জীবনে প্রথম কোনো ঈদ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাটাল বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামণি। সেই সঙ্গে হাসপাতালে ঈদ কাটল তার পরিবারেরও। ঈদে বাসায় যেতে ইচ্ছেও হয়েছিল মুক্তামণির। কিন্তু চিকিৎসার কারণে আর যাওয়া হয়নি।
Advertisement
এবারের ঈদটি হাসপাতালে কাটলেও মুক্তার বাবা ইব্রাহিম বলছেন, মেয়ের সুস্থতায় ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দিত হবেন তিনি।
শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে মুক্তামণি। মা আসমা খাতুন তার ছোট ছেলে কোলে নিয়ে পাশে বসে রয়েছেন।
মুক্তা এখন কেমন আছে জানতে চাইলে মা আসমা খাতুন বলেন, এখন ভাল আছে।
Advertisement
তবে ঈদটা হাসপাতালে কাটাতে হলো বলে নিজের খারাপ লাগার কথাও জুড়ে দিলেন তিনি।
ঠিক তখনই বাইরে থেকে হাসপাতালে ফিরলেন মুক্তার বাবা ইব্রাহিম ও জমজ বোন হিরামনি। ইব্রাহিম বলেন, ‘ঈদ হাসপাতালে কাটাচ্ছি এতে কষ্ট নাই।’
‘এরকম কতো ঈদ জীবনে আসবে আর যাবে। কিন্তু মেয়ে যদি সুস্থ না হয়, হাঁটা-চলাফেরা করতে না পারে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারে তবে কষ্টের শেষ আর থাকে না।’
মেয়ে সুস্থ হবেন এমন আশাতেই বুক বেঁধে আছেন তিনি। ঈদের পর আবার অস্ত্রোপচার (অপারেশন) হবে মুক্তার। চিকিৎসকরা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়াও চাইলেন ইব্রাহিম।
Advertisement
তবে মুক্তার জমজ বোন হিরামণির কণ্ঠে অন্য সুর। বাড়ির চেয়ে হাসপাতালেই তার ঈদ ভালো কেটেছে।
তার কারণও অবশ্য সেই মুক্তাকে ঘিরেই। হিরামণির ভাষায়, ‘হাতটা বেশি মোটা থাকার কারণে বাড়িতে ঈদের নতুন জামা গায়ে দিতে পারতো না মুক্তা। কিন্তু এখানে ডাক্তাররা নতুন জামা দিয়েছে। সে জামা গায়েও পড়েছে মুক্তা। তা দেখে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।’
ডাক্তার সামন্ত লাল সেন ও নার্সরা আসার আগেই ঘুম থেকে ওঠে মুক্তামণি। কেমন আছে জানতে চাইলে জানায়, ‘ভাল আছি’।
শুরুর দিকে অবশ্য মুক্তা কয়েকবার গ্রামের বাড়িতে ঈদ করার কথা বলেছিল। তবে এখন আর সেসব কিছু বলে না সে। বরং চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে এখন বদ্ধপরিকর সে। হাত না সেরে ওঠা পর্যন্ত বাড়ি যাবে না বলে জানিয়েছেন মুক্তার বাবা ইব্রাহীমও।
তবে বিছানায় শুয়ে থাকতে মোটেও ভালো লাগছে না মুক্তার। এই ঈদটি হাসপাতালে কেটে গেলেও মুক্তা জানে আরও তো ঈদ আসবে। এটাই তো আর শেষ ঈদ না। হাত সেরে গেলে বাসায় ঈদ করতে পারবে সে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জাগো নিউজকে বলেন, মুক্তামণি মানসিকভাবে খুবই শক্ত মেয়ে। ওর কথা আমাদের অবাক করে দিচ্ছে। আসলে আমরাই পারি মুক্তার মতো মেয়েকে সুস্থ করতে। মানসিকভাবে শক্ত রাখতে। ডাক্তাররা যদি নিয়মিত রোগীদের খোঁজখবর রাখে, জানতে চায়, ‘কেমন আছেন, ভাল আছেন তো!’ তাহলে রোগী ও রোগীর স্বজনরা মানসিক শক্তি পায়। সুস্থ হওয়ার বল পায়।
গত সপ্তাহে মুক্তার দ্বিতীয় দফার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। তবে জ্বর আসায় অপারেশন স্থগিত করা হয়। পরে মুক্তাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। মুক্তার জ্বর ভালো হলে ঈদের পর মেডিকেল বোর্ড বসে সবার মতামতের ভিত্তিতে বাকি অপারেশন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন।
প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ৯ জুলাই জাগো নিউজে ‘লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর মুক্তার চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন।
গত ১২ আগস্ট প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয় মুক্তামণির।
জেইউ/এনএফ/পিআর