সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত রায় সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিনয়ের সঙ্গে প্রধান বিচারপতিকে বলি, কথা কম বলা ভালো। অনেক পোড় খাওয়া লোক আমরা এখানে আছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ কত সুন্দরভাবে চলছে। এ রায় দিয়ে বিএনপিকে উৎফুল্ল করার চেষ্টা করা হয়েছে।
Advertisement
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণ বাতিলে আনীত সাধারণ আলোচনার প্রস্তাবে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বুধবার জাতীয় সংসদে এ সাধারণ আলোচনার প্রস্তাব আনেন জাসদের একাংশের সভাপতি চট্টগ্রাম-৮ আসনের এমপি মঈন উদ্দীন খান বাদল।
তোফায়েল বলেন, প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের পরেও সেখানে কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিটিতে দু’জন সামরিক অফিসার ছিলেন। সেই কোর্টের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে তুলনা করলেন! আমার অবাক লাগে, সংসদের গ্রন্থাগারে দেখলাম ১৯৫৩ সালে বেসিক প্রিন্সিপাল কমিটি গঠন হয়, সেই কমিটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিটি প্রস্তাব করে। ’৫৬ এর সংবিধানেও ছিল-সংসদ বিচারপতিদের অপসারণ করবে না। সেই আইয়ুব খানের আমলের কথা বলছেন প্রধান বিচারপতি!
ষোড়শ সংশোধনীতে থাকা বিচারপতি অপসারণের প্রক্রিয়া তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই মারা গেল। আমরা চাইলাম সবার মর্যাদা রাখতে।
Advertisement
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে সংসদ কর্তৃক অপসারণের প্রস্তাব অনেক বেশি যৌক্তিক ও বিশ্ব প্রেক্ষাপটে গ্রহণযোগ্য। আইনমন্ত্রীকে বলবো-এটাকে রিভিউতে পাঠানোর জন্য।
তোফায়েল বলেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কেউ ছোট করে কথা বললে সমগ্র জাতিকেই ছোট করা হয়। সংসদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্বাভাবিকভাবেই আমরা দুঃখিত হই।
তিনি বলেন, আদালতের বন্ধু অ্যামিকাস কিউরি তারা কারা। তারা আওয়ামী লীগ বিরোধী। ড. কামাল আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে নিজে দল করেছেন। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আওয়ামী লীগের কেউ নন। রোকউদ্দিন মাহমুদ হাইকোর্টে এক, আপিল বিভাগের আরেক বলেছেন। এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা কামাল, হাসান আরিফ, টিএইচ খান-এরা কারা? একমাত্র আজমালুল হোসেন কিউসি সংসদের পক্ষে কথা বলেছেন। আর কোনো লোক পাওয়া গেল না? এসব লোক দিয়ে সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংসদে আলোচনার জন্য আদালত অবমাননার মামলা করার কোনো বিধান নেই। তাই এমপিরা স্বাধীনভাবে সংসদের অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে পারেন।
Advertisement
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায় গত ১ আগাস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।
ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বাংলাদেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
পর্যবেক্ষণে ‘বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে রায়ে ক্ষুব্ধ সরকারি দলের নেতারা কড়া সমালোচনা করছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়া হয়। যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।
এইচএস/এএইচ/এমএস