দেশজুড়ে

উচ্ছেদ অভিযান আতঙ্কে পাহাড়ের মানুষ

মৌসুমের প্রথম ভারি বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রামে সৃষ্টি হয়েছে পাহাড় ধসের আশংকা। পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের সরিয়ে দিতে রোববার থেকে শুরু হচ্ছে পাহাড়ের পাদদেশে উচ্ছেদ অভিযান। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে সেখানকার মানুষজন। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার জন্য কয়েক দফায় মাইকিং করা হলেও কেউ সরছে না। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে প্রাণহানির আশংকা থেকেই যাচ্ছে। পাহাড়ে বসবাসকারীদের গত ৮ জুনের মধ্যে সরে যাওয়ার জন্য সময় বেধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ে একটি পরিবারও নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যায়নি। ফলে প্রশাসনের এখন ঘুম হারাম হওয়ার অবস্থা।এদিকে পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরা হলেন এসিল্যান্ড সদর, এসিল্যান্ড আগ্রাবাদ ও এসিল্যান্ড চান্দগাঁও।তবে এসব ঝঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী বেশিরভাগই নিতান্ত ও হত দরিদ্র হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরে অন্য কোথাও গিয়ে তাদের বসবাস করার সুযোগ নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রথম পর্যায়ে ১১টি পাহাড়ে ৬৬৬টি পরিবারকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে অন্যান্য পাহাড়ে অভিযান চলানো হবে বলে জানান তারা।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মতিঝর্ণা, একে খান, প্রবর্তক ও বাটালি পাহাড় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই চারটি পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।গত কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় মাইকিং করে এই চার পাহাড়ের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। বারবার চেষ্টার পরও চট্টগ্রামের ছোট বড় ২৮টি পাহাড়ে প্রায় ১২শ’ পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে এখনো বসবাস করছে।নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ২৮টি পাহাড়ের মধ্যে মতিঝর্ণা, একে খান, প্রবর্তক পাহাড় ও বাটালি পাহাড়কে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’। তাই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে এই চার পাহাড় দিয়েই।এর আগে কয়েক সপ্তাহে বর্ষা শুরুর আগেই শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি সার্কিট হাউসে চট্টগ্রামের সকল সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা করে। সরকারিসহ সকল ব্যক্তিগত পাহাড়ের মালিকদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল।কিন্তু এখন বর্ষা মৌসুম চলে এলেও চট্টগ্রামের কোনো পাহাড় থেকে কোনো পরিবার নিরাপদে সরে যায় নি। ফলে নিয়োগকৃত তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট এখন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে উচ্ছেদ অভিযান চালাবেন।এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে এসব পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ১৫৮ জন বাসিন্দা পাহাড় ধসে মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ১১ জুন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ১২৭ জন, ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখান বাজারের মতিঝর্ণা পাহাড় ধসে ১১ জন, ২০১১ সালের ১ জুলাই বাটালি পাহাড়ের রিটেইনিং দেয়াল ধসে ১৭ জন এবং ২০১২ সালের ১৭ জুন নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনিতে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময় আরও দু’জন পাহাড় ধসে নিহত হয়েছেন।নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ২৮টি পাহাড়ের মালিক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, রেলওয়ে, ওয়াসা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, গণপূর্ত বিভাগ, এ কে খান গ্রুপ, ইস্পাহানি গ্রুপ। বাকীগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়।মতিঝর্ণা এলাকায় বসবাসকারী পোশাক শ্রমিক তোফায়ের উদ্দিন জানান, ‘এখানে আমরা কোন রকমে বসবাস করছি। বর্ষাকাল আসলেই প্রতিনিয়ত মৃত্যু ভয় নিয়ে থাকতে হয় আমাদের। সরকার কিংবা প্রশাসন আমাদেরকে স্থায়ীভাবে পুর্নবাসন করছে না। আমরা এখান থেকে সরে কোথায় যাব। আমরা বেশি টাকা দিয়ে কোথাও ভাড়াবাসায় থাকতে পারব? আমার দাবি আমরা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করব না। সরকার আমাদেরকে স্থায়ীভাবে পুর্নবাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করুক।’জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও লিয়াজোঁ অফিসার রাজিব উল আহসান বলেন, ‘পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও উচ্ছেদ করতে গিয়েও বৃষ্টির কারণে উচ্ছেদ করতে পারেনি। আসছে রোববার আবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।’বসবাসকারীদের স্থায়ী পুর্নবাসন দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘লিখিত আকারে আমরা এরকম কোন দাবি পাইনি। লিখিত কোন দাবি পেলে আমরা উর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করবো। স্থায়ী পুর্নবাসন ব্যাপারটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এখন প্রধান্য দিতে হচ্ছে প্রাণহানি এড়াতে।’সিএল/এলএ

Advertisement