মাত্র ১৮ মাসেই মিয়ানমার সরকারের পক্ষে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান কিছুটা অযৌক্তিক। দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি বৃহস্পতিবার এ কথা বলেছেন।
Advertisement
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে সু চি বলেন, আমাদের অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ১৮ মাসের মধ্যেই এই সংকট সমাধান হবে এটা আশা করা কিছুটা অযৌক্তিক। কয়েক দশক ধরেই রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই সংকটের শুরু প্রাক ঔপনিবেশিক আমল থেকে।
সু চি বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের দেখাশুনা করা আমাদের দায়িত্ব এবং আমরা সেটা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আইনগতভাবে সবাই যেন সুরক্ষা পায় আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসীদের থেকে নিরপরাধ লোকদের কিভাবে আলাদা করা যায় সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
Advertisement
রোহিঙ্গা ইস্যুর সঙ্গে কাশ্মির ইস্যুর মিল আছে এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাশ্মির ইস্যুতে ভারত যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, আমরা ঠিক একই রকম সমস্যায় পড়েছি। আমরা আমাদের নিরপরাধ নাগরিকদের রক্ষার চেষ্টা করছি। ভারতীয়রা এ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গত আগস্টে মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি পুলিশ চেক পোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। চলতি বছরে দ্বিতীয়বারের মতো সহিংসতা শুরু হয় সেখানে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় নীরব অবস্থানের কারণে বিশ্বজুড়ে সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদমর্যাদা এবং ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির ইতিবাচক অবস্থান আশা করছিল বিশ্ব। কিন্তু তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বার বার তার সরকার এবং সেনা বাহিনীর পক্ষেই সাফাই গাইলেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির এমন নীরব অবস্থানকে তার রাজনৈতিক দুর্বলতা হিসেবেই দেখছেন কূটনীতিকরা।
Advertisement
মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সু চির সঙ্গে কথা টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। টেলিফোনে আলাপকালে এরদোয়ানকে সু চি বলেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
সু চি এরদোয়ানকে বলেন, সন্ত্রাসীদের স্বার্থ প্রচারের জন্যই বহু ভুল তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি আরো বলেন, রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাস যেন বিস্তার লাভ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে তার সরকার।
এছাড়া বৃহস্পতিবার রয়টার্সের ভারতীয় টেলিভিশন পার্টনার এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সু চি বলেন, সহিংসতায় জর্জরিত রাখাইন রাজ্যের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তায় সরকার সর্বোচ্চ কাজ করছে।
সেনাবাহিনীর নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ থেকে বাঁচতে গত দুই সপ্তাহে প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই ঘটনায় সু চি এবং তার সরকার মানবাধিকার সংস্থা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে সমালোচনার শিকার হয়েছেন। রোহিঙ্গা সংকটে সু চি এবং মিয়ানমার সরকারের তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিষয়ে কথা বলেছেন ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। মিয়ানমারের নেত্রী আং সান সু চিকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
টিটিএন/পিআর