খেলাধুলা

‘প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংটাই সর্বনাশের মূল’

একটা অস্ফুট আফসোস, অনুশোচনা থেকেই গেল ‘ইস বোর্ডে যদি আর শতেক খানেক রান জমা থাকতো। কিংবা অস্ট্রেলিয়ার সামনে যদি ২০০ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয়া যেত, তাহলে হয়তো খেলার ফল অন্যরকম হতে পারতো। শুধু দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৫৭ রানে ইনিংস শেষ হবার কারণেই তা হয়নি?

Advertisement

ভক্ত ও সমর্থকদের বড় অংশের হয়তো ধারনা তাই। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকের উপলব্ধি ভিন্ন। তার সোজা সাপটা ব্যাখ্যা, প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংটাই ডুবিয়েছে। মুশফিকের ধারণা, তার দল প্রথম ইনিংসে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ রান কম করেছে। তাই তো মুখে একথা, ‘আমরা যদি প্রথম ইনিংসে ৩৫০+ বা ৪০০ এর কাছাকাছি করতে পারতাম তাহলে হয়তো বা ওদেরকে ১৫০ রানের লিড দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো অন্যরকম খেলা হতে পারতো।’

মুশফিকের এমন বক্তব্যকে অসাঢ় ও অযৌক্তিক ভাবার কোনই কারণ নেই। কারণ খেলার চালচিত্র সে সাক্ষীই দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার জিততে দরকার ছিল মাত্র ৮৬ রানের। এই সামান্য কটা রান করতে গিয়ে তিন টপঅর্ডার রেনশো, ডেভিড ওয়ার্নার আর অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ তিনজনই সাজঘরে। বল ঘুরছিল। পেসাররাও ম্যুভমেন্ট পেয়েছেন। তাই আর ১০০ রান বেশি থাকলে অস্ট্রেলিয়ার জেতা কঠিন হতো।

তার অনুভব ও উপলব্ধি, সর্বনাশ যা হবার হয়েছে প্রথম ইনিংসেই। বাংলাদেশ অধিনায়ক পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, প্রথম দিনের ব্যাটিংটাই ডুবিয়েছে। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিনের উইকেট পুরোপুরি ব্যাটিং সহায় ফ্ল্যাট পিচ ছিল। সেখানে আমাদের উচিৎ ছিল দেড় দিন ব্যাটিং করা। কিন্তু আমরা তা পারিনি। সাধারণত টেস্টের প্রথমদিনে উইকেট ভালো থাকবে। দ্বিতীয়দিন থেকে আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকবে। এটা আমাদের অবশ্যই জানা ছিল।

Advertisement

মুশফিক অমন কথা বলতেই পারেন। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস আরও বড় হতে পারতো অনায়াসে। যিনি বাংলাদেশের সাত সাতজন ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন সেই অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনার লিওন অকপটে স্বীকার করেছেন বল এক ইঞ্চিও ঘোরেনি। আমি সোজা ডেলিভারিতে তামিম, সৌম্য, ইমরুল আর মুমিনুল চার বাঁ-হাতিকে আউট করেছি।’

এটাই শেষ কথা নয়। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ছয় ছয়জন ব্যাটসম্যান পুরোপুরি সেট হয়ে তারপর আউট হয়েছেন। সেই তালিকায় অধিনায়ক মুশফিক (৬৮), সাব্বির রহমান রুম্মন (৬৬), নাসির হোসেন (৪৫), সৌম্য সরকার (৩৩), মুমিনুল হক (৩৩) ও সাকিব আল হাসান (২৪)। আহামরি বা বাড়তি কিছুর দরকার ছিল না। মুশফিক, সাব্বির ও নাসিরের যে কোন দুইজন লম্বা ইনিংস খেলতে পারলেও বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে ঠেকতো সাড়ে চারশোতে। তাহলে প্রথম ইনিংসে প্রায় ১০০ রান লিড থাকতো। আর দ্বিতীয় ইনিংসে চরম ব্যর্থতার পরও এই ১৫৭ রানের সাথে ৮০ থেকে ১০০ রান এগিয়ে থাকতে পারলে অস্ট্রেলিয়াকে ২২০-২৩০ এর বেশি রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া যেত। কে জানে তাহলে ঢাকার মত এ ম্যাচেও হয়তো শেষ হাসি হাসতে পারতো মুশফিকের দল।

কিন্তু তা হয়নি। আর সে কারণেই ম্যাচ শেষে মুশফিকের যত আফসোস প্রথম ইনিংস নিয়ে। ‘আমার মনে হয় ওভার অল এই টেস্টে সেকেন্ড ইনিংসের চেয়ে প্রথম ইনিংসটাই আমাদের জন্য অনেক বড় ভাইটাল রোল প্লে করেছে। যেটা কি না আমরা অনেকটা পিছিয়ে ছিলাম। এ রকম ফ্ল্যাট উইকেটে অন্তত প্রথমদিনে উইকেটটা যে রকম ছিল, এমন কোন স্পিন ছিল না। যেটা কিনা আনপ্লেয়েবল বা রিস্কি ছিল। তো আমার মনে হয় ওই জায়গাটায় আমরা অনেকখানি পিছিয়ে গেছি।’

মুশফিকের শেষ উপলব্ধি, ‘এ সিরিজে তার দলের ব্যাটিং প্রত্যাশিত মানের হয়নি। আমার মনে হয় যে পুরো সিরিজ জুড়ে ব্যাটিংটা আমাদের দুর্বলতার জায়গা।’

Advertisement

এআরবি/এমআর/জেআইএম