বাস্তুহারা রোহিঙ্গার স্রোত থামছে না। আগে-পরে মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বিপুল জনসংখ্যাধিক্যের একটি দেশ কিভাবে এই ভার বইবে তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। সরকার বলছে মানবিক কারণে বসতবাড়ি ফেলে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। তবে তা সাময়িক। সময় হলেই তাদের ফেরত নিতে হবে মিয়ানমারকে। বিশ্ববাসীও রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের গণহত্যাযজ্ঞের নিন্দায় মুখর। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মিয়ানমার নীতি নৈতিকতা মানবিকতার কোনো ধারই ধারছে না। এমনকি মিয়ানমার সীমান্তে স্থল মাইন পেতে রাখা হয়েছে যাতে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে না পারে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রতিবেশি রাষ্ট্রসহ বিশ্ববিবেককে জেগে উঠতে হবে। রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
Advertisement
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কক্সবাজার-বান্দরবান সীমান্তের মিয়ানমার অংশে স্থলমাইন বিস্ফোরণে ৩ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন রেজু আমতলি ও তুমব্রু সীমান্তে শনিবার রাত ও রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নারী ও তিনজন আহত হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সীমান্তের তারকাঁটা ঘেঁষে মিয়ানমার সরকারের বিপুল সংখ্যক স্থলমাইন ও বিস্ফোরক পুঁতে রাখার কড়া সমালোচনা করা হচ্ছে। গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য এ যেন ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা।’ সারাবিশ্বে স্থল মাইন নিষিদ্ধ থাকলেও মিয়ানমার তা মানছে না। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মিয়ানমার তার দেশের ভেতর বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে স্থল মাইন পেতেছে বলে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এসব মাইন সেনা অভিযানের কারণে প্রাণভয়ে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি।
এদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নির্যাতন সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ছে মিয়ানমারের ওপর। সম্প্রতি তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সরেজমিন দেখেছেন। বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই পরিস্থিতিতে তারা সর্বতোভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট টেলিফোনে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে কথাও বলেছেন। এর আগে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করেছেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশ যে খুব জটিল অবস্থার মধ্যে রয়েছে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরও স্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকেও দ্রুত মিয়ানমারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।দুঃখজনক হচ্ছে, প্রতিবেশি দেশ ভারত ও চীন এখনো রোহিঙ্গা ইস্যুতে একধরনের নীরবতা রক্ষা করে চলেছে । সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে অনেক মুসলিম দেশও এ ব্যাপারে চুপ রয়েছে। এ নিয়ে মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতনের পরও বিবেকবান বিশ্ব চুপ থাকতে পারে না। এ কথা ঠিক বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। বহির্বিশ্বে প্রশংসাও পাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এই ভার বহন করা অসম্ভব। আর আধুনিক দুনিয়ায় কিছু সংখ্যক মানুষ শরণার্থী হয়ে থাকবে এটাও শান্তিকামী বিশ্বের চাওয়া হতে পারে না। তাই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অতিদ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
Advertisement
এইচআর/আরআইপি