জাতীয়

ভাষানটেকে কাউন্টার মামলায় নিহতের পরিবারই ফেরারি

রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় নিহত মো. নাছিরের পরিবারই এখন ফেরারি। খুনিদের হুমকিতে ওই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন নিহতের পরিবার। এছাড়া খুনিদের দায়ের করা কাউন্টার মামলায় সম্প্রতি জেলও খেটেছেন মামলার বাদী নিহতের ভাই মো. মোশারফ। ভাই হত্যা মামলা তুলে নিতে সন্ত্রাসী হুমকি আর পুলিশের হাতে গ্রেফতারের ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে।ভাই হারিয়ে ফেরারি জীবন যাপন করলেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীরা বীরদর্পে ভাষানটেক এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তারা ভাষানটেকে অবৈধ ব্যবসাও করে যাচ্ছেন অথচ পুলিশ খুনীদের ধরছে না -এমন অভিযোগ ভাই হারানো মোশারফের।জানা গেছে, সম্প্রতি খুনীরা জেল থেকে বেড়িয়ে ভাই হত্যা মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ ডায়েরি ও ঊর্ধ্বোতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে হুমকি থেকে রেহাই মিলছে না।গত বছরের ৯ অক্টোবর ভাষানটেকে মামাতো বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসীরা নাছিরকে (২৫) পিটিয়ে হত্যা করে। ওই দিন রাতেই ভাষানটেক থানায় একটি মামলা করেন ভাই মোশারফ। মামলার আসামিরা হলেন- ছালাম, আলতাব, বাবলু, মামুন, কানা আলম, দাঁত ভাঙ্গা খোকন, চুক্ষা শরীফ, হাবীব, টেবলেট কামাল, জান শরীফ, সুজন, সোহেল, নবী ও মালেক। মামলাটি এখন ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।খুনের ঘটনার ৭ মাস পেড়িয়ে গেলেও এখনো মামলার চার্জশিট দিতে পারেননি গোয়েন্দা পুলিশ। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ৬ জনকে গ্রেফতার হলেও বাকি আসামিদের অভিযান চালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সখ্যতা রয়েছে এবং ভাষানটেক এলাকায় একের পর এক অপরাধ ঘটছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দায়িত্বে অবহেলার কারণ দেখিয়ে ১৩ অক্টোবর ভাষানটেক ফাঁড়ির একজন এসআই, পাঁচজন এএসআই ও ১৩ জন কনস্টবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই ঘটনায় ভাষানটেক থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম নবী ও ওসি হোসনে আরা প্রত্যাহার করা হয়।‘নাছিরকে মেরে ফেলেছি। মামলা নিয়ে বেশি ঝামেলা করলে তোকেও মেরে ফেলবো। তখন মামলা দেখার কেউ থাকবে না’ -মোবাইলে এভাবেই সন্ত্রাসীরা হুমকি দিচ্ছেন বলে নিহত নাছিরের ভাই ও হত্যা মামলার বাদী মোশরফ হোসেন জাগো নিউজকে জানান।মোশারফ বলেন, ‘এই খুনীরাই আমার বাবা মতিন সরদারকে খুন করেছে। ছিনতাই করে পালোনোর সময় চিনে ফেলায় বাবাকে খুন করে সন্ত্রাসীরা। তখন কিছু বলতে পারিনি। বোনকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদে আমার একমাত্র ভাইকেও খুন করলো ওরা। কিন্তু বিচার পাচ্ছি না।’মোশারফ আরো বলেন, ‘আমাকে হুমকি দিয়ে কোনঠাসা রাখছে যাতে মামলা তুলে নিই। মামলা তুলে না নেয়ায় আমার বিরুদ্ধে তিনটি পাল্টা মামলা (কাউন্টার মামলা) দিয়েছে ভাই হত্যার মূল হোতা মামুনের বড় ভাই বালু জহির। মিথ্যে চাঁদাবাজির মামলায় সম্প্রতি ৯ দিন জেল খেটে জামিনে বের হয়েছি। জেল থেকে বের হয়েই শুনি আমার নামে আরো তিনটি জিডি করেছে তারা।থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে আমার ভাইয়ের খুনিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের ধরা হচ্ছে না। হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মামুন এখনো গ্রেফতার হয়নি। এমতাবস্থায় নিজের নিরাপত্তা ও ভাই খুনের সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।তিনি বলেন, ভাই হত্যার বিচার তো পাচ্ছিই না বরং আরো উল্টো চাপে আছি। ভাই হত্যার বিচার ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে মিরপুর বিভাগের ডিসিকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।তবে ভাষানটেক এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নানা অপকর্মের বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না স্থানীয়রা। যারাই তাদের অপকর্মের বিষয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন তাদের ওপর নানা নির্যাতন চালিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।তাদের হামলার শিকার একাধিক ব্যক্তি জানান, মামুন ও বাবলুর নেতৃত্বে ভাষানটেক মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, খুন ও ধর্ষণসহ নানা অপরাধ সংগঠিত হলেও প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থায় নেয়নি। থানা পুলিশদের যোগসাজশেই সন্ত্রাসীরা এলাকায় এসব অপকর্ম করতো বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ভাষানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। যারা মামলার আসামি তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুরাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মামলার এজহারভুক্ত বাবলু ও চুক্ষা শরীফসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩ জন জামিনে বেড়িয়ে পলাতক রয়েছেন। ঘটনার পর বাকি আসামিরা পলাতক। জড়িত সব আসামিকে খুব দ্রুতই গ্রেফতার করা হবে।মামলার চার্জশিট কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব আসামি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত মামলার চার্জশিট দেয়া হবে না।জেইউ/আরএস/আরআই

Advertisement