রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার জুরাছড়ি উপজেলা এখন ভিক্ষুকমুক্ত। সরকারি সহায়তায় পুনর্বাসন করা হচ্ছে ভিক্ষুকদের। তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিতরণ করা হয়েছে গবাদি পশু ও সেলাই মেশিন।
Advertisement
ঘরবাড়ি করতে সহায়তা দেয়া হয়েছে নগদ অর্থসহ ঢেউটিন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদ ইকবাল চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে জুরাছড়ি উপজেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করেছেন, জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান। ওই সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে পুনর্বাসিত কয়েকজন স্থানীয় ভিক্ষুকের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। এ সময়য় তারা বলেন, তারা ভিক্ষা করতে চান না। অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে এ পেশায় আসতে হয়েছিল তাদের। এখন সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন। বাঁচতে চান সমাজের সবার মতো আত্ম-সম্মান নিয়ে। উপজেলার মৈদং ইউনিয়নের শেফালীকা চাকমা (৪২) শারীরিক প্রতিবন্ধী।
Advertisement
তিনি জানান, তার বাম পা নেই। থাকার জন্য নেই বসতবাড়ি ভিটেমাটি। অনেক আগে স্বামী মারা গেছেন। দুই সন্তান নিয়ে থাকেন মৈদং ইউনিয়নের শীলছড়িবাজারের পাশে ভাঙা ঘরে। জীবন বাঁচাতে দু’মুঠো ভাতের জন্য ভিক্ষা করতেন সকাল-সন্ধ্যা। তিনি সরকারি সহায়তা পেয়ে এখন দেখছেন সমাজে অন্যদের মতো আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন।
কথা হয় উপজেলার বনযোগীছড়া ইউনিয়নের আনন্দপাড়ার বামুণ চিত্তিময় চাকমার সঙ্গে। তিনি পড়ালেখায় মাধ্যমিক গণ্ডিও পার করেছেন। পারিবারিক আর্থিক সংকটে কলেজের মুখ দেখেননি। পরে অভাবে কারণে তাকে বেছে নিতে হয়েছে ভিক্ষুক জীবন। একই কারণে এমনি এই অভিশপ্ত জীবন বেছে নিতে নিয়েছে একই ইউনিয়নের দুর্গামণি চাকমা, মায়া দেবী চাকমা, জুরাছড়ি সদর ইউনিয়নের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কমল চন্দ্র চাকমা ও রেনুকা চাকমাকে।
তাদের সবার ভাষ্য, ভিক্ষা ছেড়ে বাঁচতে চান আত্মসম্মান নিয়ে। এ জন্য সরকারি সহায়তা পেয়ে তাদের মনে এখন নতুন আশার আলো জেগেছে। এতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করবেন দুঃখ ঘোচাটে নিজেরার আয়-উপার্জনে।
যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, ভিক্ষা করে বাঁচা অসম্মানজনক ও অভিশপ্ত জীবন। এই পেশায় পার্বত্য এলাকায় উপজাতির সংখ্যা খুব কম। তারা অতি দারিদ্র্যের কারণে এ পেশা গ্রহণ করে। সরকারি সহায়তায় জুরাছড়ি উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানকার ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে ছয়জন ভিক্ষুকের মধ্যে সেলাই মেশিন, গাভি, ছাগল, শুকুরসহ ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে।
Advertisement
উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে দোকান ঘর বরাদ্দসহ ভবিষ্যতে সুদমুক্ত ঋণ, খাদ্য সহায়তা হিসেবে ভিজিডি, ভিজিএফ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া জুরাছড়িতে ভিক্ষাবৃত্তি দূর করে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উপজেলায় কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ১ দিনের বেতন বাবদ ১ লাখ ৮৪ টাকা দিয়েছেন বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন।
সুশীল চাকমা/এএম/আরআইপি