খেলাধুলা

ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ

একের পর এক ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। সৌম্য এক ভুল করেছিলেন স্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন। তামিম ইকবাল যেন রান করতে না পারায় পুরোপুরি অধৈয্য হযে পড়েছিলেন। ৩৮ বল খেলে করলেন মাত্র ১২ রান। এ কারণেই হয়তো নাথান লিওনের বলে ভুলটা করে বসলেন।

Advertisement

একেবারে ক্রিজ ছেড়ে দিয়ে এসে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গেলেন লিওনকে। কিন্তু বলের লাইন মিস করলেন। বল চলে গেলো উইকেটের পেছনে ম্যাথ্যু ওয়েডের হাতে। দ্রুত ব্যাট ফেলেও লাভ হলো না। তার আগেই উইকেট ভেঙে দিলেন ওয়েড। দলকে আরও বেশি বিপদে ফেলে আউট হয়ে গেলেন তামিম ইকবাল। দলীয় রান ছিল তখন ৩২।

সেই ভুলের ধারাবাহিকতা চলল ইমরুলের ক্ষেত্রেও। একের পর এক সুযোগ পেয়েও সেটাকে কাজে লাগাতে পারছেন না তিনি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫ রান করে আউট হয়ে গেলেন তিনি। দলকে রেখে গেলেন দারুণ বিপর্যয়ের মধ্যে। নাথান লিওনের স্পিন ঘূর্ণির সামনে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন তিনি।

লিওনের বলে খুবই বাজে একটি শট খেললেন ইমরুল। শটে কোনো ক্যারিশমা ছিল না। কোনো পাওয়ার ছিল না। ইচ্ছা করেই যেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচটা তুলে দিলেন তিনি। ৩৭ রানে পড়ল তৃতীয় উইকেট।

Advertisement

ইমরুল কায়েসের পর পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন সাকিব আল হাসান। অনেক আশা-ভরসা ছিল তাকে নিয়ে। কিন্তু সেই অফ স্পিনার লিওনের সামনে বাম হাতি ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান টিকতে পারলেন না। বিভ্রান্ত হলেন। উইকেট বিলিয়ে দিলেন। লেগ মিডলে পড়ে বল হালকা বেরিয়ে যাচ্ছিল। তখনই ব্যাট পেতে দেন সাকিব। বল চলে গেলো প্রথম স্লিপে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে। ২ রান করেই বিদায় নিলেন সাকিব। ৩৯ রানে গেলো চতুর্থ উইকেট।

এ রিপোর্ট লেখার সময় বাংলাদেশের রান ১৮.৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯ রান। টাইগাররা এখনও পিছিয়ে ৩৩ রান। উইকেটে রয়েছেন নাসির হোসেন ১ রানে এবং মুশফিক শূন্য রানে।

দিনের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়াকে আর এগুতে না দিয়ে অলআউট করে দিলো বাংলাদেশ। দিনের তৃতীয় ওভারেই বলতে গেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামতে হলো বাংলাদেশকে। শুরুতেই দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার মুখোমুখি হলেন নাথান লিওনের। প্রথম ইনিংসে যিনি নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। পরের ওভারেই আক্রমণের জন্য পেসার প্যাট কামিন্সের হাতে বল তুলে দিলেন অসি স্কিপার স্টিভেন স্মিথ।

প্রথম চারটি ওভার ভালো ভালোই কাটিয়ে দিলেন দুই ওপেনার। পঞ্চম ওভারে পেসার প্যাট কামিন্সের বলে এসেই বিপদটা বাড়িয়ে দিলেন সৌম্য সরকার। ওভারের ৫ম বলে এসে অপ্রয়োজনে কামিন্সকে খোঁচা দিতে গেলেন সৌম্য সরকার। অফ স্ট্যাম্পের ওপর পড়ে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ইচ্ছা করেই যেন বলে খোঁচাটা দিলেন সৌম্য। প্রথম স্লিপেই ধরা পড়লেন ম্যাট রেনশর হাতে। দলীয় ১১ রানেই পড়ল প্রথম উইকেট। সৌম্য আউট হলেন ৯ রান করে।

Advertisement

আগেরদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে আড়াই ঘণ্টার খেলা ভেসে গিয়েছিল। এ কারণে আধা ঘণ্টা এগিয়ে এনে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়েছিল চতুর্থ দিনের খেলা। তবে খেলা শুরু হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার বাকি দুই ব্যাটসম্যান স্কোরবোর্ডে কোনো রানই যোগ করতে পারেননি। অলআউট হয়ে গেলেন সেই ৩৭৭ রানেই। অস্ট্রেলিয়ার অবশিষ্ট উইকেটটি তুলে নেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি পেসার ৪ উইকেট নিলেন। চট্টগ্রামে টানা দুই টেস্টে চারটি করে উইকেট নিলেন মোস্তাফিজ। এর আগে তিনি এই মাঠে সর্বশেষ খেলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ওই টেস্টেও ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সেটি ছিল আবার তার অভিষেক টেস্ট।

চতুর্থ দিন আজ ব্যাট করতে নামার পর অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটসম্যান নাথান লিওন এবং স্টিভেন ও’কিফ খেলতে পারলেন মোটে ১১ বল (১.৫ ওভার)। সাকিব আল হাসানকে দিয়ে দিনের উদ্বোধন করান বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। তার ওভারটি রয়ে-সয়ে খেললেন দুই ব্যাটসম্যান। কোনো রান নিতে পারলেন না।

পরের ওভারে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। শুরু থেকেই তার বোলিং হচ্ছিল দুর্দান্ত। বল আউট সুইং-ইন সুইং দুই’ই করছিল। শেষ পর্যন্ত সোজা লেন্থের বলটি উইকেটে পিচ করার পর হালকা বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ব্যাটের কানায় খোঁচা দেন ব্যাটসম্যান নাথান লিওন। ক্যাচ চলে যায় প্রথম স্লিপে। ইমরুল কায়েসের পক্ষে ক্যাচটি ধরতে মোটেও কষ্ট করতে হয়নি।

সুতরাং, ৩৭৭ রানেই শেষ হয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস। তাদের লিড দাঁড়াল সেই ৭২ রানই।

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীম এবং সাব্বির রহমানের হাফ সেঞ্চুরির সুবাধে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় ৩০৫। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ডেভিড ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি এবং পিটার হ্যান্ডসকম্ব ও স্টিভেন স্মিথের হাফ সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার রান দাঁড়িয়েছে ৩৭৭।

আইএইচএস/আরআইপি