‘আমার ভুল চিকিৎসা নয়, রোগীর হায়াত ছিল না তাই মারা গেছে’ এ কথাটি বলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রাধিকা বাজারস্থ ‘ভূঁইয়া মেডিকেল হল’র ভুয়া চিকিৎসক মো. সাদ্দাম ভূঁইয়া। সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে একজন গ্রাম্য চিকিৎসক বলে দাবি করলেও তিনি এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সব রোগের অপচিকিৎসা করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার এই অপচিকিৎসায় গত ১২ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার উড়শিউড়া গ্রামের এলাই মিয়ার স্ত্রী আয়েশা বেগমের মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। শুধু মো. সাদ্দাম ভূঁইয়া নন রাধিকা বাজারের আরেক ভুয়া চিকিৎসক মো. নাজমুল হোসেনের অপচিকিৎসায় গত ২৭ মে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে তাহমিনা আক্তার নামে এক প্রসূতি নারীর মৃত্যু হয়। এছাড়া এসব ভুয়া চিকিৎসকদের অপচিকিৎসায় বেশ কয়েকজন মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাধিকা বাজারের ভূঁইয়া মেডিকেল হল, জীবন ফার্মেসি, রেনেসা মেডিকেল হলসহ বেশ কয়েকটি ফার্মেসিতে ওষুধ ব্যবসার অন্তরালে এক শ্রেণির ভুয়া চিকিৎসক বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারের ভুয়া সনদপত্র দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকে প্রাইমারির গণ্ডি পেরুতে না পারলেও নামের সাথে ডা. সংযুক্ত করে দিয়েছেন। আবার অনেকেই নামের আগে-পরে বিভিন্ন ডিগ্রি লাগিয়েছেন। তবে এসব ভুয়া চিকিৎসকদের ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত তদারকি না থাকায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন তারা।সরেজমিনে রাধিকা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি ফার্মেসির ভুয়া চিকিৎসক সাংবাদিকদের দেখে ভয়ে পালিয়ে যান। এমনকি তাদের নামের সাইনবোর্ডও সরিয়ে নেন। তবে ভূঁইয়া মেডিকেল হলের ভুয়া চিকিৎসক মো. সাদ্দাম ভূঁইয়াকে পাওয়া গেলেও তার অপচিকিৎসায় এক প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমার ভুল চিকিৎসায় নয়, রোগীর হায়াত ছিল না তাই মারা গেছে’। তিনি আরো বলেন, ‘কোন ধরনের অপচিকিৎসা নয় নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আমি প্রাথমিক চিকিৎসা করে থাকি’। তার কাছে এ কাজের জন্য লাইসেন্স বা সনদপত্র রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।তবে ভুক্তভোগীরা জানান, রাধিকা বাজারের অধিকাংশ ফার্মেসির ভুয়া চিকিৎসকদের কোন ধরনের লাইসেন্স বা সনদপত্র নেই। কিন্তু তারপরও দিনের পর দিন তারা সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অপচিকিৎসা করে যাচ্ছেন। তাদের এই অপচিকিৎসার মাশুল হিসেবে ইতিমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।এদিকে এসব ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১ জুন সিভিল সার্জনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।এ ব্যাপারে জেলার সিভিল সার্জন ডা. হাসিনা আক্তার চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কারণে কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ভুয়া চিকিৎসকদের বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে ভুয়া চিকিৎসকদের অপতৎপরতা রোধে সাধারণ মানুষকে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।আজিজুল আলম সঞ্চয়/এসএস/এমএস
Advertisement