জাতীয়

গরুর দখলে স্টেডিয়াম

জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল। জাতীর এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় তার নামে তৈরি করা হয় একটি স্টেডিয়াম। রাজধানীর কমলাপুরে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটির নাম ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম’।

Advertisement

দিনের পর দিন অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য। ভবঘুরে ও নেশাখোরদের আস্তানা হয়ে উঠেছে স্টেডিয়ামটি। এবার সেই স্টেডিয়ামটি অনেকটাই দখলে নিয়েছেন গরু ব্যবসায়ীরা। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রবেশের গেট ও স্টেডিয়াম চত্বরে গরু রাখছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া স্টেডিয়ামের চারদিকে গরুর খাবারের উচ্ছিষ্ট এবং মল-মূত্র ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

গত কয়েকদিন কমলাপুর ও গোপীবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এই এলাকায় এক কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি অস্থায়ী পশুর হাট। গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, গোলাপবাগ মাঠ এবং বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তাফা কামাল স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠ।

স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠ অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য বরাদ্দ দেয়া হলেও স্টেডিয়াম চত্বর হাটের বাইরে। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতেই স্টেডিয়াম চত্বরে গরুর হাট বাসিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিলর হাজী সুলতান মিয়া এবং স্থানীয় প্রভাবশালী নাসিরের যোগসাজশে স্টেডিয়াম চত্বরে গরুর হাট বসছে। এ নিয়ে কারও বিরোধিতা করার সাধ্য নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্টেডিয়াম মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী বলেন, কি বলবো ভাই কিছু বলার নেই। দেখতেই তো পাচ্ছেন কিভাবে দোকানের সামনে গরু রাখা হয়েছে। এভাবে গরু রাখলে আমাদের দোকানে ক্রেতা আসবে কিভাবে। কিন্তু এ নিয়ে কার কাছে অভিযোগ দেবো। কেউ শুনবে না। কিছু বললে বরং আরও ঝামেলা হবে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, স্টেডিয়াম চত্বরে গরুর হাট বসার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু কেউ কিছু বলতে গেলেই বিপদ। যে কথা বলবে তারই ক্ষতি হবে। তাই কথা না বলায় ভালো।

এ সময় তার কাছ জানতে চাওয়া হয় কারা এখানে হাট বসাচ্ছেন? উত্তরে তিনি বলেন, কাউন্সিলর সুলতান মিয়া এবং নাসির সাহেবের অনুসারীরা। মূলত কাউন্সিলরকে সামনে রেখে সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে নাসির সাহেবের নির্দেশে।

Advertisement

নাসির সাহেব কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাসির সাহেব এই এলাকার সব থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকেন। মাঝে মাঝে দেশে আসেন। দেশে না থাকলেও সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণে আছে। তার অনুমতি ছাড়া এখানে গরুর হাট বসানো কারও পক্ষে সম্ভব না। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক এখানে নাসির সাহেবের রাজত্ব চলবেই।

স্টেডিয়াম চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে এসে গ্যালারির গেটে আস্তানা গেড়ে বসেছেন মো. চুন্নু। তিনি জানান, কুষ্টিয়া থেকে ১৮টি গরু নিয়ে এসেছেন। সবগুলোই এখানে রাখা হয়েছে।

গেটে গরু বেঁধে রাখলে কেউ সমস্যা করে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ সমস্যা করে না। হাটের লোকজনই আমাদের এখানে বসতে বলেছেন। শুধু গেট নয় স্টেডিয়ামের সব জায়গায় গরু রাখা যাবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কাউন্সিলর হাজী সুলতান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, স্টেডিয়ামের পাশে গরু রাখার জন্য আমরা কাউকে বলিনি। আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে লোক পাঠিয়েছি স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠটি দেয়ার জন্য। যদি তারা না দেয় তাহলে ওখান থেকে আমরা গরু সরিয়ে ফেলবো।

স্টেডিয়াম চত্বরে গরু রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ওখানে গরু রাখা হয়েছে এটা ঠিক হয়নি। আমি এখনি স্টেডিয়াম চত্বর থেকে গরু সরিয়ে দেয়ার জন্য বলছি।

এমএএস/এআরএস/পিআর