ডান হাতি অফ স্পিনার নাথান লিওনের সাফল্য ও লম্বা স্পেলে বোলিংয়ের সময়ও পরপর পাঁচ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে ক্রিজে নামানো যে অনেক বড় টেকনিক্যাল ভুল ছিল, শেষ বিকেলে দুই ডানহাতি মুশফিকুর রহীম আর সাব্বির রহমান রুম্মন তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন।
Advertisement
প্রথম সেশনে লম্বা স্পেলে বল করে টাইগারদের চেপে ধরেছিলেন লিওন। তামিম, সৌম্য, ইমরুল, মমিনুল ও সাকিব- পাঁচ পাঁচজন বাঁ-হাতি পরপর ব্যাট করায় লিওনের এক চ্যানেলে বোলিং করা সহজ হয়ে যায়। সাফল্যও মেলে।
সাকিব ছাড়া বাকি চারজন আউট হন এ অফ স্পিনারের বলে। অতিকাকতালীয় ঘটনা হচ্ছে, সবাই লেগবিফোর। অফ মিডলে পিচ পড়ে ভিতরে বল আনছিলেন লিওন। তাতেই বাঁ-হাতি তামিম, ইমরুল, মুমিনুল ও সৌম্য আউট।
১১৭ রানে ইনিংসেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রথম অর্ধেক শেষ। শঙ্কা এসে বাসা বাধলো, অফ স্পিনার লিওন না আবার অস্বাভাবিক কিছু করে ফেলেন। আজই বুঝি প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যাবে টাইগারদের।
Advertisement
সে শঙ্কা কাটলো দুই ডানহাতি মুশফিক আর সাব্বিরের চওড়া ব্যাটে। বাঁ-হাতিদের বিপক্ষে একটা চ্যানেলে বল করে সাফল্য পাওয়া লিওন নিষ্ক্রিয় হলেন দুই ডান হাতি ক্রিজে আসার কিছুক্ষণ পরই। এরপর সারা দিনে আর ১১ ওভার বল করে আর একটি মাত্র উইকেট পেলেন এ অফস্পিনার।
মুমিনুল যখন আউট হন, তখন তার বোলিং ফিগার ছিল ১৫-৪-৩৫-৪। এরপর ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে উইকেট শূন্য তিনি। দুই ডানহাতি সাব্বির ও মুশফিকের দৃঢ়তায় লিওন অকার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসি বোলিংও হয়ে ওঠে নির্বিষ।
আর সেই ধারহীন বোলিংয়ের বিপক্ষে অনায়াসে সাবলীল ব্যাটিং করলেন অধিনায়ক মুশফিক আর চার নম্বর থেকে সাতে নেমে যাওয়া সাব্বির রহমান রুম্মন। সাব্বির খেললেন একদম নিজের মত। ঠিক একদিনের ক্রিকেটের মেজাজে ফ্রি স্ট্রোক প্লে না করেও স্বচ্ছন্দে খেলা যায়, তরতরিয়ে রানের চাকা সচল রাখাও যায়- সাব্বির তাই করে দেখালেন।
আর অধিনায়ক মুশফিক মনোযোগি থাকলেন একদিক আগলে রাখার দিকে। জুটি জমে উঠলো। এক সময় মনে হচ্ছিল এ জুটিই বুঝি দিন শেষ করবে।
Advertisement
কিন্তু তা আর হলো না। আস্থার প্রতিমূর্তি সাব্বির শেষ পর্যন্ত নাথান লিওনের বলেই আউট হলেন। তবে তাতে লিওনের কোনই ক্যারিশমা নেই। বল টার্নও করেনি। ব্যাটসম্যানকেও বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারেনি। লেগ মিডলে পড়া একটা আলগা ধরনের বল, সাব্বির পুল খেলতে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন। ব্যাটে-বলে হলো না। স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হতে হলো তাকে। আম্পায়ার আউট দিলেও রেফারেল নিলেন ব্যাটসম্যান।
কয়েক বার দেখা হলো। একেক এঙ্গেলে একেক রকম মনে হলো। একবার মনে হলো তার পিছনের পা ক্রিজের একটু ভিতরে আছে। আরেক এঙ্গেলে দেখা গেল, পা লাইনের ওপরে। লাইনের ওপরে থাকায় থার্ড আম্পায়ার আলিম দার আউট দিলেন। ১১৩ বলে ছয় বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় সাজানো ৬৬ রানের ইনিংস শেষে সাব্বির যখন সাজঘরে পা রাখলেন, তখন ভাঙ্গল ১০৫ রানের জুটি। ততক্ষণে শুরুর ধাক্কা ভালমতই সামলে নেয়া হয়ে গেছে। রানও ২০০ পেরিয়ে ২২২।
কলম্বোর পি সারা ওভালে শততম টেস্টের পর ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলায় চার নম্বরে ব্যাট করেছিলেন সাব্বির রহমান। এ টেস্টে মমিনুল হকের অন্তণর্ভূক্তিতে ব্যাটিং পজিশন হাতছাড়া হলো রাজশাহীর এ ডানহাতি মিডল অর্ডারের। তাতে তার নিজের ক্ষতি হয়নি। বরং লাভই হয়েছে। রান পেয়েছেন তিনি। তবে দলের লাভ হয়নি মোটেও।
আজকের খেলার যা অবস্থা ছিল, তাতে সাব্বির চারে খেললে নির্ঘাত বাংলাদেশের ভাল হতো। প্রথম সেশনে শুধু বাঁ-হাতিদের পেয়ে লিওন যেভাবে চেপে ধরেছিলেন, সেই সময় ডানহাতি সাব্বির বা মুশফিক থাকলে হয়ত শুরুতে এমন বিপর্যয়ে পড়তে হতো না।
সাব্বির আউট হবার পর আবার দুই ডানহাতি মুশফিক-নাসিরের জুটি। তারাও ৩০ মিনিট অবিচ্ছিন্নভাবে উইকেটে কাটিয়ে দিলেন। অধিনায়ক মুশফিক দলনেতার মত সব দায় দায়িত্ব নিয়ে দিন শেষে ৬২ (১৪৯ বল) নটআউট। আর নাসির অপরাজিত (১৯, ৩৩ বলে)। শেষ পর্যন্ত তিন ডানহাতিই হলো বাংলাদেশের রক্ষাকবচ। দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৬ উইকেটে ২৫৩।
এআরবি/আইএইচএস/পিআর