মতামত

বৃদ্ধাশ্রমের মানুষের জীবনে উৎসব

পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হল। কিন্তু এই উৎসব আনন্দে সবাই কি সমানভাবে যোগ দিতে পেরেছেন? সবার জীবনে কি এসেছে উৎসব? যে পিতা-মাতা এক সময় সন্তানের ভরসাস্থল সেই পিতামাতাকেই কিনা বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এও এক নিষ্ঠুর অমানবিক বাস্তবতা। বিশেষ করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যেখানে পিতা-মাতা ভাইবোন সন্তানসন্তুতি মিলে যৌথ পরিবারে সবাই মিলে মিশে বাস করে সেখানে পিতামাতাকে বয়স হলেই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হবে-এ কেমন কথা! মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে পিতা মাতা সন্তানদের মানুষ করেন তারাই কিনা বড় হয়ে পিতামাতাকে ছুঁড়ে ফেলেন। নিরুপদ্রব এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের আশায়। তখন এসব পিতামাতার দুঃখের কোনো অন্ত থাকে না। বিশেষ করে উৎসবের দিনগুলোতে তারা অপেক্ষায় থাকেন স্বজনের।

Advertisement

বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ (বৃদ্ধাশ্রম) বেসরকারি পর্যায়েও রয়েছে বৃদ্ধাশ্রম। সাধারণ দরিদ্র পরিবারের বয়স্করা যেমন আছেন এসব বৃদ্ধাশ্রমে তেমনি ধনাঢ্য পরিবারের অনেক প্রবীণ ব্যক্তিরাও আছেন। কিন্তু সবার অবস্থা আজ এক। সবাই অসহায়। বয়সের ভারে ন্যুজ্ব। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে একদিন সবাই বৃদ্ধ হবেন। আজ যে টগবগে তরুণ বয়সের ভারে সেও এক সময় ন্যুজ্ব হবে। কিন্তু নির্মম পরিহাস হচ্ছে এই কথাটি কেউ মনে রাখে না। আজ বৃদ্ধ পিতামাতাকে যে সন্তান বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে কাল সেও যে তার সন্তান দ্বারা একই আচরণের শিকার হবে না তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে।

প্রবীণরা তাদের সমগ্র কর্মময় জীবন নিজ নিজ পরিবার গঠনে ও উন্নয়নে এবং সমাজ জাতির সার্বিক কল্যাণে ব্যয় করে বার্ধক্যে উপনীত হন। কিন্তু এই সমাজ তাদের কথা মনে রাখে না। ফলে শেষ বয়সে তাদের আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। স্বাভাবিক নিয়মেই সন্তান সন্ততিরা তাদের পিতামাতার ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করার কথা। বাঙালি একান্নবর্তী পরিবারের সংস্কৃতি এটাই। কিন্তু সময়ের অভিঘাতে পাল্টে যাচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে মূল্যবোধও।

নানা বাস্তবিক কারণে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। তাই পিতামাতার স্থান হচ্ছে না সেখানে। অনেক পরিবারেই পিতামাতার ভরণ পোষণকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া বিবাদ লেগেই আছে। এ কারণেই ঝুট-ঝামেলা এড়াতে পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাদের জীবন কিভাবে কাটে সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়াটাও অনেকে প্রয়োজন মনে করে না। এই নিষ্ঠুর অমানবিকতা মনুষ্যত্বের পরিচয় বহন করে না।

Advertisement

এছাড়া আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধও তা সমর্থন করে না। এমনকি ঈদ কিংবা অন্যান্য বিশেষ দিনেও যদি পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কোনো খোঁজ নেয়া না হয় এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারেরও কি করণীয় কিছু নেই? সিনিয়র সিটিজেনদের অধিকার রক্ষায় সরকারি তৎপরতা বাড়াতে হবে। এছাড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সমাজে ধর্মীয় অনুশাসন এবং নৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধের অনুশীলন এক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য। সমাজের একজন প্রবীণও যেন অবহেলা অনাদরে জীবন যাপন না করে সেটি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহায় মনুষ্যত্ব বোধের উন্মেষ ঘটবে-এটাই প্রত্যাশা।

এইচআর/জেআইএম