জাতীয়

ছয় ছেলের পাঁচজনকেই জবাই করেছে বৌদ্ধ মগরা

রোহিঙ্গাপাড়ায় আঁধার নামে আগ বেলাতেই। ওপার থেকে নিঃস্ব হয়ে আসা মানুষগুলোর মুখজুড়ে যে আঁধার নেমেছে, তা রাতের অমবশ্যাকেও হার মানায়। রাতের কালো আঁধার আর রোহিঙ্গাদের দুঃখগাঁথা মিলেমিশে একাকার। এখানে সূর্য সেই যে ডুবেছে, তা আর উদয় হয়নি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বৃষ্টি ছিল না বলে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ খানিক কমেছিল। তবে আকাশে মেঘ থাকায় সন্ধ্যার পরেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। আগের রাতের বৃষ্টির রেশ এখনও রয়ে গেছে। ভেজামাটি হাতে নিয়ে চাপ দিলেই পানি নিঙরানো যায়।

অমন মাটির ওপরেই ছোট্ট একটি চুলা করেছেন ৯০ বছরের বৃদ্ধা কালু মিয়ার স্ত্রী। চুলায় আগুনের চেয়ে ধোঁয়ার আধিক্যই বেশি। যতবার জ্বলছে ততবারই নিভছে। বাঁশের চোঙায় ফুঁ দিয়ে আবারও আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে।

চুলার এমন বৈরী অবস্থায় কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের বৃদ্ধ কালু মিয়ার ক্ষুধার জ্বালা যে আরও বাড়ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চুলার পাশে বসেই জীবনের হিসাব কষছেন বৃদ্ধা।

Advertisement

মিয়ানমারের বুথিডং উপজেলার গজংডিয়া গ্রামে থেকে এসে দু’দিন হয় ঘাঁটি করেছেন কুতুপালং ক্যাম্পে। বেঁচে থাকা ছেলে আর ছেলের বউরা কে কোন দিকে গেছে, তার আর খোঁজ জানেন না। মেয়ে হামিদার হাতে ভর করেই এপারে আসা। মেয়ের স্বামীকেও জবাই করে হত্যা করেছে বৌদ্ধ মগরা।

জীবনের শেষ বেলায় পাঁচ ছেলে হারানোর বেদনা যেন আর সইতে পারছেন না কালু মিয়া। চোখের জ্যোতি হারিয়েছেন অনেক আগে। কানেও আর ভালো শোনেন না। সকালে চিড়া ভিজিয়ে খেয়েছিলেন। দিনে আর ভাতের দেখা মেলেনি। কী যেন রান্না হচ্ছে আর তার ঘ্রাণ নিতেই চুলার কাছে হাঁটু মুড়িয়ে বসে আছেন বৃদ্ধ।

মেয়ে হামিদার সহায়তা নিয়ে কথা হয় কালু মিয়ার সঙ্গে। বলেন, ছেলেরা যুবক হওয়ার কারণেই হত্যার শিকার হয়েছেন। বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে জবাই করল বৌদ্ধ মগরা। হত্যার পরেই বাড়ি জ্বালিয়ে দিল। গ্রামে একটি মুদির দোকান ছিল আমাদের। সেটিও পুড়িয়ে দিল।

এএসএস/বিএ

Advertisement