খেলাধুলা

প্রথম দিন শেষে কোথায় দাঁড়িয়ে মুশফিকের দল?

‘চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে কোথায় দাঁড়িয়ে মুশফিক বাহিনী?’

Advertisement

বাংলাদেশ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান রুম্মন মনে করেন, দিন শেষে তারা ভাল জায়গায় দাঁড়িয়ে। তবে তার অনুভব ও উপলব্ধি, ‘আমি নটআউট থাকলে দল ভালো অবস্থানে থাকত। তারপরও আমরা ভালো অবস্থানে আছি। দিন শেষে ভালো খেলেছি, এটিই অর্জন আমাদের। হতে পারত যে, উইকেট কম পড়েছে বা রান বেশি হতে পারত। উইকেট এত সহজ নয়। আমরা শেষ পর্যন্ত খেলেছি। ৬ উইকেট পড়েছে, মুশফিক ভাই আছে, নাসির আছে। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। দিনটা ভালো গেছে। দ্বিতীয় দিনে ভাল খেলার চেষ্টা করব।’

সোমবার প্রথম দিনের খেলা শেষে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে এসে এমন মূল্যায়নই সাব্বিরের। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার নাথান লিওন মনে করেন, ‘প্রথম দিন শেষে দুই দল সমান সমান।’

এদিকে ম্যাচে স্বাগতিক দলের প্রকৃত অবস্থান জানতে হলে উইকেটের চরিত্র ও আচরণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা প্রয়োজন। উইকেট মিরপুরের মত হলে এখনই বলা যেত, সত্যিই মুশফিক বাহিনী সুবিধাজনক জায়গায়।

Advertisement

প্রথম সেশনে অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনার নাথান লিওনের বোলিং দেখে আর চা বিরতির আগে ১১৭ রানে ইনিংসের প্রথম অর্ধেক শেষ হবার পর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচকেও তেমনই মনে হচ্ছিল।

কিন্তু প্রথম দিনের খেলা শেষে যে দু’জন কথা বললেন, সেই সাব্বির রহমান ও নাথান লিওনের কেউ কিন্তু পিচকে টার্নিং বলেননি। সাব্বির একবারের জন্য বলেননি, উইকেটে টার্ন আছে। বল ঘুরছে। শুধু বলেছেন, ‘উইকেট এত সহজ নয়।’

যা বলার বলেছেন অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনার নাথান লিওন। প্রথম দিন বাংলাদেশের ছয় উইকেটের পাঁচটি নিজের পকেটে পুরলেও দিন শেষে লিওন মনে করেন না বল ঘুরছে। জহুর আহমেদ চৌধুরীর পিচকে টার্নিং মানতে নারাজ তিনি।

তার ব্যাখ্যা, ‘উইকেটে টার্ন নেই। সারা দিনে আমি যে ২৮ ওভার বল করেছি, তার মধ্যে হয়ত একটি মাত্র বল স্পিন নিয়েছে।’

Advertisement

উইকেটের চরিত্র ও আচরণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে লায়ন বলেন, ‘সকালের দিকে মনে হচ্ছিল উইকেট বুঝি ভাঙ্গবে। ক্ষত তৈরি হবে; কিন্তু তা হয়নি।’

লিওন আরও একটি মন্তব্য করেছেন। যা শুনলে পরিষ্কার হয়ে যাবে আসলে প্রথম তিন উইকেটের আচরণ কেমন ছিল? ‘আমি যে চারটি উইকেট পেয়েছি, তার একটিও টার্ন করেনি। আমি ইচ্ছে করেই সোজা ডেলিভারি ছুঁড়েছি। সাফল্যও পেয়েছি।’ লিওনের শেষ কথা, ‘উইকেট এমন থাকলে মানে স্পিন কম হলে আমাদের স্পিনারদের জন্য বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হবে।’ নাথান লিওনের শেষ লাইনেই আছে ম্যাচের পূর্বাভাষ ও উইকেট সম্পর্কে সত্যিকার মূল্যায়ন।

কাজেই খালি চোখে বাংলাদেশের অবস্থানকে বেশ মজবুত মনে হলেও আসলে ততটা নয়। কারণ, এখন পর্যন্ত উইকেটে টার্ন খুব কম। এখানে ঢাকার মত ৩০০‘র নিচে রান করে লিড পাওয়া হবে কঠিন।

কাজেই এখন বাংলাদেশের অবস্থা মজবুত করার একটাই পথ- আগামীকাল দ্বিতীয় দিন স্কোর লাইনকে যতটা সম্ভব বড় করা। যতক্ষণ সম্ভব ক্রিজে কাটিয়ে দেয়া।

সাব্বির রহমানের কাছে কয়েক দফা প্রশ্ন করা হলো, ‘এ উইকেটে কত রান নিরাপদ বা লড়াকু হবে? সাব্বিরের একটাই জবাব, ‘এই উইকেটে কত রান নিরাপদ, এটা আমি বলতে পারব না। যতক্ষণ খেলা যায়, যতক্ষণ ১০ উইকেট না পড়ে, যতদূর নিতে পারি দলকে। সেটাই কল্যাণ।’

বাংলাদেশের জন্য আশার খবর, এখন ক্রিজে আছেন দুই ডান হাতি ব্যাটসম্যান মুশফিক ও নাসির। তাদের বিরুদ্ধে অসি অফ স্পিনার লায়নের রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে সোজা ডেলিভারি তত কার্যকর হবে না। তাদের ওই ফাঁদে ফেলার সুযোগ নেই। বাধ্য হয়েই লিওনকে লাইন ও কৌশল পাল্টাতে হবে।

এখনো স্বাগতিকদের হাতে চার উইকেট আছে। সবচেয়ে বড় কথা অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম একদম ওয়েল সেট। ধৈর্য্য, সংযম আর আস্থার মিশেলে সাড়ে তিন ঘন্টার বেশি (২২২ মিনিট) ক্রিজে কাটিয়ে ১৪৯ বলে ৬২ রানে নটআউট বাংলাদেশ অধিনায়ক। সাথে নাসির হোসেনও আস্থার সাথেই খেলছেন (৩৫ মিনিটে ৩৬ বল খেলে ১৯*)।

কৌশলগত কারণেই স্কোরলাইন বড় করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বেশি সময় উইকেটে পড়ে থাকার চেষ্টা করা উচিৎ। কারণ, আজ প্রথম দিন টার্ন না হলেও দ্বিতীয় দিন শেষ সেশন কিংবা তৃতীয় দিন উইকেটে ক্ষত তৈরি হতে পারে। আর তা হওয়া মানেই সাকিব, মিরাজ ও তাইজুলের ‘পোয়া বারো’।

যদিও তিনি বারবার বলেছেন প্রথম দিন উইকেটে বল একটুও ঘোরেনি; কিন্তু ৬৯ টেস্ট খেলা অভিজ্ঞ নাথান লিওন জানিয়ে দেন, ‘উপমহাদেশে আমি ৬ বার খেলতে এসেছি। তাতে একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি, এখানে সব উইকেটই সময় গড়ানোর সাথে সাথে ভাঙ্গতে থাকে। টার্নও হয়। আমি নিশ্চিত এখানেও (জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে) সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বলঘুরবে।’

এ কথা সত্য হলে বাংলাদেশের বাংলাদেশের করণীয় এখন দুটি। এক স্কোর লাইন যত সম্ভব বড় করা। আর যত দীর্ঘ সময় পারা যায়, ক্রিজে কাটিয়ে দেয়া। নাসির-মিরাজদের সাথে নিয়ে সে কাজটি পারবেন মুশফিক?

এআরবি/আইএইচএস/এমএস