জাতীয়

‘১২ দেশে ১২শ কোটি টাকা পাচার করেছে জিয়া পরিবার’

শুধু দুবাই নয়, অন্তত ১২ দেশে জিয়া পরিবারের সম্পদ আছে, যার প্রাক্কলিত মূল্য এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ইনটেলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিআইএন) সম্প্রতি এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে সংসদে দাবি করেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। এ প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

বুধবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে গিয়ে এ তথ্য জানান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতাদের দ্বারা বিশ্বের ১২টি দেশে পাচার হওয়া এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ফেরত আনা হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিআইএন কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য সরকারের কাছেও আছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিললে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে ফখরুল ইমাম বলেন, জিআইএনের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া থেকে আরম্ভ করে তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে যে অর্থপাচার করেছে তার একটি তালিকা আছে। সে তালিকার বিষয়টি উনি (প্রধানমন্ত্রী) যদি জানেন তবে উত্তর দেবেন। আর না জানলে আমি দু-এক লাইন এখানে পড়ে শোনাতে পারি।

এ সময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা পড়ে শোনানোর জন্য সমস্বরে বলতে থাকেন। এরপর ফখরুল ইমাম বলেন, ‘জিআইএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু দুবাই নয়, সৌদি আরবে আহমদ আল আসাদের নামে আল আরাবা শপিংমলটির মালিকানা বেগম জিয়ার নামে। কাতারে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ইকরার মালিক বাংলাদেশি এবং এটার মালিকও উনি এবং আরাফাত রহমানের নামে এর পুরা মালিকানা দেখা যায়।

Advertisement

এছাড়া তুহিন উনার ভাস্তে (ভাতিজা)। তার নামে তিনটি বাড়ি আছে কানাডায়। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ সিঙ্গাপুরের হোটেল মেরেনডি’র ১৩ হাজার শেয়ারের মালিক। ব্যারিস্টার আমিনুল হকের নামে লন্ডনে স্ট্যান্ডফোর্ড ও অলগেটিতে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদের নামেও অ্যাপার্টমেন্ট আছে। মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর নামে দুবাইয়ে আছে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। সিঙ্গাপুরে মির্জা আব্বাস ও তার সন্তানদের নামে কিনেছেন দুটি অ্যাপার্টমেন্ট। বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খানের নামে সিঙ্গাপুরে রয়েছে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তথ্যগুলো যখন বের হয়েছে তখন নিশ্চয় আমাদের কাছে আছে এবং এটা নিয়ে তদন্ত চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এই তদন্তের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, এ কথা তো সবাই জানেন, আসলে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মানুষ হত্যা করে, খুন করে। পরবর্তীতে আমরা ক্ষমতায় আসার পর আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা থেকে শুরু করে একদিকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করে অপরদিকে ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি ও অর্থপাচার এ ধরনের বহু অভিযোগ তো জনগণ সব সময় করেছে এবং এটা সবাই জানে। এজন্য খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের টাকা ফেরত আমরা এনেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে পাচার করা টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে আমাদের সরকারের আমলে।

তিনি বলেন, আমি বিষয়টি সংসদে তোলার জন্য সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ আমরা যদি তুলে ধরি বা সরকার থেকে তুলে ধরলেই দেশে বহু লোক আছে মায়াকান্না করবে আর বলবে আমরা নাকি হিংসাত্মক হয়ে পড়ি। যেহেতু এটা অপজিশন থেকে আসছে মানুষ এটা উপলব্ধি করতে পারবে জনগণের সম্পদ কীভাবে লুট করেছে। এজন্য বাংলাদেশ পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু দেশের উন্নতি করতে পারেনি, বরং আর্থসামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটেছিল বিএনপি-জামায়াত আমলে।

Advertisement

তিনি বলেন, জনগণের সম্পদ যারা লুটে নিয়েছে নিশ্চয় তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত করে যখনই সঠিক তথ্য পাব কোথায় কীভাবে রয়েছে নিশ্চয় আমরা ফেরত আনার পদক্ষেপ নেব। ইতোমধ্যে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তদন্ত চলার স্বার্থে হয়তো সব আমি বলতে পারলাম না।

এইচএস/এএইচ/ওআর/আরআইপি