দিনের খেলা শেষ হয়েছে সবে, দর্শক-সমর্থকরা একে একে নিজ নিজ গন্তব্যের পথে। মিডিয়া সেন্টার থেকে প্রেস কনফারেন্স রুমে নামার পথে বিসিবি মিডিয়া ক্রু সালাউদ্দীনের আফসোস মাখানো উচ্চারণ, ‘ইস! আর ৬০-৭০ রান যদি বেশি হতো। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার যে দুবার আউট হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন মুমিনুল আর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম যদি সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারতেন, তাহলে দিন শেষে অবস্থা আরও ভালো হতে পারত আমাদের।’
Advertisement
কথাটা বিসিবি মিডিয়া ক্রু সালাউদ্দীনের একার নয়। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থক- সবার কণ্ঠেই খানিক আফসোস। শুধু ভক্তদের কথা বলা কেন, বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য নাসির হোসেনও মনে করেন, তার দল যে জায়গায় দিন শেষ করেছে তার চেয়ে আরও মজবুত অবস্থানে থেকে শেষ করতে পারত।
সে কারণেই বলা, আজ মঙ্গলবার আশা ভঙ্গের বেদনা গ্রাস না করলেও খানিক আফসোস ও অনুশোচনার একটি দিন। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের অলরাউন্ডার নাসির হোসেনের মুখেও প্রায় একই কথা।
নাসিরও মানছেন, ‘অজি ওপেনার ওয়ার্নারের ক্যাচ ধরতে পারলে আর স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে দৃশ্যপট অন্যরকম হতে পারত।’
Advertisement
সেটাই শেষ নয়। নাসিরও মানছেন, বাংলাদেশের রান আরও ১০০ থেকে ১৫০ কম হয়েছে। স্কোর লাইন ৪০০ থেকে ৪৫০ হলে ভালো হতো। দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাই প্রথম প্রশ্ন উঠল, ‘আচ্ছা ওয়ার্নারের ক্যাচ ও স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে অবস্থা কেমন দাড়াত?’
নাসিরের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘ধরতে পারলে দিন শেষে অবশ্যই ব্যাপারটা অন্য রকম হতো। ওদের তিন উইকেট পড়ে যেত।’
স্কোরটা কি কম হয়েছে? নাসিরের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমরা ১০০ থেকে ১৫০ রান কম করে ফেলেছি। যে রকম উইকেট, তাতে আমার মনে হয় আমাদের অন্তত ৪০০ থেকে ৪৫০ রান করা উচিত ছিল।’
এটাই শেষ নয়। নাসির মানছেন, তার দল এখন কিছুটা ব্যাকফুটে। তাই বলে হাল ছাড়তে নারাজ তারা। এ কারণেই মুখে এমন কথা, ‘আমরা একটু ব্যাকফুটে আছি; কিন্তু এটাও সত্য যে, এখনো ৮০ রানে এগিয়েও আছি। ক্রিকেট এমন এক খেলা, এখানে আপনি কিছুই নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। টেস্টে এক-দেড় ঘণ্টায় অনেক কিছু বদলে যায়। বোলাররাও খারাপ করেনি। খুব ভালো করে লক্ষ্য করুন, ওয়ার্নার এতো ধীরে ব্যাটিং করে না; কিন্তু আজ করেছে। তার মানে আমরা বোলিং ভালো করেছি। শুধু উইকেট পড়েনি। যে কোনো মুহূর্তে খেলা বদলে যেতে পারে।’
Advertisement
নাসিরের অনুমান, কালই রেজাল্ট হবে না; খেলা পাঁচদিনে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্য রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা করছি না। আমাদের পক্ষে যা যা করা দরকার, আমরা তা নিয়েই ভাবছি।’
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, দ্বিতীয় দিন শেষেও মুশফিকের দল ৮০ রানে এগিয়ে। অজিদের হাতে আছে ৮ উইকেট। ক্রিজে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর মিডল অর্ডার পিটার হ্যান্ডসকম্ব। দুই দুইবার আউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ওয়ার্নার ৮৮ আর পিটার হ্যান্ডসকম ৬৯ রানে ক্রিজে। পরপর দুটি বড় জুটিতে দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ২ উইকেটে ২২৫। ওয়ার্নার-হ্যান্ডসকম্ব ১২৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিই আশা জোগাচ্ছে অসিদের।
দিন শেষে টানা দ্বিতীয় শতরানের স্বপ্ন দেখা ওয়ার্নার অর্ধশতক পূর্ণ হওয়ার পরপরই সাজঘরে ফেরত যাচ্ছিলেন। ৫২ রানে তাইজুলের বলে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন এ বাঁ-হাতি। ক্লোজইনে দাঁড়ানো মমিনুল তা ধরতে পারেননি।
এরপর ৭৩ রানের আবার জীবন ফিরে পাওয়া। এবার অফ স্পিনার মিরাজের বলে দু’পা বেরিয়ে মারতে গিয়ে পরিষ্কার পরাস্ত হয়েছিলেন ওয়ার্নার; কিন্তু বল তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে উইকেটের পিছনে গেলেও মুশফিক তা গ্লাভসবন্দি করে বেলস তুলতে পারেননি। মুশফিক বলই ধরতে পারেননি। বল গিয়ে তার প্যাডে আঘাত হানে।
দিন শেষে এ দুটি আউটের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ঘটনাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ওয়ার্নার ৫২‘তে ফিরে গেলে নিশ্চিত করেই বলা যায় অসিরা এত মজবুত অবস্থানে থাকতে পারত না। তখন আর তার সাথে হ্যান্ডসকম্বের ১২৭ রানের জুটিও গড়ে উঠত না।
এআরবি/আইএইচএস/এমএস