কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সড়কে ব্যস্ততা বেড়েছে ঈদের আগে থেকেই। মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা রোহিঙ্গারাই এ সড়কে ব্যস্ততা বাড়িয়েছে। ঘরহীন মানুষের কান্না মিলছে সড়কের দু'ধারে। উখিয়া আসতেই পরিবহনের গতি থেমে যায় রোহিঙ্গাদের কান্নায়।
Advertisement
সড়কের পাশেই টংঘর পেতেছেন নূর বেগমের বাবা শাজাহান। ঘরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খালটিতে তখন স্রোত বইছে। দিনভর বৃষ্টিই খালটির যৌবন এনে দিয়েছে শনিবার বিকেলে। খালের পাশেই একটি গাছের গুঁড়ি। তাতে বসে নূর বেগম কঞ্চিসম কিছু একটা দিয়ে মাটি খুঁড়ে পানিতে ছুড়ছে।
শরতের আকাশ নাকি বেখেয়ালি। আকাশে মেঘ। তবে বৃষ্টি হবে কি হবে না- তা বলতে পারছে না উদাসমনা আকাশ। উদাসী আকাশে মিতালি করেছে কৈশোরে পা রাখা নূরও। কিছুই যেন ওর ভালো লাগে না। কি যেন হারিয়ে নদীর স্রোতে খুঁজতে চাইছে। বয়স যুগ পেরিয়েছে সবে। পাহাড়ে বাস বলে শরীরের গড়নও ছিমছাম। গায়ের রঙ দুধে আলতা। কৃষ্ণকায় চোখ দুটো ছলছল করছে। হারানোর বেদনা নয়, ক্ষুধার জ্বালা চোখে প্রকাশ পেয়েছে।
সকাল বেলা খেয়েছিল। সন্ধ্যায় আর এক মুঠো দানা জোটেনি। পরনে ছায়ার মতো লুঙ্গি গুঁজে দিয়েছে গেঞ্জির ওপর দিয়ে, আর তা যেন পেট আর পিঠ এক করে ফেলেছে। গোসল হয় না কতদিন, তা হয়তো ভুলে গেছে ও নিজেই। সোনালি চুলগুলো রুক্ষ্ণ হয়েছে সাবান-শ্যাম্পুর পরশ না পেয়ে।
Advertisement
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে নূর দ্বিতীয়। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে গত বছর। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মগরা পরিচালিত স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে নূর। ভালো বাংলা জানে না। বাংলা পড়েওনি।
অন্যের সাহায্য নিয়ে কথা হয় এই কিশোরীর সঙ্গে। লাজুকতায় ভর করে জানাল তার বেদনাভরা মনের কথা। ঈদের দুদিন আগে ঘর পুড়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। ওইদিনই বাবা-মার সঙ্গে চলে আসে সীমান্তের কাছে। তার দুদিন পর রাতেরবেলা সীমানা পার হয়ে উখিয়ার কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেয় নূরের পরিবার। এক ফালি পলিথিনের নিচে সপ্তাহ ধরে দিন কাটছে নূরদের।
নূর একটানা বলে যায়, ‘খুব খারাপ লাগছে। স্কুলের বান্ধীদের কথা মনে পড়ছে। স্যাররা আমাকে অনেক আদর করত। পাড়ার খেলার সাথীদের একজনেরও দেখা পাই না।’ চোখের পানি মুছতে মুছতে বলছিল, ‘ওরা আমার ছাগলটিও পুড়ে মারল। আমার থাকার ঘরটিও পুড়ে গেছে।’
ফের মিয়ানমার যাবে কিনা এমনটি জানতে চাইলে নূর বলে, 'আমার তো দেশ নাই।'
Advertisement
এএসএস/ওআর/আরআইপি