোনো সিনেমার অবলম্বনে বানানো হয়, তবে সেই ক্ষেত্রে কপি রাইটের পত্র দাখিল করতে হবে।

(০২) চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নিয়োযিত পরিচালক, মুখ্য অভিনয় শিল্পী এবং কলাকুশলীর সংখ্যা, যৌথ প্রযোজকগণ যৌথ প্রযোজনা চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন। চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে কোনো একজন পরিচালক হলেই হবে। তবে শিল্পী ও কলাকুশলী সমানুপাতিক হারে হবে।

(০৪) যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন কাহিনী ও চিত্রনাট্যের প্রয়োজন অনুসারে হবে।

(০৫) এই পয়েন্ট সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে। অনেক সময় অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কিন্তু ব্যস্ত আর্টিস্টের শিডিউল চলে যাবে বলে প্রযোজক শুটিং করতে বাধ্য হন।

(০৬) যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার ৪৫ দিন অতিক্রান্ত না হলে চলচ্চিত্র প্রিভিউয়ের জন্য জমা দেয়া যাবে না।

(১০) যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বিদেশি নির্মাতাগণের সঙ্গে ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা ও ফেরত নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সহজিকরণের জন্য বিদেশি যন্ত্রপাতি আনা ও নেওয়ার জন্য বিএফডিসির অনুমোদনই যথেষ্ট।

(যেখানে বড় বড় গার্মেন্টস ও অন্যান্য আমদানি রপ্তানিতে অভিজ্ঞ্য ফ্যাক্টরি হিমসিম খায় ও দীর্ঘ সময় লাগে, সেখানে আমদানি রপ্তানিতে অনভিজ্ঞ চলচ্চিত্র প্রযোজক গণ কীভাবে এত সব অফিসের সম্মুখীন হবে?)

এদিকে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (চলচ্চিত্র) ইউছুব আলী মোল্লা খসরা নীতিমালা প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সব বিষয়ই রাখা হয়েছে খসড়াটিতে। এখন এ বিষয়ে আমরা সকলের মতামত নিচ্ছি। ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মতামত নেওয়া হবে। অন্তর্ভুক্ত করার মতো যদি কোন মতামত পাওয়া যায় তবে তা যুক্ত করে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে।’

সবশেষে জাজের দাবি, নীতিমালায় এসব অসঙ্গতি দূর করা না গেলে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ সম্ভব নয়। দর্শকদের ভালো ছবি উপহার দেয়া সম্ভব নয়। যার ফলে ভালো ছবি না হলে দর্শকরা হলে ফিরবে না, যার জন্য সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে।

এনই/এলএ