খেলাধুলা

৭৯ বছর পর টেস্টে স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু অস্ট্রেলিয়ার

সময়ে কত কিছুই না বদলে যায়! এক সময় যে অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলাররা ছিলেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক, যে দল ঘরের মাঠেতো বটেই দেশের বাইরে গিয়েও ফাস্ট বোলিং দিয়ে অনেক বড় বড় দলের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে। স্লো, লো আর টার্নিং উইকেট যেমনই থাকুক, অস্ট্রেলিয়ানরা ফাস্ট আর মিডিয়াম পেস বোলিং দিয়েই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চায়। করেছেও। কিন্তু এবার বাংলাদেশে এসে সেই অজিরা দীর্ঘ দিনের রণকৌশল বদলে ফেলেছে।

Advertisement

বদলে ফেলেছে বলা বোধ হয় যুক্তিযুক্ত হল না। বদলাতে বাধ্য হয়েছে বলাই ঠিক হবে। কারণ মিরপুরের শেরেবাংলায় তিন পেসার ফর্মুলা কাজে না দেয়ায় চট্টগ্রামে কার্যত এক ফাস্ট বোলার (প্যাট কামিন্সকে) নিয়ে মাঠে নেমেছে স্মিথের দল। সঙ্গে মিডিয়াম পেসার হিল্টন কার্টরাইট। এটাই মূল কথা নয়। আসল কথা হলো অস্ট্রেলিয়ানরা তাদের দীর্ঘ ৭৯ বছরের ইতিহাস বদলে এই প্রথম এক প্রান্তে স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু করলো।

প্যাভিলিয়ন প্রান্তে কামিন্সের সঙ্গে মিডিয়া সেন্টার প্রান্ত দিয়ে নতুন বলে বোলিং শুরু করলেন অফস্পিনার ন্যাথান লিওন। এ সময় টিভি ধারাভাষ্যকাররা বলে উঠলেন এ কি দেখছি! কোন টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া বোলিং শুরু করলো এক প্রান্তে স্পিন দিয়ে? এ যে বিরল দৃশ্য। শেষ কে কবে দেখেছে? পরে সে ধারাভাষ্যকারই জানিয়ে দিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে হয়তো হয়েছে। কিন্তু একটা টেস্টে এক দিকে ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স নতুন বলে প্রথম ওভার করার পর অপর প্রান্তে দ্বিতীয় ওভারে একজন অফস্পিনার নতুন বলে বল করলেন ৭৯ বছর পর।

১৯৩৮ সালে বিল ও রেইলি শেষবার ম্যাচে উদ্বোধনী বোলারের ভূমিকায় ছিলেন। দীর্ঘ দিন পর আবার আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্সের সঙ্গে টেস্টের দ্বিতীয় ওভার বল করলেন অফস্পিনার ন্যাথান লিওন।

Advertisement

সত্যিই এ এক বিরল দৃশ্য! যে দৃশ্য দেখে নিশ্চয়ই ৭০, ৮০ ও ৯০ দশকে ক্রিকেট অনুরাগিরা অবাক হচ্ছেন। আর ভাবছেন এও কী সম্ভব? এ কী সেই অস্ট্রেলিয়া, যারা শুধু ফাস্ট বোলারের দাপটেই বহু দলকে হারিয়েছে। সেই দল এবার বাংলাদেশে এসে স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু করলো?

বলার অপেক্ষা রাখে না উইকেটের চরিত্র দেখে, বুঝে দীর্ঘ দিনের রণকৌশল পাল্টে এক প্রান্তে স্পিন দিয়ে বোলিং শুরুর সিদ্ধান্ত অসিদের। এটাই শেষ নয়। আরও আছে। বাংলাদেশের মত অস্ট্রেলিয়াও দল সাজিয়েছে তিন স্পিনার দিয়ে। অফস্পিনার লিওন আর অ্যাগারের সঙ্গে ১১ জনে এসেছেন আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার স্টিভ ও'কিফ। বাংলাদেশে এসে সেই অজিদের তিন স্পিনার নিয়ে খেলতে নামা, এটাও একটা ইতিহাস। এর আগে ১৯৭৮ সালে তুখোর ফাস্ট বোলার জিয়ফ থমসনের সঙ্গে তিন স্পিনার খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে।

এ উপমহাদেশে যেমন ভারত ও পাকিস্তানের আপেল প্রসিদ্ধ তেমনি ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায় তাসমানিয়ার আপেলের রয়েছে অন্যরকম সুখ্যাতি। শুধু খেতে সুস্বাদু বলেই নয়, তাসমানিয়ায় আপেল হয়ও প্রচুর। এক সময় ক্রিকেট দুনিয়ায় একটা কথা প্রচলিত ছিল, ‘তাসমানিয়ায় যেমন আপেল এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে, ঠিক তেমনি গণ্ডায় গণ্ডায় ফাস্ট বোলারও হয়। শুধু যে তাসমানিয়ায়ই ফাস্ট বালার তৈরির সুতিকাগার, তা নয়। অস্ট্রেলিয়ায় ফাস্টবোলার জন্ম নেবার রেকর্ড বেশি।’

এক সময় ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে ফাস্ট বোলার উঠে এসেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে। ১৯৬০ থেকে ৯০'র দশকে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের পর ফাস্ট বোলারের জন্ম হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতেই বেশি। ডেনিস লিলি, জিয়ফ থমসন, প্যাসকো, কার্ল র্যা কেম্যান, রডনি হগ, জিয়ফ লসন, টেরি অল্ডারম্যান, ক্রেইগ ম্যাকডরমেট, ব্রস রিড, গ্লেন ম্যাকগ্রাথ, জেসন গিলেস্পি, ব্রেট লি আর মিচেল জনসনরা নিজ নিজ সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে নিজেদের করেছিলেন সু প্রতিষ্ঠিত। বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা তাদের বল খেলতে ঘেমে নেয়ে উঠতেন। সেই দল এবার বাংলাদেশে এসে পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে স্বাগতিকদের মত তিন স্পিনার নিয়ে মাঠে নামলো।

Advertisement

এআরবি/এমআর/জেআইএম