প্রথম ইনিংসে টানা পাঁচ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে উইকেটে নামানোর কারণে সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্টকে। যেখানে অফ স্পিনার নাথান লিওন একের পর এক উইকেট পকেটে পুরে নিচ্ছিলেন, যেখানে বাম হাতিদের সামনে তাকে বাড়তি কোনো কষ্টই করতে হচ্ছে না, শুধু বুদ্ধি খাটিয়ে টানা একই লেন্থে বল করে যেতে হচ্ছে, সেখানে কেন পাঁচ ব্যাটসম্যানকে পরপর মাঠে নামানো?
Advertisement
টিম স্ট্র্যাটেজি নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং অর্ডারে খানিক পরিবর্তন। বৈচিত্র্য আনতেই হোক কিংবা নাথান লিওনকে থামাতে- বামহাতিদের ভিড়ে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামানো হলো নাসির হোসেনকে।
কিন্তু উইকেটে যেভাবে সয়লাব বইয়ে দিচ্ছিলেন লিওন, সেটা থামাতে পারলেন কই নাসির! উল্টো স্টিভেন ও’কিফের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে উইকেট ছুড়ে এলেন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।
ও’কিফকে হয়তো উইকেট দিয়েছেন নাসির। লিওনকেও থামাতে পারলেন না কেউ। প্রথম উইকেটটাই (সৌম্য সরকার) শুধু নিয়েছেন পেসার প্যাট কামিন্স। বাকি তিনটিই নিলেন নাথান লিওন।
Advertisement
এবার হয়তো টানা চারটি এলবিডব্লিউ করলেন না। লিওন জানতেন, দ্বিতীয় ইনিংসে প্যাডের চেয়ে ব্যাটেই খেলবে বেশি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এ কারণে ভিন্ন কৌশল নিলেন তিনি। যে কারণে ইমরুল কায়েস না বুঝেই আলতো করে ক্যাচটা তুলে দিলেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে। সাকিব দিলেন স্লিপে ক্যাচ এবং তামিম ধৈয্য হারা হয়ে স্ট্যাম্পিং হলেন।
মূলতঃ তামিমের আউট হওয়ার পরই বিপর্যয়ের বিভীষিকা শুরু হয়। তামিমের ওপরই ছিল যত আশা-ভরসা। ঘরের মাঠে খেলছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে সেটা পুষিয়ে দিতে পারবেন- ভেবেছিল সবাই। সঙ্গে ছিল একটি রেকর্ডের হাতছানিও।
ওয়ানডের মত টেস্টেও তামিমই বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান। একজন ব্যাটসম্যানের পক্ষে দেশের হয়ে যা যা করা সম্ভব তার প্রায় সব কিছুই করে দেখিয়েছেন তামিম ইকবাল। ৫১ টেস্টে তার কৃতিত্ব ও অর্জন কম নয়। অনেক। দেশের হয়ে সচেয়ে বেশি ৩৮৩৫ রান তার। সবচেয়ে বেশি, আটটি টেস্ট সেঞ্চুরি আর সর্বাধিক ২৪টি (যৌথভাবে) হাফ সেঞ্চুরিও তামিমের ব্যাট থেকেই এসেছে। দেশে ও দেশের বাইরে সব জায়গায় তামিমই বাংলাদেশের আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু।
তামিমের ব্যাট কথা বলেনি, তামিম রান পাননি এমন টেস্টে বাংলাদেশ ভাল করেছে, জিতেছে এমন রেকর্ড খুব কম। বরং ওয়ানডের মত টেস্টেও বাংলাদেশের বেশির ভাগ সাফল্যে তামিমের ব্যাট রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
Advertisement
খুব বেশি দুর যেতে হবে না, গত বছর অক্টোবরে ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জয়ের ম্যাচে অনবদ্য শতরান (১০৪) করে দলকে সুদৃঢ় ভীত গড়ে দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের সফল ক্রীড়া পরিবারের এ সন্তান।
