খেলাধুলা

সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগ ক্রিকেটকে রঙিন করবে

দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম উইকেটরক্ষক। পাশাপাশি একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবেও তিনি জড়িয়ে আছেন দলের অনেক জয়ের ইতিহাসে। বিশেষ করে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ফাইনালে এই মারমুখী ব্যাটসমানের ব্যাট থেকে আসা ছয় রান কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ে অবদান রাখে। সেই ছয়ের মধুর স্মৃতি আজও বাঙালিকে আন্দোলিত করে।তার আন্তর্জাতিক অভিষেক এপ্রিল ৫, ১৯৯৫। তারপর বাংলাদেশের হয়ে নভেম্বর ২০০১ থেকে জুন ২০০৩ পর্যন্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি খালেদ মাসুদ পাইলট। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ব্রেভার সেলিব্রেটি ক্রিকেট লীগ। এই টুর্ণামেন্টটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি এসেছিলেন অতিথি হয়ে। তারই ফাঁকে একান্ত আলাপে জানালেন আসন্ন ভারত সিরিজে টাইগারদের সামর্থ্য-সম্ভাবনাসহ নানা কথা। লিখেছেন লিমন আহমেদজাগো নিউজ : চলতি মাসেই ভারত আসছে বাংলাদেশে। বিশ্বকাপের সেই বিতর্কিত ম্যাচটির পর আবারো কোহলিদের মুখোমুখী হচ্ছে টাইগাররা। কিভাবে দেখছেন?খালেদ মাসুদ : ক্রিকেট সবার আগে একটি খেলা। আমাদের দেশে ক্রিকেট পাগল মানুষদের কাছে এটি সবচেয়ে বড় আবেগ। সেই আবেগের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়েই বলতে চাই, অতীতকে টেনে এনে লাভ নেই। ভারত খেলতে বাংলাদেশে আসছে, তারা আমাদের অতিথি। তাদের সাথে সেভাবেই ব্যবহার করা উচিত। আর জবাব যেটা দেয়ার সেটা মাঠেই হবে ইনশাল্লাহ। সেই সময় এখন আর নেই, বাংলাদেশকে কেউ খাটো করে দেখবে। যারা এটা করবে তারাই উচিত জবাব পেয়ে যাবে। সে ভারতই হোক আর অস্ট্রেলিয়া।জাগো নিউজ : তবু এ সিরিজ নিয়ে সবারই অনেক প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা কী টাইগাররা পূরণ করতে পারবে?খালেদ মাসুদ : বাংলাদেশ এখন ব্যালেন্সড একটি দল। লং ভার্সন ক্রিকেটে খুব একটা শক্তিশালী না হলেও ওয়ানডে এবং টি-টুয়েন্টিতে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং; সবক্ষেত্রেই আগের চেয়ে অনেক বেশি আশাব্যঞ্জক টাইগারদের পারফর্মেন্স। তারা এখন ম্যাচ জয়ের লক্ষ নিয়েই মাঠে নামে। তাদের মনোবল-শারীরিক আচরণ সবকিছুইতেই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তারচেয়েও বড় কথা সর্বশেষ ম্যাচগুলোতে ভালো খেলার ধারাবাহিকতাও দেখিয়েছে তামিম-সাকিব-মাশরাফিরা। এটি যে কোনো দলের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জটা বাংলাদেশ অবশ্যই ভারতকে ছুঁড়ে দিতে চাইবে। এই প্রত্যাশা করাটা এখন খুবই স্বাভাবিক।জাগো নিউজ : তবে কী বলছেন সিরিজে বাংলাদেশই ফেভারিট?