সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের নিন্দা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে পুরো ব্যাপারটাকেই দেখা হচ্ছে একেবারে ভিন্নভাবে। খবর বিবিসির।
Advertisement
ইয়াঙ্গুনে রাস্তার লোকজনের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যে কী ঘটছে তা নিয়ে কথা বললে দেখা যায় তারা রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহারই করে না।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের মিয়ানমারে বর্ণনা করা হয় বাঙালি বলে। এ দেশে মূলধারায় রোহিঙ্গাদের কিভাবে দেখা হয় এটা তারই একটা আভাস।
এই দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা হচ্ছে বিদেশি যারা বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী। এদের ভাষা ও সংস্কৃতি আলাদা।আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাখাইন প্রদেশের সহিংসতাকে দেখা হচ্ছে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা হিসেবে, কিন্তু মিয়ানমারে এটি দেখা হয় জাতীয় সার্বভৌমত্ব-সংক্রান্ত বিষয় হিসেবে। উত্তর রাখাইনে যে সেনা অভিযান চলছে তার প্রতি সমর্থনও এখানে ব্যাপক।
Advertisement
এখানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। যে রোহিঙ্গা মুসলিমরা সহিংসতার হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের দুর্দশার খবর এখানে সংবাদমাধ্যমে যথেষ্ট প্রচারও পায় না। রাখাইন এলাকায় দেশি বা বিদেশি সাংবাদিকের প্রবেশের ব্যাপারেও কঠোর কড়াকড়ি রয়েছে।
‘সন্ত্রাসী আক্রমণ’ এবং সহিংসতার কারণে রোহিঙ্গা নয় এমন অনেক মানুষই বাড়িঘর হারিয়েছে। সেখানকার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ের ওপরই জোর দেয়া হয়।
বিভিন্ন শহরে আরসা চরমপন্থী বাঙালি সন্ত্রাসীরা আক্রমণ বা বড় আক্রমণের পরিকল্পনা করছে এমন খবরও এখানকার পত্রিকায় এসেছে।
এসব খবরে বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনী নয় বরং জঙ্গী সংগঠনগুলোই গ্রাম পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছে এ কথার কোন উল্লেখ এসব রিপোর্টে নেই।
Advertisement
মিয়ানমারের সরকারি ইনফরমেশন কমিটি সন্ত্রাসী শব্দটির ব্যবহার নিশ্চিত করে থাকে। এই নির্দেশ যাতে মেনে চলা হয়, এ জন্য কমিটি সংবাদমাধ্যমের প্রতি হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম ভুয়া খবর ও ছবি সমাজে বৈরিতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদী গ্রুপগুলো এমন ধারণা প্রচার করছে যে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা একটি হুমকি। কারণ তারা চার স্ত্রী এবং বহু সন্তান নিতে পারে।
রাখাইনে অনেকেই মনে করেন, জনসংখ্যা বাড়লে তারা একদিন তাদের সব জমি নিয়ে নেবে। সাধারণ লোকজনের কথার মধ্যেও এই শত্রুতার অনুভুতি স্পষ্ট বোঝা যায়।
ত্রিশ বছর বয়সী স্থানীয় এক নারীকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তারা লেখাপড়া শেখে না, তাদের কোন চাকরিও নেই। তাদের প্রচুর বাচ্চাকাচ্চা। আপনার প্রতিবেশীর যদি অনেক বাচ্চা থাকে এবং সব সময় চেঁচামেচি করতে থাকে আপনি কি তা পছন্দ করবেন?
অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করছেন এমন এক নারী বলেন, ওরা লোক ভালো নয়। আমি ওদের পছন্দ করি না। তবে হ্যাঁ, এক হাতে তালি বাজে না। অর্থাৎ এই সংঘাতে দু’পক্ষকেই দায়ী করেছেন তিনি।
অবশ্য এমনও অনেকে আছেন যারা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি সহানুভুতিশীল। তবে তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে পারেন না। একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার এ সম্পর্কে বলেন, আমার মনে হয় অনেক বাঙালি মুসলিম মারা গেছে। আমার ধারণা সরকারি বাহিনী তাদের অনেককে হত্যা করেছে, কারণ কিছু এলাকা আছে যেগুলো দুর্গম বা বিচ্ছিন্ন। এ বিষয়ে জাতিসংঘের কিছু করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
টিটিএন/জেআইএম