কিন্তু শুনে অবাক হবেন তার নিজ শহর চট্টগ্রামে তামিমের ট্র্যাক রেকর্ড তেমন ভাল নয়। দেশের মাটিতে ৩২ টেস্টে ৬০ ইনিংসে তামিমের রান ২৩৬৫। সেঞ্চুরি ৫টি। হাফ সেঞ্চুরি ১৪টি। ওই পাঁচ শতরানের দুটি করে রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলায় (২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি, ভারতের বিপক্ষে ১৫১)। আর অন্যটি ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০৪। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের প্রথমটি ২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ১০৯। আর ২০৬ রান, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালের এপ্রিলে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে তামিমের একমাত্র সেঞ্চুরি ২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। ২৫২ মিনিটে ১৭১ বলে ১১৪ রান। ওই ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসেও তামিমের ব্যাট থেক এসেছিল হাফ সেঞ্চুরি, ৬৫ রান।
কিন্তু সামগ্রিকভাবে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিমে তামিমের ব্যাট তুলনামুলক কম আলো ছড়িয়েছে। টেস্টে ঘরের মাঠে তার ১৪ হাফ সেঞ্চুরির পাঁচটি এই মাঠে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা শেষ টেস্টেও অবশ্য একটি ফিফটি আছে। সেটা ২০১৬ সালের অক্টোবরে। প্রথম ইনিংসে ৭৮ আর পরের ইনিংসে ৯ রানে আউট হয়েছিলেন চট্টলার এ বাঁ-হাতি ড্যাশিং ওপেনার।
ওই ম্যাচে টাইগারদের সামনে জয়ের টার্গেট ছিল ২৮৬ রান। তামিম ৯ রানে আউট হলে ২২ রানে হার মানে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে ৭৮ আর পরের ইনিংসে ৯। কাকতালীয়ভাবে এবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার সাথে প্রথম ইনিংসে সেই ৯ রানেই আউট হয়েছেন তামিম।
পরের ইনিংসে জ্বলে উঠবে তামিমের ব্যাট? নিজ শহরে ভাল খেলতে না পারার অপবাদটা এবার ঘোচাতে পারবেন তামিম? দায় মেটানোর জন্যই নয়, দলের প্রয়োজনেই তামিমের জ্বলে ওঠা ছিল জরুরী। তামিম একটি ভাল ও দীর্ঘ ইনিংস খেলার অর্থ, দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শক্ত ভিত গড়ে ওঠা।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভক্তদের সে আশা পূর্ণ হয়নি। তামিমের ব্যাট দ্বিতীয় ইনিংসেও কথা বলেনি। ১২ রানেই সাজঘরে পা বাড়ালেন তিনি। প্রথম ইনিংসে যার বলে আউট হয়েছিলেন এবারো সেই নাথান লিওনের বলেই উইকেট দিলেন তামিম।
লায়নকে এক পা সামনে বেরিয়ে এক্সট্রা কভার ও কভারের মাঝখান দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করেছিলেন। সেই লায়নের পরের ওভারে সামনে বেরিয়ে খেলতে গিয়েই ঘটলো বিপত্তি।
তবে এবার আর শট খেলতে গিয়ে নয়। সামনে বেরিয়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে। তার প্রত্যাশার চেয়ে বল বেশি লাফিয়ে উঠলো। টার্নও হলো বেশ। তাতেই তামিমের ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল উইকেটের পেছনে। বল এতটাই লাফিয়ে উঠলো যে, অসি কিপার ম্যাথু ওয়েডের বুক পর্যন্ত উঠলো।
তামিম সাজঘরে ফেরত যেতই শুরু হলো ব্যাটিং বিপর্যয়। রীতিমত বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। আসা-যাওয়ার মিছিল। একে একে ইমরুল, সাকিব, নাসির ফিরলেন অল্প সময়ের মধ্যেই।
এআরবি/আইএইচএস/পিআর