জাতীয়

কোরবানির বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত দুই সিটি কর্পোরেশন

একদিন পরই শনিবার সারাদেশে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এবার রাজধানীবাসীর স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপনে পশু কোরবানির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।।

Advertisement

সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঢাকার দুই মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ী কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের জন্য এবার সাড়ে ১৬ হাজারের বেশি স্থায়ী-অস্থায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে থাকবেন ঈদের দিন দুপুর থেকেই। সব বর্জ্য অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবেন তারা। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের সুবিধার্থে সোয়া দুই লাখ পলিব্যাগ সরবরাহ করা হবে। এছাড়া প্রতি ওয়ার্ডে ৬টি করে মোট ৬২৫টি স্থানে শামিয়ানা টাঙানো হবে। পাশাপাশি পশু জবাইয়ের জন্য মাওলানা ও কসাইসহ যাবতীয় ব্যবস্থা থাকবে।

কোরবানির স্থান জীবণুমুক্ত করতে পশু জবাইয়ের পর ফিনাইল ও স্যাভলন মিশ্রিত পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হবে। পশুর হাট এবং কোরবানির পর বর্জ্য অপসারণের জন্য পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে সিটি কর্পোরেশনের পানির গাড়িসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নৌবাহিনী থেকে ৯টি পানিবাহী গাড়ি ঈদের দিন সকাল থেকেই নিয়োজিত রাখা হবে।

Advertisement

ডিএসসিসি এলাকার কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের জন্য প্রতিটি এলাকায় থাকবে ভ্যান সার্ভিস ব্যবস্থা। এছাড়া পশুর বর্জ্য অপসারণে কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানে শতাধিক ডাস্টবিনের ব্যবস্থা রাখা হবে। সেখানে বর্জ্য ফেলা যাবে।

অন্যদিকে, পশুর বর্জ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে স্যাভলন ও ফিনাইল মিশ্রিত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসির বর্জ্য বিভাগ।

ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শফিকুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, বর্জ্য অপসারণের জন্য আমাদের ভারী সরঞ্জাম রয়েছে। আরও কিছু সরঞ্জাম ভাড়া নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

তিনি বলেন, ডিএসসিসির আওতায় প্রায় সোয়া ২ লাখ পশু কোরবানি থেকে প্রায় সাড়ে নয় হাজার মেট্রিকটন বর্জ্য উৎপন্ন হতে পারে। সে লক্ষ্যে ১২ হাজারের বেশি কর্মচারী নিয়োজিত রাখা হয়েছে। পশু কোরবানির জন্য এবার থাকছে ৬২৫টি স্থান নির্ধারিত স্থান।

Advertisement

পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে নির্ধারিত স্থানে কোরবানির দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত জায়গায় পশু কোরবানিকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি না। কোরবানির পর তড়িৎ সেসব স্থান পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার ৩০ টন ব্লিচিং পাউডার ও দেড় হাজার গ্যালন স্যাভলনসহ আড়াই লাখের মত বর্জ্য রাখার বস্তা বিতরণ করবে ডিএনসিসি। কোরবানির বর্জ্যগুলো সেসব বস্তাতে ভরে যথাযথ স্থানে ফেলতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহকারীরা সেখান থেকে তা সংগ্রহ করবেন।

শফিকুল আলম বলেন, পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন করতে প্রায় দেড় লাখ লিফলেট ও তাদের এলাকাভূক্ত মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তা পেতে ০৯৬১১০০০ ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার অনুরোধ জানান তিনি।

অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা গেছে, তাদের প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার কোরবানির পশু থেকে সাড়ে ৯ হাজার মেট্রিকটন বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এ বছর ডিএনসিসি ৫টি জোনের অধীনে ৫৪৯টি কোরবানির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আর পশু কোরবানির জন্য এসব স্থানে ৫৯২ জন ইমাম এবং ৫৬৬ জন কসাই থাকবেন।

ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ সমন্বয় করতে আমরা ডিএসসিসির সঙ্গে একটি যৌথ সভা করেছি।

তিনি বলেন, ডিএনসিসির বর্জ্য অপসারণে ৩৫০টি যানবাহন প্রস্তুত রাখা হবে। আর এ কাজে নিয়জিত থাকবেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিক।

তিনি আরও বলেন, বর্জ্য সংগ্রহে উত্তর সিটিতে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার পিস বস্তা বিতরণ করা হবে। এছাড়া ২২ টন ব্লিচিং পাউডার ও ৮০০ লিটার স্যাভলন মিশ্রিত পানি এবং ২০৫ লিটার ফিনাইল বিতরণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ডিএনসিসির আওতাভুক্ত বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বর্জ্য অপসারণে ৫২টি সেকেন্ডারি স্টেশন এবং ল্যান্ডফিল রাখা হবে। ২৩ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এছাড়া উত্তর সিটির বাসিন্দাদের সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এমএইচএম/এমএমজেড/এসআর/জেআইএম