খেলাধুলা

ব্যাটসম্যানদের প্ল্যানিংয়েই সমস্যা ছিল : নান্নু

শেষ পর্যন্ত কী নিজেদের গড়া ফাঁদেই ধরা পড়লো টাইগাররা? ১-০ তে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট জিততে আবার স্পিন ট্র্যাক তৈরিই কী সর্বনাশ ডেকে আনলো? পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজ জয়ে সন্তুষ্ট না থেকে স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, ম্যাক্সওয়েল, কামিন্স ও লিওনদের হোয়াইটওয়াশ করার খায়েশটাই কী শেষ পর্যন্ত সিরিজ হাত ছাড়ার কারণ? এ লক্ষ্য পূরণে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্পিন সহায় উইকেটে খেলাই কী কাল হল?

Advertisement

এ সব প্রশ্ন এখন সবার মনে। এ প্রশ্ন এত বড় হয়ে উঠতো না, যদি অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার নাথান লিওন একাই পার্থক্য গড়ে না দিতেন। চট্টগ্রাম টেস্টের পোষ্টমর্টেম করতে গেলে ক্রিকেট বোদ্ধা, বিশেষজ্ঞ, পণ্ডিত থেকে শুরু করে গলি ও পাড়ার কিশোরও মানছেন, অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনার নাথান লিওনকে খেলতে পারেননি টাইগাররা। তার মাপা ও স্পিন ঘূর্ণির মুখেই বালির বাঁধের মত ভেংগে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং।

প্রথম ইনিংসে ৭ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬, মোট ১৩ উইকেট দখল করে বাংলাদেশের বারোটা বাজিয়েছেন লিওন। প্রশ্ন উঠতে পারে, ঢাকা টেস্টে তো বল আরও ঘুরেছে। চট্টগ্রামের চেয়ে বরং অনেক বেশি ঘুরেছে। মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পিচ ছিল শতভাগ স্পিন সহায়। প্রথম দিন থেকেই বল লাটিমের মত ঘুরেছে। কখনো বিপজ্জনকভাবে লাফিয়েও উঠেছে। সেখানে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট প্রথম দু'দিন ছিল পুরোপুরি ফ্ল্যাট। নিষ্প্রাণ মরা পিচ। যেখানে বল এক ইঞ্চিও ঘুরেনি। বাড়তি গতি ও বাউন্স কিছুই ছিল না। চট্টগ্রামের পিচে বল ঘুরতে শুরু করেছে তৃতীয় দিন শেষ ঘণ্টা আর চতুর্থ দিন সকাল থেকে।

তাহলে উইকেট সর্বনাশের কারণ হল কী করে? স্পিন ফ্রেন্ডলি পিচই যদি হারের একমাত্র বা মূল কারণ হবে, তাহলে তো বাংলাদেশের ঢাকায়ও হারার কথা ছিল। কিন্তু কই সেখানে তো মুশফিকের দল হারেনি। ২০ রানের অবিস্মরণীয় জয়ে মাঠে ছেড়েছে। তাহলে চট্টগ্রামে বেশির ভাগ সময় ফ্ল্যাট পিচ থাকার পরও মাত্র একদিনের একটু বেশি সময়ে বল ঘুরতেই সমস্যা হল?

Advertisement

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু কিছুতেই তা মানতে নারাজ। জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক উইকেটের দোষ দেখছেন না। জাগো নউিজরে সঙ্গে আলাপে অনেক কথার ভিড়ে নান্নু জানালেন, চট্টগ্রামে হারের মূল কারণ হচ্ছে ব্যাটিং ব্যর্থতা। ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং প্ল্যানটাই ঠিক ছিল না। আর তার ধারণা, প্রথম ইনিংসে ৭০-৮০ রান কম হয়েছে। অথচ সুযোগ ছিল আরও বেশি রান করার, কারণ প্রথম ইনিংসে উইকেট ফ্রেশ ছিল। বাউন্সও ছিল ইভেন। আনইভেন বাউন্স হয়নি।

ঘরের মাঠে সারা বছর স্লো ট্র্যাকে খেলে শেষ পর্যন্ত স্পিনারের বলে এমন ভরাডুবি কেন? লিওনের বলে এত সমস্যা হল কী কারণে? এ প্রশ্নের জবাবে মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর ব্যাখ্যা, উইকেটে বল ঘুরতেই পারে। কিন্তু ব্যাটসম্যানের এত চার্জ করলে স্পিনারকে খেলা যায় না। বল টার্ন করতেই পারে। ব্যাটসম্যানের কাজ হল সেই টার্নিং উইকেটে কীভাবে ভালো খেলা যায়। কেমন করে লম্বা ইনিংস সাজানো যায়। সবার আগে দরকার উইকেটে থাকার মানসিকতা ও মনোযোগ-মনঃসংযোগ। টার্নিং উইকেটে খেলতে হবে উইকেটের চরিত্র বুঝে। উইকেটে থাকার ইচ্ছে থাকতে হবে।

