খেলাধুলা

১০ মাস আগের সুখস্মৃতিই ফিরিয়ে আনলেন সাকিব

কী হবে? ১০ মাস আগে ইংলিশদের বিপক্ষে শেরে বাংলার সুখস্মৃতির পুনরাবৃত্তি ঘটবে? না ১১ বছর আগে ফতুল্লার দুঃখস্মৃতি ফিরে আসবে? তা দেখতেই উন্মুখ হয়েছিল গোটা বাংলাদেশ। নাহ, এবার আর হতাশায় পোরা নয়। এবার সাফল্যের হাসি। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে ওঠা।

Advertisement

গত বছর অক্টোবরের শেরে বাংলাই যেন ফিরে এল। আবার সেই ‘স্পিন ভেলকি।’ এবারো সাকিব ম্যাজিক। অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজর বদলে আরেক বাঁ-হাতি তাইজুল ইসলামের জাদুকরি স্পিন। সে স্পিন ভেলকিতেই কুপোকাত অসিরা।

দিনক্ষণের হিসেব কষে লাভ নেই। হাতে সময় বাকি ছিল দুই দিন। জিততে অসিদের দরকার ছিল মাত্র ১৫৬। উইকেট ছিল আটটি। তারচেয়ে বড় কথা উইকেটে ছিলেন দুই ব্যাটিং স্তম্ভ ডেভিড ওয়ার্নার আর স্টিভেন স্মিথ। খালি চোখে মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার পাল্লাই ভারী।

শঙ্কা এসে বাসা বেধে ছিল; আগের দিন জীবন পাওয়া ওয়ার্নার আর স্মিথই না শেষ পর্যন্ত সর্বনাশ ডেকে আনেন। ১১ বছর আগে ফতুল্লার দুঃখস্মৃতির কথা মনে হতে ভয়টা আরও জেঁকে বসেছিল। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ ছিল সেটা। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ৩০৭ রানের টার্গেট ছিল অস্ট্রেলিয়ার। নানা চড়াই উৎড়াই আর ওঠা নামার পালা শেষে পরাজয়ের বেদনায় নীল হয়েছিল বাংলাদেশ। অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের সংগ্রামী শতকে শেষ হাসি হেসে ছিল অস্ট্রেলিয়া।

Advertisement

আবার উল্টো কাহিনীও আছে। সেটা এক বছরের কম সময় আগের ২০১৬ সালে অক্টোবরের। শেরে বাংলায় ২৭৩ রানের টার্গেট সামনে নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থা থেকে মিরাজ ও সাকিব ম্যাজিকে মুখ থুবড়ে পড়ে ইংলিশরা। বিনা উইকেটে ১০০ থেকে ১৬৪ রানে গিয়ে আটকে পড়ে কুকের দল। ১০৮ রানের বড় ও ঐতিহাসিক জয়ে মাঠ ছাড়ে মুশফিকের দল।

এবার প্রায় একই চালচিত্র। একই মাঠ। পার্থক্য একটাই, তখনকার চেয়ে এবার অজিদের টার্গেট একটু ছোট। এবার মুশফিক বাহিনী এগিয়ে ছিল ২৬৪ রানে। তার মানে অজিদের সামনে এবারের টার্গেট ছিল ২৬৫ রানের। এ চ্যালেঞ্জের পিছু নিয়ে তৃতীয় দিন শুরুতে মুখ থুবড়ে পড়েও তিন দফা জীবন পেয়ে খানিকটা পথ এগিয়ে গিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ।

আজ চতুর্থ দিন অজিদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৫৬ রানের। বার বার বলা হয়েছে ওয়ার্নার ও স্মিথের ওপরই নির্ভর করছে অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্য। বাংলাদেশের সম্ভাবনা নির্ভর করছিল স্পিনারদের হাতে। গোটা দেশ অধীর আগ্রহে আরও একটি সাকিব-মিরাজ ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায় ছিল। কে জানতো এবার সাকিবের সঙ্গে বল হাতে জ্বলে উঠবেন তাইজুল ইসলামও। কিছুদিন সাকিব ও মিরাজের ছায়ায় ঢাকা পড়ে এ বাঁ-হাতি স্পিনার এবার প্রয়োজনে ঠিক দ্যুতি ছড়ালেন। তার স্পিন ঘূর্ণিতে পুরে ছারখার অসি বাহিনী। দুই বাঁ-হাতি সাকিব ও তাইজুলের স্পিন ভেলকিতে কুপোৎ স্মিথ বাহিনী।

