প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্নভাবে প্রতিদিন ঢাকা ছাড়ছে লাখো মানুষ। তবে সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার তীব্র ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।
Advertisement
বন্যার কারণে সড়কপথে খানাখন্দ ও সম্ভাব্য যানজট এড়াতে এবার ঈদে ট্রেনযাত্রার প্রতি ঝুঁকেছে মানুষ। তারই ধারাবাহিকতায় ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় বাড়ছে কমলাপুর স্টেশনে। তবে ট্রেনের দেরিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অনেককে। কিন্তু সব ভোগান্তি সয়েই বাড়ি ফিরতে উদগ্রীব যাত্রীরা।
বুধবার সকাল থেকেই এই ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে কমলাপুরে। প্লাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনগুলো ছিল পরিপূর্ণ। কাঙ্খিত ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে আছেন অসংখ্য যাত্রী। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ট্রেনই দেরিতে ছেড়ে যাওয়ায় বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
খুলনারগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের কমলাপুর ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৬টা ২০ মিনিটে। কিন্তু ট্রেনটি দুই ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস ট্রেনও নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে স্টেশন ছেড়ে গেছে।
Advertisement
ঈদযাত্রার অন্যান্য ভোগান্তির সঙ্গে ট্রেনের দেরিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্টেশনে অপেক্ষায় থাকায় যাত্রীরা মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত।
ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনুযায়ী আজ চতুর্থ দিনের মতো রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন মানুষ। গত ২১ আগস্ট টিকিট সংগ্রহকারীরা আজ ট্রেনে রাজধানী ছাড়ছেন। ওইদিন সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেছেন অনেকে; আজ যাত্রার দিন সঠিক সময়ে ট্রেন ছেড়ে না যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসব যাত্রীরা।
এদিকে, স্টেশনে কর্মরতরা বলছেন, ট্রেনগুলো স্টেশনে এসে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় সেগুলো দেরি করে ছেড়ে যাচ্ছে। সাময়িক এই দেরির জন্য যাত্রীদের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তবে যাত্রাপথে যাত্রীদের যেন সমস্যা না হয় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেলো, প্লাটফর্মে ট্রেন পৌঁছাতেই ভিড় ঠেলে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দিকে ছুটছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যের যাত্রীরা। কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেনের প্রতিটি বগিই মানুষে ঠাঁসা। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা কে কার আগে উঠবেন।
Advertisement
এমন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী শাজাহান আলী। পরিবার নিয়ে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়ছেন তিনি। জাগো নিউজকে বললেন, প্রথমে ছিল টিকিট পাওয়ার যুদ্ধ, আজ ট্রেনে ওঠার।
তিনি বলেন, এমনিতেই ট্রেন লেট। তার ওপর ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী, পরিবার সদস্যদের নিয়ে সিট পর্যন্ত পৌঁছানোই মুশকিল। এত বিড়ম্বনা-ভোগান্তি উপেক্ষা করে আমরা বাড়ি যাই, কারণ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা। এটাতেই ভালো লাগা আমাদের।
রাজশাহীগামী ট্রেনের যাত্রী বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষিকা ইসরাত জাহান সুমি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজশাহী যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সড়কপথে যানজটের কথা মাথায় রেখে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছি। ট্রেনে অতিরিক্ত ভিড়, অন্যদিকে প্রায় ট্রেন লেট করে ছাড়ছে। আমাদের ট্রেন কখন ছাড়ে কে জানে। ট্রেনে এতো ভিড়ের কারণে নারীদের খুব সমস্যা। তবুও নানা ভোগান্তি সত্ত্বেও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে শহর ছেড়ে গ্রামে ছোটে সবাই। এতো ভোগান্তি, ট্রেনের বিলম্ব তবুও স্বপ্ন যাবে বাড়ি।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, কমলাপুরে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদ এগিয়ে আসার কারণে এ ভিড় বাড়ছে। যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে।
তিনি বলেন, যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। দু’একটা ট্রেন কিছুটা বিলম্বে ছেড়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সিডিউল ঠিক রেখে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করতে।
এবার ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন সারাদেশে প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার যাত্রী পরিবহন করছে রেলওয়ে। এছাড়া গত ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ঈদের পরে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ৭ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।
এএস/এসআর/আইআই