খালেদ মাসুদ : ব্যাপারটি ঠিক ফেভারিটের নয়। এটি হলো ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। বাংলাদেশ সর্বশেষ সিরিজে পাকিস্তানকে যেভাবে হারিয়েছে সেটি দেখার পর নি:সন্দেহে যে কোনো দলই বাংলাদেশে খেলতে আসার আগে রীতিমত গবেষণা চালাবে। ক্রিকেট বিশ্বে এই খবরটা চাউর হয়ে গেছে, ছোট্ট সেই দলটি এখন আর নেই টাইগারদের। তারা এখন পাকিস্তানের মতো দলকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। সাকিব-মুশফিকদের পাশাপাশি সৌম্য, মুস্তাফিজ, তাইজুলের মতো নবীনরাও দারুণ খেলছে। সবাই রয়েছে সেরা ফর্মে। সেদিক থেকে আমি বলবো এই সিরিজে বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে ভালো কিছু করার।কিন্তু এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে ব্পিক্ষ দলটি ভারত। যারা সবরকম ক্রিকেটেই শক্তিশালী এবং আমাদের থেকে এগিয়ে। ওদের অনেক বিশ্বমানের খেলোয়ার রয়েছে যারা খেলার ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারে। আর টেস্টে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে অনেক অনেক বেশি অভিজ্ঞ এবং এগিয়ে। তাই ফেভারিট তকমাটি আমি ভারতকেই দিতে চাই। আর চাইব ফেভারিট হওয়ার চাপ থেকে মুক্ত হয়ে মাশরাফিরা ভারতকে রুখে দিক। চমকে দিক আরো একবার পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে। সেই সামর্থ্য এবং শক্তি আমাদের খেলোযারদের আছে।জাগো নিউজ : সিরিজের ঠিক আগে ইনজুরিতে পড়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাদ পড়ে গেলেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?খালেদ মাসুদ : একজন সিনিয়র ক্যাম্পেইনার হিসেবে রিয়াদের হঠাৎ ছিটকে যাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য একটি দুর্ভাগ্যই বটে। রিয়াদ খুবই ট্যালেন্ট এবং দায়িত্বশীল ব্যাটসম্যান। দল তাকে অবশ্যই মিস করবে। তার বোলিংটাও মিস করবে দলনেতা। জেনেছি, তার জায়গায় নাসির হোসেন অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। সেও ভালো মানের একজন খেলোয়ার। রিয়াদের মতো অলরাউন্ডার। আমার বিশ্বাস সে রিয়াদের অভাবটা পূরণ করবে। তাছাড়া, এটা নাসিরের জন্য সুবর্ণ সুযোগ নিজেকে প্রমাণ করে দলে জায়গা পাকাপোক্ত করার।জাগো নিউজ : একইভাবে ইনজুরিতে পড়েছেন টেস্ট অধিনায়ক ও উইকেট রক্ষক মুশফিকুর রহিম। আসন্ন সিরিজে ব্যাট করলেও উইকেটের পিছনে থাকছেন না তিনি। ছোটখাটো ইনজুরি আছে তামিম, মাশরাফিরও। এগুলো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?খালেদ মাসুদ : একদমই না। খেলার সাথে ইনজুরিটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনি যাদের কথা বললেন এরা প্রত্যেকেই সিনিয়র এবং লড়াকু স্বভাবের। এরা জানে, খেলোয়ারি জীবনে এমন ব্যথা বেদনা থাকেই। এগুলো নিয়েই বিপক্ষকে মোকাবিলা করতে হয়। বিশেষ করে মাশরাফির ইনজুরি নিয়ে লড়াই করার যে মানসিকতা সেটি দলের নতুনদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমার বিশ্বাস ভারতের বিপক্ষে ভালো ফলাফল এদের সব ইনজুরিকে হালকা করে দিবে।তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা সিরিজে মুশফিকের উইকেট কিপিং প্রয়োজন ছিলো। কিছু করার নেই। আপাতত নতুন কারো উপরই ভরসা করতে হচ্ছে। এদিক থেকে অবশ্য একটি লাভ হবে। মুশফিকের বিকল্প তৈরি করতে পারবে বাংলাদেশ।