রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা নিয়ে প্রচুর ভুয়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি। রাখাইনের সহিংসতা ও রোহিঙ্গা নিপীড়নের জেরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক সমালোচনা ও নিন্দার ঝড়ে প্রথমবারের মতো এই ইস্যুতে মুখ খুলেই এ দাবি করলেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী।
Advertisement
সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সংকটে প্রথমবারের মন্তব্যে সু চি বলেন, সন্ত্রাসীদের স্বার্থে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে উত্তেজনা উসকে দেয়া হচ্ছে।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চির কার্যালয় বলছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মঙ্গলবার টেলিফোনে আলাপের সময় তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। গত দুই সপ্তাহে এক লাখ ২৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়েছে।
কী বলছেন সু চি?
Advertisement
মিয়ানমার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সু চি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে বলেছেন যে, সবচেয়ে ভালো উপায়ে তার সরকার রাখাইনে সব মানুষের সুরক্ষার কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে।
সু চি বলেন, আমরা ভালো করেই জানি, গণতান্ত্রিক সুরক্ষা ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অর্থ কী, আমরা তা ভালো করেই জানি।
‘সুতরাং আমরা দেশের সব মানুষের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি। আর এটা শুধুমাত্র রাজনৈতিক, সামাজিক এবং মানবিক সুরক্ষা নয়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, অনেক ভুয়া সংবাদ, ছবি ছড়ানো হচ্ছে। আর এসবের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সমস্যা তৈরি ও সন্ত্রাসীদের স্বার্থকে ত্বরান্বিত করা।
Advertisement
আসলেই কী ভুয়া সংবাদ?
রাখাইনের সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে প্রচুর ভুয়া তথ্য আছে। সীমান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামার পর গত ৫ সেপ্টেম্বর এই ইস্যুতে টুইটারে অন্তত ১২ লাখ টুইট করা হয়। এতে ওই অঞ্চলে চলমান সহিংসতার অনেক ছবি দেখা যায়।
বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রতিনিধি জোনাথন হেড বলেন, সমস্যাটা হচ্ছে এসব ছবির অধিকাংশই মিথ্যা। নিবিড়ভাবে দেখলে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসে। কিন্তু সব ছবিই ভুয়া নয়। অনেক ছবিই বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্কটের। এর মধ্যে তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী মেহমেত সিমসেক একটি ছবি টুইট করেন; যা ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার।
তবে বিবিসির বার্মিজ সার্ভিসের প্রতিনিধি টিন সোয়ে বলেন, সু চি ভুয়া তথ্যের যে দাবি করেছেন, শেষ পর্যন্ত তা দেশটির সরকারের দরজায় কড়া নাড়তে পারে। তিনি বলেন, ভুয়া সংবাদ ছড়াচ্ছে কারণ অস্থিতিশীল এলাকায় গণমাধ্যমের প্রবেশের অনুমতি দেয়নি সু চির সরকার।
সরকার যদি জাতিসংঘ অথবা মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে ওই অঞ্চলের যাওয়ার অনুমতি দিত তাহলে জানা যেত আসলে কী ঘটছে। তবেই এসব ভুয়া সংবাদ পাত্তা পেত না।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশের ৩০টি তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ পুলিশ নিহতের পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কঠোর অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সহিংসতায় রাখাইনে অন্তত ৪০০ রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে।
জাতিসংঘ বলছে, দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানে নারী, শিশুসহ এখন পর্যন্ত দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর ধ্বংস ও অত্যধিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে, তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন। এই বিদ্রোহীরা রাখাইনে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
কিন্তু বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, সশস্ত্র বৌদ্ধদের সহায়তায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে।
এদিকে বুধবার বাংলাদেশ সরকারের দুটি সূত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করে বলেছে, বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ল্যান্ড মাইন বসাচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ মুখে রোহিঙ্গাদের ঢল থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমার সেনাবাহিনী এ কাজ করছে।
রাখাইনের সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে দুই শিশু ও এক নারী আহত হওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এএফপি।
এসআইএস/জেআইএম