যদি তুমি ক্ষুধার্ত হও, তবে কড়া নাড়ো। আমরা তোমার হাতে খাবার তুলে দেব। এ রকমই লেখা রয়েছে কানাডার এডমন্টন স্ট্রিট ১০৩২২১১১-এর ইন্ডিয়ান ফিউশন দ্য কারি হাউজের পেছনের দরজায়।
Advertisement
সারা দিনের ব্যস্ততায় রেস্তোরাঁর মধ্যে যখন ক্রেতারা ভারতীয় বা ফিজিয়ান কারি, গরম ভাত ও সুস্বাদু খাবার খেতে ব্যস্ত ঠিক সে সময়ই পেছনের দরজা দিয়ে চলতে থাকে বুভুক্ষু মানুষদের ক্ষুধা মেটানোর কাজ। রেস্তোরাঁ মালিক শেফ প্রকাশ ছিব্বরের কাছে এটা ঈশ্বরের আহার।
তিন বছর আগে এক রাতে তার রেস্তোরাঁর পেছনে ফেলা আবর্জনা থেকে সর্বহারা, বুভুক্ষু মানুষদের খাবার খুঁজে খেতে দেখেছিলেন তিনি। মনটা কেঁদে উঠেছিল তখন। সে সময়ই ভেবে নিয়েছিলেন প্রতিদিন এমন অসহায় মানুষদের মুখে খাবার তুলে দেবেন।
সেই থেকে এখন পর্যন্ত অসহায় মানুষদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন রেস্তোরাঁর পেছনের দরজার বাইরে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা দেড় হাজারের বেশি মানুষের মুখে খাবার তুলে দেন ছিব্বর ও তার কর্মীরা। শত ব্যস্ততার মধ্যেও কাউকে খালি হাতে ফেরান না তারা।
Advertisement
রেস্তোরাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের মধ্যে রোজ নিজের অতীত জীবনের ছায়া দেখতে পান ছিব্বর। ১০ বছর আগে কানাডায় আসার আগে সফল, পরিশ্রমী, সদ্য বিবাহিত যুবকের জীবনটা হঠাৎ এক ঝটকায় বদলে গিয়েছিল একটি দুর্ঘটনায়।
গাড়ি ধাক্কায় সারা শরীরের একাধিক হাড় ভেঙে গিয়েছিল। টানা দু’বছর বিছানায় শুয়ে থাকার সময় নিজের স্ত্রীকে অনাহারে দিন কাটাতে দেখেছেন ছিব্বর। সেই সময় আত্মীয় আর বন্ধুরা পাশে না দাঁড়ালে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে হয়তো আজ এই দিন দেখতে পেতেন না।
তিনি বলেন, ‘সুস্থ হয়ে ওঠার পর যখন কানাডা আসি তখন ১০ ডলারও ছিল না পকেটে। আর আজ আমার কাছে সব আছে। আমি তো মারাই গিয়েছিলাম। এটা আমার দ্বিতীয় জীবন। তাই সবটুকু দিয়ে বাঁচতে চাই। আরও ১০০ বছরও হয়তো বাঁচতে পারি। কিন্তু আমি এমন ভাবে বাঁচতে চাই যেন কাল মারা গেলেও কোনও অনুতাপ না থাকে।’
রোজ সকালে ‘ইশ্বরের আহার’ রান্না করেই দিন শুরু করেন ছিব্বর ও তার কর্মীরা। যে খাবার ক্রেতাদের জন্য তৈরি করা হয়, সেই খাবারই একটু বেশি পরিমাণে বানানো হয়। এরপর দুপুরের দিকে আরও একবার রান্না হয়। খাবার যেন কোনও ভাবেই কম না পড়ে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। সব সময়ই মানুষদের আরও সাহায্য করার উপায় খুঁজে চলেছেন ছিব্বর।
Advertisement
টিটিএন/আরআইপি