লো, বাউন্স ও টার্নিং পিচে কীভাবে খেলতে হয়, তা জানতে হবে। যেখানে ডেভিড ওয়ার্নার ঢাকা টেস্টে সেঞ্চুরির পর সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হবার পর নিজেকে কীভাবে শুধরে নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি করার ইনিংসে একবারের জন্য সুইপ খেলেনি। সেখানে আমাদের সাব্বির ও আর ক'জন ব্যাটসম্যানদের দেখেন, স্পিনারদের ইচ্ছেমত আক্রমণাত্মক শট খেলায় ব্যস্ত ছিল। সোজা ব্যাটে কম খেলে অহরহ সুইপ, রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টা করেছে। হঠাৎ হঠাৎ ডাউন দ্যা উইকেট গিয়ে মারার চেষ্টাও ছিল প্রচুর। টেস্ট ক্রিকেট এত শট খেলা যায় না। এ ফরম্যাটে অল্প কিছু শট খেলতে হয়। একদিনের জন্য বা একটা সেশনের জন্য অল্প কটা শটই যথেষ্ঠ। টেস্ট ক্রিকেট ছয়-সাত ধরনের শট খেলার জায়গা না।’

চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে চার নম্বরে ডানহাতি ব্যাটসম্যান খেলানোর চিন্তা ঠিক ছিল কি না? জানতে চাওয়া হলে প্রধান নির্বাচক বলেন, 'ব্যাটিং প্ল্যান ঠিকই ছিল। অফস্পিনে দুই প্রান্তে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান থাকার চেয়ে ডান ও বাঁ-হাতি কম্বিনেশন রাখলে সুবিধা। তাই হয়তো শেষ টেস্টে একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যন খেলানো হয়েছে।

Advertisement

টপ অর্ডারে সৌম্য আর ইমরুল রান পাননি। তাদের নিয়ে নানা কথা ও রাজ্যের সমালোচনা। প্রধান নির্বাচকের মত কী? তিনি ঐ দুই বাঁ-হাতি ফ্রন্টলাইনারে ব্যাটিং কেমন দেখলেন? কী ভাবছেন? সৌম্য সম্পর্কে কোন কথা না বললেও বোঝাই গেল ইমরুলকে নিয়ে খানিক অসন্তোষ আছে প্রধান নির্বাচকের। তাই তো মুখে এমন কথা, ইমরুল অনেক সুযোগ পাচ্ছে। সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। সে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। একজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে তখনই বেশি বেশি মূল্যায়ন করা যায়, যদি সে অভিজ্ঞতার আলোকে ভালো খেলে। কিন্তু সে ব্যর্থ। তারপরও আমরা আগামীতেও ইমরুলে অভিজ্ঞতার মূল্য দেবার চেষ্টা করবো।' নাসির সম্পর্কে মিনহাজুলের ব্যাখ্যা, নাসির দুই বছর পরে আসছে। তবে সে নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি।’ মুমিনুল সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাওয়া হলে প্রধান নির্বাচক বলেন, মুমিনুল ঢাকা টেস্টে না থাকায় অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমরা শেরে বাংলার উইকেটের কথা বিবেচনায় এনে ঢাকা টেস্টে মুমিনুলকে রাখিনি। সে আমাদের প্ল্যানে ছিল না ইচ্ছে করেই। পরের টেস্টে সে আমাদের প্ল্যানে ছিল। মুমিনুল নিঃসন্দেহে ভালো প্লেয়ার। আগে ভালো খেলছে। তাকে আমরা কখনই চিন্তার বাইরে রাখিনি।

সারা বছর স্লো ও লো ট্র্যাকে খেলে আর সাকিব, মিরাজ ও তাইজুলের মত উঁচু মানের স্পিনার দলে থাকার পরও অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনার নাথান লিওনের বল খেলা সম্ভব হয়নি। লিওন চট্টগ্রাম টেস্টে ৬+৭ = ১৩ উইকেট দখল করে সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। সে তুলনায় বাংলাদেশের অফস্পিনার মিরাজ ততটা কার্যকর হতে পারেননি। কেন? মিনহাজুলের ব্যাখ্যা, লিওন তার উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বল করে। তার হাতে টপ স্পিন আছে। অবার টার্নও করাতে পারেন। সে তুলনায় আমাদের মিরাজ অনেক বেশি ফ্ল্যাট বল করে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, লিওনের আছে ধারাবাহিকভাবে অনেক বেটার লাইনে বল করার দুর্দান্ত ক্ষমতা। লিওনের আর্ম ও টপ স্পিন অনেক ভালো। তার ৯০ ভাগ ডেলিভারি খুব ভাল জায়গায় পড়ে। যা ব্যাটসম্যানের স্বচ্ছন্দে খেলার পথে বাধা অবশ্যই।’

এআরবি/এমআর/আইআই