কাঁদছে রোহিঙ্গা। কাঁদছে বিশ্ব মানবতা। তাদের কান্নায় কক্সবাজারের আকাশ-বাতাস ক্রমশই ভারী হয়ে উঠেছে। সব হারিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই মানুষেরা। এপারের মানুষরাও শরিক হয়েছেন তাদের কান্নায়। শরিক হয়েছেন সাংবাদিকরাও।
Advertisement
চোখের অশ্রু ঝরছে রোহিঙ্গাদের দুঃখের সারথী সাংবাদিকদের। বিবেকের দায়ে সাংবাদিকরা এই অসহায় মানুষদের অতি আপন বনে গেছেন। রোহিঙ্গারা কোথা থেকে এসেছে, কী তাদের ধর্ম, কী তাদের জাতীয়তা, কিছুই যেন গুরুত্ব পাচ্ছে না। গুরুত্ব পাচ্ছে ‘মানুষ’ নামের পরিচয় আর ‘মানবিকতা’।
পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই তাদের। দেশ নেই, রাজা নেই। সবই কেড়ে নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। ভূমিপুত্র রোহিঙ্গাদের ভূমিহীন করে তাড়িয়েছে এপারে। যারা আসেনি, তারা জবাই হয়েছেন। নতুবা পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এক গণমাধ্যমকর্মী
Advertisement
প্রাণ ভয়ে পালিয়ে এসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে বাংলাদেশ সীমানায়। অনাহারে-অর্ধাহারে খোলা আকাশের নিচে এসব রোহিঙ্গা যেন সভ্যতার অভিশপ্ত কীটে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সড়কের দু’ধার অসহায় মানুষের চোখের জলে আজ সিক্ত।
রিফিউজি, উদ্বাস্তু, বাস্তুহারা, শরণার্থী কত উপাধিই না মিলছে রোহিঙ্গাদের। শুধু মিলছে না মানবাধিকার। ঘর নেই, বসন নেই। খাবারের জন্য সর্বত্রই হাহাকার।
আর এসব দুঃখকথা দেখে, শুনে তুলে ধরতে সাংবাদিকরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দিনরাত। রোদ, বৃষ্টি, কাদা মাড়িয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে যেন সাংবাদিকরাও আজ সদস্য। রোহিঙ্গাদের কষ্টকথা শুনে সাংবাদিকরা ভুলে যাচ্ছেন নিজেদের নাওয়া-খাওয়ার কথাও। দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের ঠিকানা এখন উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা পাড়া।
রোহিঙ্গাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এক গণমাধ্যমকর্মী
Advertisement
কথা হয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের ফটোগ্রাফার শেখ মেহেদী মোর্শের সঙ্গে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। বিবেকের তাড়না থেকেই কাজ করছি। নাইক্ষ্যাংছড়ির দুর্গম সীমানায় রোহিঙ্গারা যেভাবে বেঁচে আছে, তা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। চরম পাশবিকতা চলছে বলেই তারা মিয়ানমার থেকে এসে এভাবে আশ্রয় নিয়েছেন।
দৈনিক যুগান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক আশিক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘চারদিন হয় রোহিঙ্গাদের নিউজ করতে এসেছি। এত কান্না আর দুঃখ দেখে মন বিষিয়ে উঠছে। যেখানেই যাই অসহায় মানুষের ছলছল চোখ চোখে পড়ে। রাষ্ট্রহীন মানুষগুলোর দুঃখকথা শুনে নিজেদের দুঃখও ভুলে যাচ্ছি।
এএসএস/জেডএ/পিআর