ঢাকাই ছবির রাজপুত্র বলা চলে সালমান শাহকে। তিনি নেই ২১ বছর পূর্তি হলো আজ। অথচ একবিন্দু কমেনি তার জনপ্রিয়তা ও আবেদন। বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আরও অনেক বেশি রঙিন হয়েছে তাকে নিয়ে ভালোবাসার রঙ। এখনো কোনো সিনেমা হলে সালমান শাহের ছবি মুক্তি পেলে সেখানে ভিড় জমে দর্শকের। কেউ কেউ বলে থাকেন, সালমানের মতো জনপ্রিয় নায়ক হয়তো আর কখনোই কোনোদিন জন্মাবে এই না এই ইন্ডাস্ট্রিতে।
Advertisement
প্রিয় এই নায়কের সবকিছু জানতে চান ভক্তরা। কেমন ছিলো তার লাইফস্টাইল, জীবন দর্শন, মানসিকতা, ব্যবহার? দিনে দিনে অনেক কিছুই জানা হয়ে গেছে। তবে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন নামের যুবকের নাম কেমন করে সালমান শাহ হয়ে গেল সেই গল্পটি অনেকেরই জানা নেই। এবার সেই গল্পটা জানালেন সালমানের স্ত্রী সামিরা।
সম্প্রতি জাগো নিউজকে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাতকারে সামিরা জানান, ‘ইমনের সঙ্গে পরিচিত হবার পর থেকেই দেখেছি শোবিজে কাজ করা নিয়ে ওর অনেক আগ্রহ। ওর নানা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’র একজন অভিনেতা। তার মায়ের মধ্যেও গান ও অভিনয়ের প্রতি দুর্বলতা আছে। ইমনের বাবা ও মা আলমগীর কুমকুমের পরিচালনায় একটি ছবিতে নায়ক-নায়িকা হিসেবে অভিনয়ও করেছিলেন। কিন্তু পরিচালকের অকাল মৃত্যুতে সেই ছবিটি আর মুক্তি পায়নি। বলা চলে শোবিজে কাজ করার নেশাটা ইমনের রক্তেই ছিলো। আমিও ওর এই আগ্রহটাকে সম্মান করতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর আমাদের বিয়ে হয়। কিন্তু ইমনের নাম বদলের সময় তখনো বিয়ে হয়নি আমাদের। প্রেমের উত্তাল দিনগুলো পার করছি। খুব সম্ভবত জুলাইয়ের শেষদিকের কথা। একদিন ইমন এসে বললো সিনেমার প্রস্তাব এসেছে। নামটাকে বদলে নেয়া প্রয়োজন। সিনেমায় অভিনয়শিল্পীদের নামকে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়। অনেক নায়ক-নায়িকাই পারিবারিক নামের বাইরে গিয়ে অন্য নামে পরিচিতি পেয়েছেন। ইমনেরও নাম বদল করতে বলেছিলেন প্রযোজক ও পরিচালক। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত সিনেমার পরিচালকরাই নাম রেখে থাকেন। তবে ইমন আমার কাছে ছুটে এসেছিলো কারণ সে আমাকে খুবই গুরুত্ব দিতো। আমাকে সে সবকিছুর ভাগ দিতো। সেই আনন্দই হোক কিংবা বেদনার।
Advertisement
দুজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম সালমান নাম রাখার। বলিউডে তখন সালমান খান খুব জনপ্রিয়। নতুন আসা এই নায়ক যুবক-যুবতীদের স্বপ্নের মানুষে পরিণত হয়েছেন। সেই নাম থেকেই নেয়া হলো সালমান। এই নামটি সহজেই দর্শকের মনে জায়গা পাবে বলে ধারণা ছিলো আমাদের।’
সামিরা বলেন, ‘সালমান ঠিক করার পর আমি বললাম, নিজের নামেরও কিছুটা অংশ থাকা উচিত। তাই শাহরিয়ারের ‘শাহ’ নামের শেষে রাখতে বললাম। সে খুবই খুশি হলো। এভাবেই ইমন হয়ে গেল সালমান শাহ। ৯২ সালের আগস্টে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয় ইমন। মৌসুমীর বিপরীতে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিলো পরের বছরের ১০ মার্চ। ইমনের সাবলীল অভিনয় অনায়াসেই দর্শকের মনে দাগ কেটে গেল।’
সামিরা জানান, প্রথম ছবিতে সালমান শাহ পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়েছিলেন ২৫ হাজার টাকা। তখনও কেউ ভাবতে পারেনি ইমন থেকে সালমান হওয়া এই নায়ক এভাবে দেশ কাঁপিয়ে দেবেন জনপ্রিয়তা দিয়ে। এভাবে অতৃপ্তির সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে যাবেন ঢাকাই ছবির জগত ও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের।
যেখানেই থাকুন, অদেখা ভুবনে ভালো থাকুন কোটি মানুষের প্রিয় মানুষ সালমান শাহ। তার আত্মার শান্তি কামনায় কোটি হৃদয় প্রার্থনারত।
Advertisement
এলএ