মতামত

হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনুন

রাজধানী ঢাকা দিন দিন বাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এটা খুই উদ্বেগের বিষয়। অবস্থার উন্নতি হবে তো দূরের কথা দিন দিন যেন আরো অবনতির চূড়ান্তের দিকে যাচ্ছে। যানজট, শব্দ দূষণ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, নদী-খাল দখল, ফুটপাত না থাকা, পার্কিং নিয়ে অব্যস্থাপনাসহ নানাবিধ কারণে বিশিষ্টতা হারাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না।

Advertisement

একটি দেশকে যদি মানব শরীরের সাথে তুলনা করা যায় তাহলে তার মুখ হচ্ছে রাজধানী। রবীণ্দ্রনাথের ভাষায়- শরীরের সমস্ত মাংসপিণ্ড মুখে চলে আসার নাম স্বাস্থ্য নয়। এসবের মূল কথা হচ্ছে মুখই বলে দেয় সার্বিক অবস্থার কথা। রাজধানী শহর যদি অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠে, নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে সেই দেশের অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়। দুঃখজনক হচ্ছে, আমরা এমন একটি বাস্তবতার মধ্যে রয়েছি যেখানে রাজধানী ঢাকার অবস্থা নানাদিক থেকেই সঙ্গীন। রাজধানী জুড়ে পরিকল্পনাহীনতার ছাপ।

বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। দখল-দূষণে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর করুণ অবস্থা। এছাড়া যানজট, যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ট্যানারি বর্জ্য, খাদ্যে ভেজাল, সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিন্মমানও ঢাকার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যুজ্ব এ শহরে নেই পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ রাজধানী ঢাকাই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র।

দেশের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি মানুষ এখন শহরে বাস করছে। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। বস্তুত এ শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যত্রতত্র যে যেখানে পারছে, যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এক জগাখিচুরি অবস্থায় রাজধানীবাসী এখানে বাস করছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ নগরী যেন নরকতুল্য। খেলার মাঠ নেই, নেই জলাশয়। সবুজ গাছগাছালির দেখা মেলাও ভার। অথচ ঢাকার রয়েছে চারশ বছরেরও বেশি সময়ের ঐতিহ্য। ঢাকা শুধু একটি শহর নয় এর রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। হারিয়ে যাওয়া সেসব সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। ঢাকাকে বাস উপযোগী নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

Advertisement

এইচআর/আইআই