স্রোতের মতো আসছে রোহিঙ্গা। নিজ দেশের খোদ সরকারের রোষানলে পড়ে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ সীমানায় কড়া নিরাপত্তা বসিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের অনুপ্রবেশ।
Advertisement
রোববার বিকেলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এসেছে। একই ধারায় সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালেও অসংখ্য রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। এ ছাড়া সীমানার নো-ম্যান্সল্যান্ডের মধ্যে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা এ পারে আসার অপেক্ষায়।
উখিয়ার রাজা পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যানে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, পরিস্থিতি এখন বেসামাল। তিল ধারণের ঠাঁই নেই কুতুপালং আর বালুখালীতে। সড়কের দু’ধারে মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। জায়গাও মিলছে না তাদের। বৃষ্টি আর কাদার মধ্যেই বসে বা দাঁড়িয়ে রাত কাটছে তাদের।
তার ধারণা, গত ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত আড়াই লাখের ওপর রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আজও হাজার হাজার রোহিঙ্গা আসছে বলে জানান তিনি।
Advertisement
এদিকে বাংলাদেশে এ যাবৎ ৭ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আজ (সোমবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজ আইডিতে তিনি লেখেন, ‘নতুন করে ৩ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে এবার।’ (আগে থেকেই বাংলাদেশে ৪ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছেন)।
কক্সবাজার জেলার উখিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মালেক সওদাগর বলেন, আগে কখনও এমন পরিস্থিতি দেখিনি। টানা ১৫ দিন ধরে রোহিঙ্গারা আসছে। দীর্ঘ সময় পথ পাড়ি দিয়ে এসে তাদের অবস্থা একেবারেই নাজেহাল।
জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যংয়ের উনচিপ্রাং, শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছড়ার সৈকত এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির আছারবনিয়া, চাকঢালা, বাইশারি, আমতলি, ঘুমধুম তুমব্রু এলাকা দিয়ে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নারী-শিশু এবং বৃদ্ধরাও রয়েছেন।
নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা চরম বিপাকে পড়েছে। আগে আসা রোহিঙ্গরা জায়গা দখলে নেয়ায় নতুনদের অনেকেই এখন আশ্রয়হীন অবস্থায় রয়েছেন। স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ মা-বাবা নিয়ে সড়কের পাশেই বসে দিন-রাত কাটাচ্ছেন। খাবারও জুটছে না তাদের।
Advertisement
সোমবার সকালে কুতুপালংয়ে এসে রাস্তার পাশে বসেছেন মোয়াজিন হোসেন নামের এক রোহিঙ্গা। সঙ্গে মা, স্ত্রী এবং তিন সন্তানও রয়েছে।
মিয়ানমারে তুমব্রু রাইট গ্রামে তিনদিন না খেয়ে অবস্থান করেছিলেন। রাতে সীমানা পার হয়ে নো-ম্যান্সল্যান্ডে চলে আসেন। ভোরে এসে পৌঁছান কুতুপালংয়ে।
তিনি বলেন, গ্রামের অনেকেই এখানে এসেছে বলে জানতে পেরেছি। জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছি, শুকরিয়া। জায়গা হবেই। খাবারও মিলবে।
মিয়ানমারের কুসিডং উপজেলা থেকে এসেছেন রাহেনা। বৌদ্ধ মগরা স্বামীকে হত্যা করেছে ঈদের দু’দিন পর। পাশেই আরেক বৌদ্ধ বাড়তি পালিয়ে ছিলেন চারদিন। শনিবার রাতে রওনা দিয়ে রোববার বিকেলে বালুখালীতে এসে পৌঁছান। দুই সন্তান নিয়ে রাস্তার পাশে অপেক্ষা করছেন। এপারে এসে এক টুকরো পলিথিন কাগজও সাহায্য পেয়েছেন। এখন জায়গা খুঁজছেন সামান্য টঙঘর বানাতে। রাহেনার মতো অসংখ্য অসহায় রোহিঙ্গা ছুটে আসছে বাংলাদেশে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হামলা, নির্যাতন, নিধনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করবে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত যত রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে সবাইকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) খালিদ মোহাম্মদ জানান, মিয়ানমার থেকে যারা এসেছেন সবাইকে তালিকভুক্ত করা হবে। চাইলেই যাতে তাদের খোঁজ পাওয়া যায়। সে জন্য তাদের ছবি, আঙুলের ছাপ নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের পুলিশের ওপর রোহিঙ্গাদের চালানো হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হয়েছে। যে কারণে তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশে শরণার্থীর স্রোত এখনো অব্যাহত রয়েছে। বহু রোহিঙ্গা নিহত হচ্ছেন এবং সীমান্তের দুপাশেই তৈরি হয়েছে এক মানবিক পরিস্থিতি।
এএসএস/আরএস/আরআইপি