রাখাইনের নিলাম্বর পাড়ার স্বামীহারা নুরজাহান (৪৫) ৩ মেয়ে ও ২ নাতি নিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন টেকনাফে। সেনারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর প্রথমদিকে তার হাটুতে গুলি লাগে। হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, সেনারা বৃষ্টির মতো গুলি করতে করতে গ্রামে ঢুকে। গুলিতে তার হাটুর মাংসপিন্ড উড়ে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি একটি কচুক্ষেতে আশ্রয় নেন। মেয়েরা পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়।
Advertisement
পরে সেনাবাহিনী চলে গেলে মেয়েদের খুঁজে বের করে বাংলাদেশের পথে রওয়ানা হন। সেই ক্ষত নিয়ে খুঁড়িয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ১৫দিন পথ অতিক্রম করে তিনি টেকনাফে পৌঁছেন। পথিমধ্যে একবার সেনা টহল দলের হাতে ধরা পড়েছিলেন তবে নারী দেখে ছেড়ে দেন বলে জানান তিনি।
নুরজাহান জানান, তার পায়ের ক্ষত থেকে গন্ধ বেরুচ্ছে যা তিনি নিজেও সহ্য করতে পারছেন না। কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যাবে, কোথায় গিয়ে তিনি আশ্রয় নেবেন তাও জানেন না তিনি। তার বিবাহিত স্বামীহারা এক মেয়ে মরিয়ম ও অবিবাহিত কুলসুমা, সুফিয়াসহ ৩ মেয়ে ও ২ নাতিকে নিয়ে তিনি সোমবার শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। পালানোর পথে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কেটেছে তাদের। গত ৪ দিন ভাতের দেখা পাননি বলে জানান নুরজাহান।
৯৫ জন দালালকে সাজা : টেকনাফে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সহায়তার দায়ে ৯৫ জন দালালকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা প্রদান করা হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৫ জন দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে সোমবার পুলিশ ও কোস্টগার্ড ৫ দালালকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করেছে। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, চৌধুরী পাড়ার মৃত ইউনুছের ছেলে মো. নবী হোছেন (২৩), সাবরাং কোনাপাড়ার রশিদের ছেলে মো. আয়ুব (২১), কক্সবাজার পেকুয়ার মগনামার মৃত ছৈয়দুলের ছেলে সাদেক (২২), সেন্টমার্টিন পূর্ব বাজার পাড়ার নুরুল হকের ছেলে মো. ছালাহ উদ্দিন (৩০) ও আলীর ছেলে কবির মাঝি (২৮)।
Advertisement
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সোমবার পৃথক মামলায় ৫ দালালকে ৬ মাসের সাজা প্রদান করেন। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিকী জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত গত ৩১ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৫ জন দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নতুন করে জ্বলছে রাখাইন, ৮ গ্রামে আগুন : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম বসতিতে প্রতিদিন নতুন করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমার সেনারা প্রতি দিনই মুসলমানদের বসতিতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। এসময় গরু মহিষ নিয়ে যাচ্ছে মগেরা। মানুষ চারদিকে ছুটছে। সেনাদের হেলিকপ্টার আকাশে চক্কর দিচ্ছে। টেকনাফ সীমান্ত থেকে পরিষ্কারভাবে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বলতে দেখা গেছে। যা সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষ জ্বলন্ত গ্রামগুলো দেখতে সীমান্তে ভিড় জমিয়েছে। মংডুর বাঘঘোনা এলাকার রশিদ আহমদ জানান, বর্মী সেনারা নতুন করে বাঘঘোনা, ছেরাপাড়া, মোল্লাপাড়া, খুইন্নার পাড়া, গজ্জনদিয়া, বডডেইল পাড়া, খেয়ারী পাড়া, নাইনসংপাড়া গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।
এমএএস/এমএস