জাতীয়

‘জঙ্গি আস্তানা’য় অভিযান সকাল পর্যন্ত স্থগিত

রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোডের বাঁধন সড়কের বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলা বিশিষ্ট ‘কমলপ্রভা’ নামের বাড়িতে পরিচালিত র্যা বের অভিযান ফের স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফের অভিযান শুরু হবে।

Advertisement

বুধবার সন্ধ্যার পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান বলেন, সন্ধ্যা হওয়ায় আপাতত উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুনরায় ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।

এর আগে, ‘কমলপ্রভা’ বাড়িটির ধ্বংসস্তূপ থেকে দগ্ধ সাত মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

বুধবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি আস্তানায় ইনোসেন্ট (নিরপরাধ) দুই শিশুসহ নারীরা ছিল। তাদের আমরা জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। তবে জঙ্গিদের খুনি যে মানসিকতা সেটাই আবার দেখতে পেলাম। তাদের খুনি মানসিকতার কারণে পরিবার ও শিশুসন্তানও রক্ষা পেল না। সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

Advertisement

তিনি বলেন, ওই বাসায় ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ নিজেই বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে সে’সহ তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগী মারা যায়। যেহেতু ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ ইউপিএস, আইপিএস, কবুতরসহ নানা ধরনের ব্যবসা করত। ব্যবসার কারণে তার কর্মচারীও ছিল। নিহত ওই দুই সহযোগী তার কর্মচারী হতে পারে। তবে তাদের পরিচয় আমরা এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি।

মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টায় অ্যাসিড, পেট্রল, বোমা তৈরির বিস্ফোরকসহ কেমিক্যালে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। পরপর তিনটি বিস্ফোরণ হয়। এরপর আরও বিস্ফোরণের শব্দ আমরা পাই। প্রধান বিস্ফোরণটির কারণে ভবনটির পঞ্চমতলায় আগুন লেগে যায়।

জঙ্গিদের আস্তানাটির মেঝেতে দুই ফুট বাই দুই ফুট গর্ত তৈরি হয়। গর্ত তৈরির কারণে চতুর্থতলায়ও বিস্ফোরক ও কেমিক্যাল বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা ছিল পাঁচশ’ মিটার দূরত্বব্যাপী। এতে আশপাশের থাইগ্লাসগুলো ভেঙে পড়ে। কাচের টুকরা একেকটা স্প্লিন্টারে পরিণত হয়।

জঙ্গি আব্দুল্লাহর কাছে বিস্ফোরক ও আইইডি ছিল। দুই ব্যারেল পেট্রল এখনও মজুদ আছে। বিস্ফোরণে বেশক’টি কবুতর মারা গেছে। তবে বাকি কবুতরগুলো বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।

Advertisement

বেনজীর আহমেদ বলেন, পঞ্চমতলা থেকে ইতোমধ্যে আমরা সাতটি মাথার খুলি পেয়েছি। মানুষের শরীর বলতে যা তা পুড়ে মূলত ছাইয়ে পরিণত হয়েছে। দু-একটি হাড় দেখা গেছে। আমরা মৃত দেহগুলো শনাক্ত করছি। র‌্যাব, সিআইডি ও পুলিশের ফরেনসিক টিম কাজ করছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। সময় লাগবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকালও কাজ করা লাগতে পারে।

তিনি বলেন, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ ২০০৫ সাল থেকে জেএমবিতে জড়িত। নব্য জেএমবি প্রতিষ্ঠার পর সে এ সংগঠনে যোগ দেয়। সারওয়ার জাহান যখন জেএমবি ভেঙে আলাদা দল (নিউ জেএমবি) গঠন করে সেই সময় এক শূরা সদস্য গ্রেফতার হয়। সে তথ্য দেয় যে, আব্দুল্লাহ আল-আনসার হিসাব কাজ করছে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, থাকা-খাওয়া ও অর্থ দিয়ে আব্দুল্লাহ সহযোগিতা করত। আমরা আগে তার নাম শুনলেও পরিচয় ও অবস্থান নিশ্চিত ছিলাম না।

প্রসঙ্গত, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সোমবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে ঘিরে ফেলা হয় রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোডে বাঁধন সড়কের বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলা বিশিষ্ট ওই বাড়িটি। বাড়িটিতে দুই স্ত্রী, সন্তান ও সহযোগীসহ দুর্ধর্ষ জঙ্গি আব্দুল্লাহ অবস্থান করছিল। সেখানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকও মজুদ করে রাখা হয়েছিল।

পরবর্তীতে তাদের আত্মসমর্পণ করার কথা থাকলেও মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা আত্মঘাতী হন।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর বাবার নাম মৃত মীর ইউসূফ আলী, বাড়ি মেহেরপুরে। তার দুই স্ত্রী- নাসরিন ও ফাতেমা, দুই সন্তান- ওসমান (৯-১১) ও ওমর (৩)। ওই বাসায় আব্দুল্লাহর বোন মেরিনাও অবস্থান করছিলেন। তিনি সোমবার গভীর রাতে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরবর্তীতে মেরিনার মাধ্যমে র‌্যাবের সঙ্গে আব্দুল্লাহর যোগাযোগ স্থাপন হয়।

আব্দুল্লাহর আরেক ভাই (৪৫), তবে তার নাম জানা যায়নি। তিনি কোরআনে হাফেজ বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে মুফতি মাহমুদ খান সংবাদকর্মীদের জানান, জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ না করে রাত পৌনে ১০টার দিকে পরপর বড় চারটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে র‌্যাবের চার সদস্য স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন। বিস্ফোরণের কারণে ওই ভবনের আগুন লেগে যায়।

জেইউ/এমএআর/বিএ