‘বাংলাদেশের স্বীকৃত সিকিউরিটি গার্ড সার্ভিসেস কোম্পানিতে যুক্ত হতে পারে জঙ্গিরা। সেখানেই নিতে পারে অস্ত্র পরিচালনাসহ নানা প্রশিক্ষণ।’ সম্প্রতি এমন তথ্য এসেছে পুলিশের বিশেষ শাখার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ- এসবি) গোয়েন্দাদের কাছে। তথ্য পাওয়ার পরপরই বাংলাদেশের সিকিউরিটি গার্ড সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠানে নজরদারি জোরদার করেছে গোয়েন্দারা।
Advertisement
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরি করছে। নিরাপত্তাকর্মীর ছদ্মবেশে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসবির এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, একজন সিকিউরিটি গার্ড (নিরাপত্তারক্ষী) গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সুযোগ পান। নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে থাকা ‘ধর্মান্ধ জঙ্গিরা’ খুব সহজেই নাশকতা চালাতে পারে।
তিনি জানান, গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি হাতে পাওয়ার পর বেসরকারি সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহকারীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা ধরে নিয়োগপ্রাপ্তদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।
Advertisement
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সিকিউরিটি গার্ডের বেশে জঙ্গিরা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে।’
প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়া হয় যে, যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে এখন থেকেই সিকিউরিটি গার্ড সার্ভিসেস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বৃদ্ধি, প্রশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণরত গার্ডদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ এবং প্রতিটি গার্ডের তথ্য গোয়েন্দাদের তালিকাভুক্ত করতে হবে। যারা অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তাদের ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ড বা অপরাধের ইতিহাস (যদি থাকে) যাচাই-বাছাই করতে হবে।
গোয়েন্দারা জানান, এর আগেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধৃত ও নিহত জঙ্গিদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে দেখা গেছে। এছাড়া গার্মেন্ট শ্রমিক, চালক, হকার, এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবেও তাদের কাজ করতে দেখা গেছে। তবে সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিদের প্রবেশের বিষয়টি এবারই প্রথম। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলেও তারা জানান।
এদিকে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রায় পাঁচ হাজার জঙ্গির তালিকা তৈরি করে পুলিশের সব রেঞ্জের প্রধানদের (উপ-মহাপরিদর্শক-ডিআইজি) ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এরপর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন এবং জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পান।
Advertisement
সর্বশেষ জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায় মিরপুরের মাজার রোডের বাঁধন সড়কের বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলা বিশিষ্ট ‘কমলপ্রভা’ নামের বাড়িতে। ওই বাড়িতে দুর্ধর্ষ ‘জঙ্গি আব্দুল্লাহ’ বস্থান করছে- এমন তথ্য পেয়ে ৪ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা থেকে বাড়িটি ঘিরে ফেলেন র্যা ব সদস্যরা। প্রথমে তাদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়া হয় কিন্তু সে সুযোগ না নিয়ে আত্মঘাতী হয় জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় দুই স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান এবং দুই কর্মচারীসহ জঙ্গি আব্দুল্লাহ জীবন্ত দগ্ধ হয়। তাদের মাথার খুলি ও কয়েকটি হাড় শুধু অবশিষ্ট থাকে।
নিরাপত্তাকর্মী বেশে জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে- এমন গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠান এলিট ফোর্স’র পরিচালক শেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘দেশের ৬০০টি ভিন্ন ভিন্ন অফিস, শপিংমল, ব্যাংক, আবাসিক ভবন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এলিট ফোর্সের ১৮ হাজার সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ আছে। এর মধ্যে ৫০০ জনকে অস্ত্র পরিচালনার ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে।
‘এসবি থেকে আমাদের কাছে সিকিউরিটি গার্ডদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে তাদের তথ্য সরবরাহ করেছি’- যোগ করেন তিনি।
‘কান্ট্রি সিকিউরিটি সার্ভিসেস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন খান বলেন, ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে এসবি থেকে ফোনে কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমাদের পক্ষ থেকে কর্মরত সব গার্ডের তথ্য দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি সার্ভিসেস কোম্পানি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ্ আলম সরকার বলেন, বাংলাদেশে ছোট-বড় ৭০০টি এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৫০টি আমাদের তালিকাভুক্ত।
‘সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সব প্রতিষ্ঠানকে অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি’ বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠান ‘জিফোরএস’র বাংলাদেশ কার্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, সারাদেশে তাদের ১৩ হাজার প্রশিক্ষিত গার্ড রয়েছে। তাদের কারোরই অপরাধে জড়ানোর রেকর্ড নেই। এরপরও আমরা প্রতিটি গার্ডের ওপর কঠোর নজরদারি রাখি। তাদের অপরাধে জড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম।
বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি- মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) সহেলী ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সতর্ক। জঙ্গি ছাড়াও রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশি কোটায় সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রশিক্ষণ না নিতে পারে সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
‘জঙ্গিদের সব ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বদ্ধপরিকর’ বলেও জানান তিনি।
এআর/এমএআর/জেআইএম