দেশজুড়ে

নৌকায় চড়ে আসছেন দেবী

আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর দিগন্তজুড়ে কাশফুল জানান দিচ্ছে দেশভূজা প্রতিমা দেবী দুর্গার আগমনের কথা। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে এখনো সপ্তাহ দেড়েক বাকি, তবে নিজেদের প্রধান ধর্মীয় এ উৎসবকে ঘিরে এখন আনন্দে উদ্বেলিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। শাস্ত্র অনুযায়ী এবছর দেবী দুর্গা আসছেন নৌকায় চড়ে, পাঁচদিন ভক্তদের মাঝে অবস্থান করে ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে প্রস্থান করবেন তিনি।

Advertisement

দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে এখন দিন-রাত প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৃৎশিল্পীরা। পূজার প্রস্তুতির এ শেষ মুহূর্তে এখন যেন দম ফেরার ফুরসত নেই শিল্পীদের। দু-একদিনের মধ্যেই রং-তুলির আচড় আর পোশাক-অলংকার পরিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হবে প্রতিমাগুলোকে। পূজামণ্ডপকে পূর্ণাঙ্গ শৈল্পিক রূপ করে ভক্ত-দর্শনার্থীদের কাছে দৃষ্টিনন্দন করা কারুশিল্পীদেরও এখন ব্যস্ত সময় কাটছে। এ বছর জেলা শহরের পাইকপাড়াস্থ রামঠাকুর আশ্রমেই সবচেয়ে বড় পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

পূজার কাজের ব্যস্ততা নিয়ে শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকার রঘুনাথ জিউর আখড়ায় মৃৎশিল্পী রবি পালের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের।

তিনি বলেন, এবছর আমরা ১৪টি পূজা মণ্ডপের কাজ করছি। গত দুই মাস ধরে আমাদের প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের ব্যস্ততাও ততই বাড়ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে আমাদের।

Advertisement

আরেক মৃৎশিল্পী ঝণ্টু পাল জাগো নিউজকে জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিমাতে রং-তুলির আচড় দেয়া হবে। এরপর পোশাক পরিয়ে বসানো হবে মূল মণ্ডপে। পূজার এ আগ মুহূর্তে নির্ঘুম রাত কাটছে আমাদের।

দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় আনন্দে উদ্বেলিত হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তরা। কয়েকজন ভক্ত জাগো নিউজকে জানান, সারা বিশ্বের সব ধর্মের মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করে দেবী দুর্গার রাতুল চরণে পুষ্পাঞ্জলী প্রদান করবেন তারা। পাশাপাশি একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্যও প্রার্থনা করবেন তারা।

জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) তথ্যানুযায়ী চলতি বছর জেলাজুড়ে ৫১৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় ৭৩টি মণ্ডপ, আশুগঞ্জ উপজেলায় ১৫টি, সরাইল উপজেলায় ৪৮টি, নাসিরনগর উপজেলায় ১৩২টি, নবীনগর উপজেলায় ৯৫টি, বাঞ্ছরামপুর উপজেলায় ৩৮টি, কসবা উপজেলায় ৪২টি ও আখাউড়া উপজেলায় ১৮টি এবং বিজয়নগর উপজেলায় ৫৮টি মণ্ডপ রয়েছে।

এদিকে দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য প্রশাসনসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ।

Advertisement

এ ব্যাপারে জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহসভাপতি অ্যাড. প্রণব কুমার দাস উত্তম জাগো নিউজকে বলেন, হিন্দু ধর্মের উৎসব হলেও দুর্গাপূজা সার্বজনীন। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের নেতৃবৃন্দের বৈঠক হচ্ছে, পূজা মণ্ডপে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সবার সহযোগিতায় এবারও শান্তিপূর্ণভাবেই পূজা সম্পন্ন করতে পারবো।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান।

তিনি জাগো নিউজকে জানান, আমরা পূজামণ্ডপগুলোকে অতিগুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি। প্রতিটি মণ্ডপে আনসার সদস্য এবং জনবহুল মণ্ডপগুলোতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বাকি মণ্ডপগুলোর জন্য প্রতিটি এলাকা ভিত্তিক একটি করে মোবাইল টিম কাজ করবে।

তিনি আরও জানান, উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য আমাদের একটি করে টিম থাকবে। ওই টিম ইউনিয়নগুলোতে থাকা মণ্ডপগুলো তদারকি করবে। এর বাইরে সবগুলো মণ্ডপের জন্য র‌্যাবের তিনটি টিম টহলে থাকবে। এছাড়াও সাদা পোশাকে ডিএসবি এবং ডিবি পুলিশ সার্বক্ষণিক পূজামণ্ডপগুলো তদারকি করবে বলেও জানান জেলা পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠি পূজার মাধ্যমে শুরু হবে শারদীয় দূর্গোৎসব। ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ সার্বজনীন উৎসব।

আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/এমএস