দেরিতে হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থাপিত হয়েছে আধুনিক মর্গ । মাত্র কয়েক মাস আগেও এ মর্গটির বেহাল দশা ছিল। প্রয়োজনীয় ন্যুনতম সংখ্যক মরচুয়েরি কুলার না থাকায় ময়নাতদন্তের জন্য আনা লাশের পঁচা গন্ধে মর্গ এলাকার আশেপাশে যাওয়া সম্ভব হতো না। নাকে-মুখে রুমাল চেপেও স্বজনরা লাশ দেখতে যেতে পারতেন না।সুক্ষ্মভাবে ময়নাতদন্ত করার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধা ছিল খুবই অপ্রতুল। ওটি (অপারেশন থিয়েটার) টেবিল না থাকায় লাশ অসম্মানজনকভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাটিতে ফেলে রাখা হতো। মান্ধাতা আমলের হাতুড়ি ও বাটাল দিয়ে লাশের মাথা দু’ভাগ করা হতো। সাধারণ করাত দিয়ে বুক কেটে করা হতো ময়নাতদন্ত।ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, কলেজের বর্তমান প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানের আন্তরিক সহযোগিতায় আগের তুলনায় মর্গের সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়ানো হয়েছে। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন এ মর্গ ভবন নির্মাণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে।তিনি জানান, বর্তমানে মর্গে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অটো ফোকাসিং লাইট, ইলেকট্রিক করাত, স্টেইনলেস অটোপসি ছুরি, অটোমেটিক বডি লিফটার, সাকার মেশিন কিংবা পানি নিষ্কাশনের জন্য গরম-ঠান্ডা পানির ব্যবস্থার সুব্যবস্থা রয়েছে।তিনি আরো জানান, ঢামেক মর্গে প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে আটটি লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। রাজধানী ও আশেপাশের এলাকা থেকে ময়নাতদন্তের জন্য বিভিন্ন ধরনের- গুলিবিদ্ধ, ছুরিকাহত, বোমাহত, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত, বিষপান, ধর্ষনের শিকার হয়ে আসে এসব লাশ।কিছদিন আগেও মর্গে লাশ সংরক্ষণ ছিল বড় সমস্যা। বিশেষ করে বেওয়ারিশ লাশ যেগুলো শনাক্ত করার জন্য কিছুদিন সংরক্ষণের প্রয়োজন হতো তা নিয়ে ভীষণ সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু বর্তমানে এক সঙ্গে পাঁচটি মরচুয়েরি কুলার স্থাপিত হওয়ায় প্রতিটিতে চারটি করে একসঙ্গে ২০টি লাশ সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে।সরেজমিন পরিদর্শনকালেও মর্গটিতে আধুনিকায়নের ছোঁয়া চোখে পড়েছে। মর্গ কক্ষটি টাইলসে মোড়ানো ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। উন্নতমানের দুটি ওটি টেবিল- যেখানে ময়নাতদন্ত শেষে রক্ত ধুয়ে ফেলার জন্য পানির সুব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুবিধা যে রয়েছে তা দেখা গেল।মরচুয়েরি সহকারী সিকান্দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, নতুনভাবে স্থাপিত মর্গটিতে সুষ্ঠুভাবে লাশের ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হচ্ছে।এমইউ/বিএ/আরআই
Advertisement