জাতীয়

নজরদারিতে আসছেন প্যাথলজি-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কনসালটেন্টরা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কঠোর নজরদারিতে আসছে প্রাইভেট প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রিপোর্ট প্রদানকারী কনসালটেন্টরা। সামগ্রিক চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন ও ডাটাবেজ তৈরির লক্ষ্যে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কনসালটেন্টদের সঠিক তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধিদফতর।এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম সম্প্রতি সকল প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত পাঠানোর নিদের্শ দিয়েছেন।চিঠির নিদের্শনা অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের রিপোর্ট প্রদানকারী বিভিন্ন কনসালটেন্ট (প্যাথলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি ও রেডিওলজি ইমেজিং) এর নাম, পদবী, কর্মস্থল (সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে কোড নম্বর) সন্মতিপত্র, সনদপত্র, হালনাগাদ বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন ও মোবাইল নম্বর পাঠাতে বলা হয়েছে। এছাড়া নিদের্শনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুসারে বর্তমানে দেশে অনুমোদিত ৯ হাজারেরও বেশি প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি রয়েছে। তন্মধ্যে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি রয়েছে। ধারণা করা হয় অবৈধভাবে আরো সমসংখ্যক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠান তিন দশকের পুরনো মেডিকেল প্রাকটিস অব প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিনেন্স ১৯৮২ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।অভিযোগ রয়েছে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওপর স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ নেই। বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত মনিটরিং ও সুপারভিশনের জন্য অধিদফতরের পর্যাপ্ত জনবল নেই। জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে এক শ্রেণির অসৎ কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ইচ্ছে মাফিক অর্থ আদায় করছে।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বিভিন্ন প্যাথলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি ও রেডিওলজি ইমেজিং কনসালটেন্টদের নাম শোভা পেলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে তারা কোনদিনও যান না। কেউ কেউ অনিয়মিতভাবে গেলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টে আগাম স্বাক্ষর করে রাখেন। অদক্ষ ল্যাব টেকনিশিয়ানরা রিপোর্ট তৈরি করে কনসালটেন্টদের প্যাডে রিপোর্ট দিয়ে থাকে। যা বিভিন্ন সময় রাজধানীসহ সারাদেশে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানকালে এ ধরনের বহু আগাম স্বাক্ষর সম্বলিত প্যাড উদ্ধার করার প্রমাণ রয়েছে।স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক চিকিৎসা শিক্ষা (যিনি দীর্ঘদিন হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালকও ছিলেন) অধ্যাপক ডা. আবদুল হান্নান জাগো নিউজকে বলেন, প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে প্রাইভেট মেডিকেল সার্ভিস অ্যাক্ট-২০১৪ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। নতুন এ আইনটি কার্যকর হলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবৈধ কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, দেশের অধিকাংশ প্রাইভেট প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দীর্ঘদিন যাবত নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। দক্ষ জনবল ও মান্ধাতা আমলের পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ভুল রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে।এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দ্রুত আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব।এমইউ/আরএস/আরআই

Advertisement