হতাশার একটি দিন। আফসোস অনুশোচনায় দগ্ধ হবার দুটি সেশন। একদিনে অনেকগুলো ইস্যু গেল বিপক্ষে। আস্থার প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠা তামিম আবারো ৭০‘এর মাঝামাঝি গিয়ে আউট। ওয়েল সেট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট।
Advertisement
সাব্বির রহমান রুম্মনের স্ট্রেট ড্রাইভ বোলার লিওনের হাতে লেগে গিয়ে আঘাত হানলো ননস্ট্রাইক এন্ডের উইকেটে। সেটাই কাল হলো। ব্যাট ও শরীর বাইরে রাখা মুশফিক রান আউটের শিকার হয়ে সাজঘরে।
অতৃপ্তির এখানেই শেষ নেই। রেফারেল না নিয়ে অফ স্পিনার লিওনের বলে ব্যাটে না লাগলেও কট বিহাইন্ড সাব্বির আউট মেনে নিয়ে ফিরে গেলেন প্যাভিলিয়নে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট ছুঁয়ে বল উইকেটে যাবার পরও রেফারেল নিয়ে খানিক সমালোচিত হয়েছিলেন সাব্বির। এবার বল তার ব্যাটে লাগেনি; কিন্তু রেফারেল না চেয়ে সোজা চলে গেলেন সাজঘরে। হয়তো প্রথম ইনিংসে রেফারেল নিয়ে সফল না হওয়ার ভয়েই সাব্বির দ্বিতীয় ইনিংসে আর রেফালের চিন্তাই করেননি। এতো গেল বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে আফসোসে পোড়ার কাহিনী। এরপর অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসেও অনুশোচনাই সঙ্গী হয়ে থাকলো। তাই তো দিন শেষে ভক্ত ও সমর্থকদের আফসোস মাখা সংলাপ, ‘ইস ওয়ার্নার আর স্টিভেন স্মিথ দুজনই যদি আউট হয়ে যেতেন! তাহলে ম্যাচ একদম হাতের মুঠোয় চলে আসতো।’
কিন্তু তা আর হলো কই? সৌম্য সরকার অসি ওপেনার ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলে দিলেন। সাকিব আল হাসানের বলে ফ্ল্যাশ করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ওয়ার্নার; কিন্তু স্লিপ ফিল্ডার সৌম্য সরকারের দু’হাত গলে সে ক্যাচ বেরিয়ে চলে গেল সীমানার ওপারে।
Advertisement
১৪ রানে জীবন পাওয়া ওয়ার্নার শেষ পর্যন্ত আর পিছনে ফিরে তাকাননি। ৭৫ রানে নট আউট থেকে সাজ ঘরে ফিরে এসেছেন। হতাশা আর আফসোসের মাত্রা দ্বিগুণ হলো তখন, যখন অসি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ শূন্য এবং তিন রানে আউট হবার হাত থেকে বেঁচে গেলেন।
প্রথমবার মিরাজের বলে স্ট্যাম্পড হয়েও টিভি রিপ্লেতে বেঁচে যাওয়া। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে ব্যাটে বলে করতে পারেননি স্মিথ। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিক চকিতে বেলস ভেঙ্গে দিলে স্ট্যাম্পড হয়ে গেছি ভেবে সাজঘরের পথে হাঁটা দিচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। প্রথমে বোঝা যায়নি। পরে সাইড ক্যামেরায় দেখা গেল তার বুটের একটু অংশ কোনরকমে পপিং ক্রিজের ইঞ্চি পরিমান ভিতরে।
আর তাতেই স্ট্যাম্পড হবার হাত থেকে বেঁচে গেলেন স্মিথ। সুতরাং, আবারও ৩ রানে জীবন ফিরে পেলেন তিনি। অফ স্পিনার মিরাজের টার্নিং ডেলিভারি স্মিথের ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে চলে যায় শর্ট লেগে; কিন্তু ক্লোজ ইনে দাঁড়ানো ইমরুল তা ধরতে পারেননি।
এভাবেই জীবন পাওয়া ওয়ার্নার আর স্মিথ আর আউট হননি। তাদের জুটি শেষ পর্যন্ত আর ভাঙ্গেনি। ২৮ রানে দুই উইকেট খোয়া যাবার পর তৃতীয় উইকেটে স্মিথ-ওয়ার্নারের ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন পার্টনারশিপের ওপর ভর করেই দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান দুই উইকেটে ১০৯।
Advertisement
যার অনেক আগেই সাজঘরে ফেরার কথা সেই স্মিথ নট আউট ২৫ রানে। আর ওয়ার্নার নট আউট ৭৫ রানে। দিন শেষে তাই খলনায়ক সৌম্য আর ইমরুল। এমনিতেই রান পাননি। দু’জনই ব্যর্থতার ঘানি টানছেন।
সৌম্যর দুই ইনিংসে রান (৮+১৫) = ২৩। আর ইমরুল দু’বারে করেছেন মোটে (০+২) = ২ রান। তাই তাদের ক্যাচ ধরে রাখতে না পারাটা শেষ পর্যন্ত বড় হয়েই দেখা দিয়েছে।
সবার জানা স্মিথ ও ওয়ার্নার জাত ব্যাটসম্যান। অনুকুল-প্রতিকুল যে কোন পরিস্থিতিতে ম্যাচ জেতানোর পর্যাপ্ত সামর্থ্যও আছে। এমন দু’জন সত্যিকার ম্যাচ উইনার জীবন পাওয়া মানে বড় ইনিংস খেলা।
১৪ রানে বেঁচে যাওয়া ওয়ার্নার এরই মধ্যে আরও ৬১টি বোনাস রান তুলে ফেলেছেন। আর অধিনায়ক স্মিথও দু’বার আউট হবার হাত থেকে বেঁচে আরেক দিক আগলে রেখেছেন। এই জুটিই এখন মুশফিক বাহিনীর চিন্তার কারণ। তাই তো তাদের ক্যাচ ধরে রাখতে না পারা সৌম্য ও ইমরুলকে নিয়ে যত কথা। অবশ্য এ দু’জন পাশে পাচ্ছেন তামিম ইকবালকে। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তামিম জানিয়ে দিলেন, ‘শুধু হাতে লেগে পড়ে গেছে বলেই যে সে দুটি ক্যাচ ছিল, তেমন নয়। দুটিই খুব কঠিন ক্যাচ ছিল। সৌম্যরটা খুবই দ্রুত এসেছে।’
ক্যাচ কঠিন ছিল- এমন কথা বললেও তামিম মানছেন ওই ক্যাচ দুটি ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ খুব ভাল অবস্থানে থাকতো। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘স্মিথ আর ওয়ার্নারের ক্যাচ দুটি নিতে পারলে আমরা অবশ্যই খুব ভাল জায়গায় থাকতাম।’
তারপরও তামিমের ধারণা, এখনো ম্যাচ থেকে সরে যায়নি বাংলাদেশ। এখনো জিততে হলে অসিদের আরও ১৫৬ রান করতে হবে। হাতে আছে ৮ উইকেট।
তামিমের উপলব্ধি, ‘এখন আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার কাজ কঠিনও করে দিতে পারি। আবার সহজও করে দিতে পারি। আমাদের চেষ্টা থাকবে অজিদের কাজ কঠিন করে দেয়ার। কাল চতুর্থ দিন সকাল সকাল স্মিথ ও ওয়ার্নারের যে কোন একজনকে ফিরিয়ে দিতে পারলেই আবার ম্যাচে ফিরবো আমরা।’
এআরবি/আইএইচএস/এমএস