বিনোদন

এখনো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করা ছবির নায়ক সালমান শাহ

ঢাকাই ছবিতে আয়-ব্যয়ের কোনো স্বচ্ছ হিসাব নেই। সবাই সিনেমার বাজেট বাড়িয়ে বলছে আর হিট-সুপারহিট বানিয়ে ফেলছে। বহির্বিশ্বে সিনেমার আয়-ব্যয়ের হিসাব করার জন্য ‘বক্স অফিস’ থাকে। আমাদের দেশে তা নেই। তাই সবাই মনগড়া তথ্য দিয়ে যান। আর সেগুলোই গণমাধ্যমের বরাতে গিলছে দেশের দর্শক।

Advertisement

তবে চলচ্চিত্রের ইতিহাস ঘেঁটে ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট লোকদের সঙ্গে আলোচনায় দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমার রেকর্ড ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র দখলে। এরপর সালমান-শাবনূর জুটির ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ও ফারুক-কবরী জুটির ‘সুজন সখী’ ছবির নাম।

‘বেদের মেয়ে জোছনা’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। মুক্তির দুই বছর পর একটি বিনোদন পত্রিকা জানিয়েছিল, এই ছবির আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা। এই ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন তোজাম্মেল হক বকুল। এই ছবিতে জুটি বেঁধেছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ। এই ছবির ব্যবসা নিয়ে অবশ্য অনেক তথ্যই ছড়ানো হয়েছে। কেউ কেউ ৪০ কোটি টাকার কথাও বলেন।

ব্যবসা সফল ছবির তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা ছবিটির নাম ‘স্বপ্নের ঠিকানা’। ঈদে মুক্তি পেয়ে ছবিটি আয় করেছিল প্রায় ১৯ কোটি টাকা। এম এ খালেক পরিচালিত এই ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় জুটি সালমান ও শাবনূর। ত্রিভূজ প্রেমের গল্পে আরও ছিলেন সোনিয়া।

Advertisement

ছবিটির গল্প ও নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি এর গানগুলোও ছিল তুমুল জনপ্রিয়। তার মধ্যে ‘এইদিন সেইদিন কোনোদিন’, ‘নীল সাগর পাড়ি দিয়ে’ গান দুটো ছিল সবার মুখে মুখে। ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ সিনেমাটি প্রথমে ১৯৯৫ সালের ১১ মে ঢাকার বাইরে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে দর্শকদের ব্যাপক চাহিদায় ঢাকাসহ সারাদেশে মুক্তি পায় এবং আলোড়ন তুলে।

এই ছবির পর আরও বেড়ে যায় সালমান-শাবনূর জুটির চাহিদা। তারাও বাড়িয়ে নেন নিজেদের পারিশ্রমিক। তখন থেকেই সালমান নিয়মিত ৮ লাখ টাকা করে নিতেন প্রতি ছবিতে। আর সালমান অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘সত্যের মৃত্যু নেই’-তে নিয়েছিলেন ১০ লাখ টাকা।

ছবিটিতে সালমানের নাম থাকে সুমন। শাবনূরের নাম সুমি ও সোনিয়া অভিনয় করেন ফারহা চরিত্রে। আরও ছিলেন রাজীব, প্রবীর মিত্র, আবুল হায়াত, দিলদার, ডলি জহুর, ব্ল্যাক আনোয়ার, সাঈদ আক্তার প্রমুখ।

সালমানের মৃত্যুর ২১ বছর পর অনেক ছবিই নির্মিত হয়েছে। হয়েছে সুপার ডুপার হিট। ‘মন মানে না’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘শ্বমুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘আম্মাজান’, ‘মনপুরা’, ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘লাভ ম্যারেজ’, ‘কোটি টাকার কাবিন’, ‘চাচ্চু’, ‘অগ্নি’, ‘আয়নাবাজি’, ‘শিকারী’, ‘নবাব’ ইত্যাদি ছবির নাম আসবে সেইসব তালিকায়। কিন্তু পরিবর্তন আসেনি সর্বোচ্চ আয় করা প্রথম তিনটি ছবির তালিকায়। এখনো প্রচলিত এবং সবার মুখে মুখে ফেরে সেরা তিন ছবি ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ও ‘সুজন সখী’র নাম।

Advertisement

যেহেতু সঠিক কোনো আয় ব্যায়ের ব্যবস্থা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নেই তাই হয়তো কোনো কোনো ছবির প্রযোজকরা দাবি করতেই পারেন যে তাদের ছবিও ২০-২৫ কোটি টাকা আয় করেছে। কিন্তু ওই তিনটি ছবির সময়টাকে মাথায় নিলে এটা মেনে নিতে কোনো সন্দেহ থাকে না যে তাদের আয় ওই তিন ছবিকে পেছনে ফেলতে পারেনি।

কেননা, স্বপ্নের ঠিকানা ছবিটি ১৯৯৫ সালে ১৯ কোটি টাকা আয় করেছিলো। এই ১৯ কোটি টাকার মূল্য বর্তমান আর্থিক মূল্যে যা দাঁড়াবে সেই পরিমাণ আয়ের ধারে কাছে নেই কোনো ছবি সেটা অনায়াসেই বলে দেয়া যায়।

তাই ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ ছবির পর ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আয় করা দ্বিতীয় ছবি হিসেবেই বিবেচিত হয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে। ছবির নায়ক হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থান দখল করে রেখেছেন সালমান শাহ। তার জনপ্রিয়তা আজও কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেননি।

এলএ