জাগো নিউজ : গেল পাকিস্তান সিরিজে টেস্টে দুই ইনিংসে বিশ উইকেট নেয়ার মতো বোলার ছিলো না টাইগারদের। এবারের সিরিজে এ বিষয়টি কেমন প্রভাব ফেলতে পারে?খালেদ মাসুদ : আগেই বলেছি লং ভার্সন ক্রিকেটে আমাদের অনেক দুর্বলতা আছে। পাকিস্তান সিরিজে বোলিংটাই সামনে এসেছে। তবে পরের টেস্টে কিন্তু ব্যাটসম্যানরাও নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি। আর সেজন্যই খুব বাজে একটি ফল পেতে হয়েছে। টেস্ট খেলার সামর্থ্যে ঘাটতি আছে আমাদের। তবে আশার কথা হলো সময়ের সাথে সাথে সেগুলো কাটিয়ে উঠছি আমরা। সামনে আরো ভালো হবে।আর এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উচিত ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিক মনযোগী হওয়া। কেননা, ঘরোয়া ক্রিকেট উন্নত না হলে, বেশি বেশি টেস্ট টুর্ণামেন্ট না হলে এই ভার্সনে মানসম্পন্ন খেলোয়ার তৈরি হবে না। সে বোলারই হোক কিংবা ব্যাটসম্যান। আর চলতি সিরিজে আলাদা মাঠে খেলা হচ্ছে। তাই যারা মাঠে উইকেট তৈরির দায়িত্বে থাকবেন তাদের বলবো আমাদের বোলিং সামর্থ্য বিবেচনায় রাখতে।জাগো নিউজ : দেশের তারকাদের নিয়ে সেলিব্রেটি ক্রিকেট লীগের আয়োজনটি আপনার চোখে কেমন মনে হচ্ছে?খালেদ মাসুদ : দারুণ একটি উদ্যোগ। ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে, আজকের এই অবস্থানে নিয়ে আসতে আমাদের দেশের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন অঙ্গণের তারকারা নানাভাবে সাহায্য করেছেন। তারা ক্রিকেট নিয়ে গান করেছেন, নাটক-চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। এগুলো বরাবরই ক্রিকেটকে উৎসাহিত করেছে। সেইসব প্রিয় তারকাদের নিয়ে ক্রিকেট লীগ আয়োজন করায় আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। সেলিব্রেটি ক্রিকেট লীগ আমাদের ক্রিকেটকে আরো রঙিন করে তুলবে।জাগো নিউজ : এই আয়োজনের সাথে আপনি কীভাবে জড়িয়ে থাকছেন?খালেদ মাসুদ : আমার খেলার কথা থাকলেও সময়ের অভাবে সেটি হচ্ছে না। তবে লীগের টেকনিক্যাল বিভিন্ন বিষয় দেখাশুনা করবো। ট্রেনিং-গ্রুমিংয়েও অংশ নিতে পারি।জাগো নিউজ : বর্তমানে আপনার ব্যস্ততা কী নিয়ে?খালেদ মাসুদ : জাতীয় দলের হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াড নির্মাণে কাজ শুরু করেছে বিসিবি। কাগজে-কলমে পরিকল্পনা সুবিস্তৃত। বছরব্যাপি নানা ক্যাম্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হয়েছে নতুন মোড়কে হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডকে ঘিরে। আলাদা করে হবে পেস বোলার, স্পিন, ব্যাটিং, ফিল্ডিং ও উইকেটকিপিং কোর্স। আমি থাকছি উইকেটকিপিং কোর্সে। আপাতত সে নিয়েই ভাবছি।জাগো নিউজ : ব্যস্ততার ফাঁকে এইটুকু সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ....খালেদ মাসুদ : আপনাকেও ধন্যবাদ। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশ দলের জন্য রইল অগ্রীম শুভকামনা।

Advertisement

এলএ