মধ্যযুগীয় বর্বরতা আর পাশবিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য আসছিলেন মিয়ানমারের তমব্রু বাজার এলাকার জাফর আলমের স্ত্রী সাবেকুন্নাহার (৫৫)।
Advertisement
বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্তের ওপারের একেবারে কাছের গ্রাম ওটি। সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আক্রান্ত হয়ে ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ উড়ে যায় তার।
অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়া মাকে কোলে তোলে কোনো রকমে সীমান্ত পার হয় দুই ছেলে দেলোয়ার ও আজগর। মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশে ঢুকে মাকে প্রথমে নেয়া হয় কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে।
প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। সেখানে রাতে সাবেকুন্নাহারে ডান পা কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। এমনটি জানিয়েছেন কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নেয়া সাবেকুন্নাহারের ভাগ্নে মুহাম্মদ সা’দ (৩০)।
Advertisement
মিয়ানমারের আকিয়াব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাস করা মুহাম্মদ সা’দ বলেন, মঙ্গলবার সকালে পাশের গ্রামে আগুন লাগায় মিয়ানমারের সেনারা। ভেবেছিলাম আমরা সীমান্তের কাছের, তাই আমাদের দিকে নাও আসতে পারে। কিন্তু দুপুরের দিকে দেখলাম আমাদের গ্রামেও শুরু হয়েছে আক্রমণ। পূর্বপাড়া থেকে তারা অরাজকতা শুরু করেছে শুনে সবাই যেভাবেই ছিলাম সেভাবেই বাংলাদেশের দিকে রওয়ানা দিই।
কিন্তু সীমান্তের কাছাকাছি আসার পর হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। আমি পেছনে ছিলাম। দেখি মামি (সাবেকুন্নাহার) মাটিতে লুটে পড়েন। এ সময় আরও কয়েকজন আহত হন। আমার মামাত ভাইয়েরা সামনে চলে গিয়েছিল। তারা আবার পেছনে এসে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া মামিকে কাঁধে নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। রাতে খবর পেয়েছি সংক্রমণ দেখে পুরো দেহ বাঁচাতে মামির আঘাত পাওয়া পায়ের বেশির ভাগ অংশ কেটে ফেলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য আসা রোহিঙ্গারা যাতে ফিরতে না পারে বা আশ্রয়ে আসতে গিয়ে যেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে মারা যায়, সে জন্য সীমান্তজুড়ে ল্যান্ড মাইন রাখছে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। পুরো আরাকান রাজ্যে গ্রামে গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনা-পুলিশ ও মগ যুবকরা। চালাচ্ছে ধর্ষণ ও পাশবিকতা।
সায়ীদ আলমগীর/এএম/এমএস
Advertisement