মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে প্রাণ বাঁচাতে অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছেন ১০ বছর বয়সী নূর কাজল। তার সঙ্গে কথা বলেছেন আল জাজিরার কেটি অারনল্ড।
Advertisement
কাজল জানান, ‘রাখাইনে নিজ গ্রামে আমি খুব খুশি ছিলাম। মাদ্রাসায় পড়তাম আমি। কুরআন শরিফের সূরা মুখস্ত করতে আমার খুব ভাল লাগে এবং পুরোটাই আমি মুখস্ত করে ফেলতে চাই।’
‘পরিবারের সঙ্গেই থাকতাম আমি। সাতজন সদস্য আমাদের পরিবারের। আমাদের বসবাসের বাড়িটি বড় না হলেও সেখানে সুখেই যাচ্ছিল আমার দিন।’
‘সেনাবাহিনী আমাদের ওপর গুলি চালানোর কারণে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি। সেদিন আমি বাবার সঙ্গে ঘরের মধ্যেই ছিলাম। সেনাবাহিনী আমাদের জানালা দিয়ে গুলি করা শুরু করে।’
Advertisement
‘একটি গুলি এসে আমার বাবার মাথায় লাগে। মুহূর্তের মধ্যেই বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়। রক্তে ভেসে যায় ঘরের মেঝে। সজোরে কাঁদতে থাকি আমি। তার পর পালিয়ে বাংলাদেশে আসি।’
‘বাবা মারা যাওয়ার পর পালিয়ে জঙ্গলের মধ্যে যাই। সেখানে গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম। তার পর তিন দিন লেগেছে বাংলাদেশে আসতে। সেটা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল। কারণ আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম; তার ওপর বাবাকে খুব মনে পড়ছিল।’
‘অন্য লোকেরা আমাদের বিনা পয়সায় সীমান্ত পার করে দিয়েছে। এটা আমাদের পরম পাওয়া। আমরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে পার হয়েছি। কিন্তু নৌকায় চড়াটা উপভোগ করতে পারিনি। কারণ বারবার কেবল বাবাকে মনে পড়ছিল।’
‘আমার বাবা কাঠুরে ছিলেন। সবাই তাকে খুব পছন্দ করতো। তিনি আমাকে খুব ভালবাসতেন।’
Advertisement
‘বাংলাদেশে আমি মোটেও সুখী নই। কারণ এখনও আমার বাবাকে খুব করে মনে পড়ছে। অার এই জায়গাটাও খুবই নোংরা। এখানে কোনো টয়লেট কিংবা গোসলের জায়গা নেই।’
‘বিশ্বের মানুষকে আমি বলতে চাই, আমাদের দেশে ফেরত পাঠাতে আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন অথবা অন্য কোনো দেশে আমাদের বসবাসের সুযোগ দিন।
বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রে কাজলের সঙ্গে কথা বলেন আল জাজিরার কেটি অারনল্ড। পরিষ্কারভাবে কাজলের কথাগুলো তুলে ধরার জন্য অর্থ ঠিক রেখে সম্পাদনা করা হয়েছে।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে জীবন বাঁচাতে ২৫ আগস্টের পর চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে নারী এবং শিশুর সংখ্যাই বেশি।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সেখানে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়াকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেছে। সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকার এবং অং সান সু চিকে চাপ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মহল। তারপরও সহিংসতা সমানহারে চলছে। বাংলাদেশে আসছে হাজার হাজার শরণার্থীর ঢল।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান জেইদ রাদ আল হুসেইন রাখাইন প্রদেশের সহিংসতার ঘটনাকে পাঠ্যপুস্তকে পঠিত জাতিগত নিধনের উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সূত্র : আল জাজিরা
কেএ/জেএইচ