সকালে ৪০ মিনিটের বেশি সময় ওয়ার্নার ও স্মিথ উইকেটে কাটিয়ে দেয়ায় মনে হচ্ছিল হতাশার কালো মেঘ বুঝি ঢেকে দেবে সম্ভাবনার সূর্যকে। প্রথম ঘণ্টা শেষ হবার আগে শতরান পূর্ণ করে ফেললেন ওয়ার্নার। আগের দিন ১৪ রানে সাকিবের বলে স্লিপে সৌম্যর হাতে জীবন পাওয়া এ বাঁ-হাতি ওপেনার আজ সকালেও অমন চালিয়ে খেলে তাইজুলের বলে ডাবলস নিয়ে পৌঁছে গেলেন তিন অংকে। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯ নম্বর শতক পূর্ণ হবার পর দলকে সাফল্যের বন্দরে পৌঁছে দেয়ার বদলে অল্পকিছু সময় পর বিদায় নিলেন ওয়ার্নার।

Advertisement

তার আগে অফস্পিনার মিরাজের বলে অন ড্রাইভ করতে গিয়ে বেঁচে গেলেন স্মিথ। অজি অধিনায়কের জোরালো অনড্রাইভ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও সামনে শরীর ফেলা তামিম তা তালুবন্দী করতে না পারায় ২৯ রানে আবার জীবন পেলেন অজি অধিনায়ক। ০ ও ৩ রানে বেঁচে যাবার পর আবার ২৯ রানে আউটের হাত থেকে বেঁচেও শেষ রক্ষা হয়নি।

এর মধ্যে আঘাত হানলেন সাকিব। ফিরিয়ে দিলেন শতরান করা ওয়ার্নারকে। ১১২ রানের মাথায় সাকিবকে প্রথমে স্কুপ খেলার চিন্তা করে পরে পুল খেলতে যান ওয়ার্নার। বল ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। সাকিবের জোরালো আবেদন, আম্পায়ার আলিম দার আঙ্গুল তুলে দিলেন। ওয়ার্নার রিভিউ নিলেও তাতেও লাভ হল না। মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়লেন ওয়ার্নার। ভাঙলো ১৩০ রানের জুটি। অস্ট্রেলিয়র তখনো দরকার ১০৬ রানের।

তারপর পরই শুরু হলো সাকিব ও তাইজুল ম্যাজিক। দায়িত্ব নিয়ে খেলার চেষ্টা করা স্টিভেন স্মিথের উইকেটও ঝুলিতে পুরলেন সাকিব। তার গুডলেন্থ ডেলিভারিকে কাট করতে গিয়ে মুশফিকুর রহীমের গ্লাভসবন্দি হন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক।

এরপর তাইজুল-সাকিবের সাঁড়াশি স্পিনে দিশেহারা অজিরা। চললো যাওয়া আসার পালা। এর মধ্যে লাঞ্চের পর প্রথম ওভারে আবার আঘাত হানলেন সাকিব। ম্যাক্সওয়েলকে বোল্ড করে উল্লাসে ফেটে পড়লেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এ উল্লাস ম্যাচে ১০ উইকেট পাবার। এ উৎসব অস্ট্রেলিয়ার শেষ প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে জয় মোটামুটি নিশ্চিতের। লাঞ্চের ৫০ মিনিট পর তাইজুলের বলে হ্যাজলউড আউট হবার সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিত হলো জয়। আবার স্পিনারদের হাত ধরে আসলো অবিস্মরণীয় জয়।

এআরবি/এমআর/আরআইপি