জাতীয়

কোরবানির পশু বাড়ি পৌঁছে দিতে মৌসুমী ‘কামলা’

শহুরে লোকজন বছরে একবার কোরবানির পশু কেনেন। এসব পশু আয়ত্বে রাখার মতো কৌশল ও সাহস অনেকেরই নেই। এজন্য আলাদা লোক রাখতে হয়ে তাদের। আর এই সুযোগে রাজধানীতে জড়ো হন শত শত কর্মী। যারা কোরবানির গরু, মহিষ বিশেষ কায়দায় বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া ছাড়াও দেখভাল করে থাকেন। এতে শহুরে লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, আর বাড়তি আয় হয় মৌসুমী ‘কামলাদের’।

Advertisement

এ সময় শুধু গ্রাম থেকে আসেন না তারা, রাজধানীর অনেক রিকশাচালক ও অন্যান্য ছোট-খাট পেশার লোকও এই কাজে নেমে পড়েন। রাজধানীর বিভিন্ন হাট থেকে কেনা গরু বাসায় বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য অনেক কিশোরও কাজ করছেন। ক্রেতা পেলেই তারা পিছু নিচ্ছেন। আর গরু কেনার পর কে আগে রশি ধরবেন তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ছেন। আর এসব করছেন হইহুল্লোড় ও আনন্দ উল্লাস করে।

রাজধানীর আবতাব নগরে কথা হয় এমন কয়েকজনের সঙ্গে। জামালপুরের মেলান্দহ থেকে আসা ২৮ বছরের কবির ফকির জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা শহরে আমি রিকশা চালাই। আর কোরবানির ঈদের কয়েকদিন হাট থেকে কেনা গরু বাসায় বাসায় দিয়ে আসি। আবতাফ নগর থেকে বসুন্ধরায় একটি গরু দিয়ে এলাম। দুজনে গিয়েছিলাম। মালিক আমাদের পাঁচশ টাকা দিল।

সুদূর রংপুর থেকে একদল দিনমজুর এসেছেন আফতাব নগর পশুর হাটে। করিম, মমিনুল হক, মান্নান, জহিরুল নামের ওই চারজন দিনমজুর সেখানেই থাকেন। কিন্তু কোরবানির ঈদ এলেই তারা ঢাকায় ছুটে আসেন।

Advertisement

সিলেট থেকে আসা একদল তরুণ দল হৈ চৈ করতে করতে একটি খালি পিকআপে চেপে আবতাব নগরে ঢুকছিলেন। তারা বাড়ি বাড়ি গরু পৌঁছে দেন কি না জানতে চাইলে বেশ আগ্রহ নিয়ে জবাব দেয়। কবির নামে এক যুবক জানান, সেখান থেকে গুলশান-১ যেতে জনপ্রতি সাড়ে তিন’শ টাকা নেন তারা। আর মহাখালী যেতে চারশ থেকে পাঁচশ।

নতুন বাজার এলাকার একশ ফিট হাট থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটি বিশাল অস্ট্রেলিয়ান গরু কিনে নিকেতন ফিরছিলেন আবুল মোমেন। বাজারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই একদল লোক তার পিছু নিয়েছিলেন। গরুর দরদাম ঠিক হওয়ার পর থেকে সেই যে রশি ধরেছেন তারা আর ছাড়েননি। তিনি এদের হতাশ করেননি। সানন্দে হেঁটেই বাসায় রওনা দেন।

আবুল মোমেন জাগো নিউজকে বলেন, ইচ্ছা করলে পিকআপ দিয়ে গরু নিয়ে যেতে পারতাম। হেঁটে নিয়ে যাওয়ায় কামলা বেশি লাগবে। পরিশ্রমও হবে। কিন্তু এতে আনন্দ অনেক। আর এইসব উৎসাহী কামলাদের হতাশ করতে চাইনি। তিন হাজার টাকায় বাসায় পৌঁছে দেবে তারা।

একশ ফিটে কথা হয় মৌসুমী এসব কামলাদের সঙ্গে। পাবনা ও সিরাজগঞ্জ থেকে আসা একদল লোক জানান, তাদের পরিচিত গরু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এই কাজের খোঁজ পান। এরপর গত চার বছর ধরে এই কামলা খাটছেন তারা।

Advertisement

এইচএস/বিএ/পিআর