প্রথম ইনিংসে দলের চরম বিপর্যয়ের মুখে আশার প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানই। তামিম ইকবালের সঙ্গে গড়েছিলেন ১৫৫ রানের জুটি। খেলেছিলেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৪ রানের ইনিংস।
Advertisement
দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব যখন মাঠে নামেন, তখন দলের অবস্থা প্রথম ইনিংসের মতো ততটা খারাপ ছিল না। দলীয় ১৩৫ রানে তামিম ইকবাল আউট হয়ে যাওয়ার পর ক্রিজে নামেন সাকিব। বাংলাদেশের লিডও ততক্ষণে দু’শোর কাছাকাছি।
এমন পরিস্থিতিতে সাকিবের কাছ থেকে ধীরস্থির এবং ভারসাম্যপূর্ণ ব্যাটিংই প্রত্যাশা করেছিল মিরপুরের গ্যালারি। পুরো দেশই তাকিয়ে ছিল সাকিবের ব্যাটের দিকে। অন্য প্রান্তে মোটামুটি সেট হয়ে যাওয়া মুশফিকুর রহীম রয়েছেন। অন্য প্রান্তে সাকিব নিজেকে ধীরে ধীরে সেট করে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সামনে বড় একটি লক্ষ্য দাঁড় করানোর চেষ্টা করবেন- এটাই ছিল সবার প্রত্যাশা।
কিন্তু সাকিব কি না দলের প্রয়োজনটাই বুঝলেন না। শুরুতেই খেললেন ভুল শট। ব্যাট হাতে ৫ রান করে ফেলার পর নাথান লিওনের মতো বোলারের বলে যে ভুল করলেন, সেটার প্রায়শ্চিত্য অন্য কিছুই দিয়েই যেন করার মতো নয়। উপস্থিত গ্যালারি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিল না, এই শট কী সত্যি সত্যি সাকিব খেলেছেন? নাকি অন্য কেউ। কারণ টেস্টের যে অবস্থা, তাতে সাকিবের কাছ থেকে এ ধরনের শট কারোরই কাম্য নয়।
Advertisement
নাথান লিওনের বলটিকে মিড অফের ওপর দিয়ে তুলে দিতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু প্যাট কামিন্স সেটাকে বেরিয়ে যেতে দিলেন না। মাথার ওপর তালুবন্দি করলেন। ফিরে গেলেন সাকিব। বাংলাদেশের বড় স্কোর দাঁড় করানোর সম্ভাবনা কী তখনই শেষ হয়ে গেল? সময় বলে দেবে সেটা।
সাকিব বরাবরই এমন। একেবারে নিজের মতো। এর আগেও অনেকবার তেমনটি দেখা গিয়েছিল। দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে যখন সাকিবের ধৈর্য দরকার, তখন তিনি সেটা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলেন। গত বছর চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব যদি দ্বিতীয় ইনিংসে দলের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশকে হয়তো হারতে হতো না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় নিয়েই ঢাকায় ফিরতে পারতেন টাইগাররা।
শুধুই ওই টেস্টই নয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টেও সাকিবের একই ধরনের ব্যাটিং দেখা গিয়েছিল। যদিও এক ইনিংসে (ওয়েলিংটনে) তিনি ২১৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংসও উপহার দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি যদি নিজের সেই মূল্যটা বোঝাতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশ অন্তত টেস্টটি ড্র করতে পারতো। হায়দরাবাদেও ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে একই ধরনের শট খেলে আউট হয়েছিলেন সাকিব। পরে সংবাদ সম্মেলনে তার এমন ব্যাটিংয়ের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সাকিব উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি এমনই।’
সাকিব যে সত্যি সত্যি এমন- তার প্রমাণ আজ আরও একবার দিলেন। প্রথম ইনিংসের তুলনায় যেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা তুলনামূলক সহজ, সেখানে তিনি কি না আউট হলেন ৫ রান করে। একটা ভালো বলে আউট হলে না হয় কথা ছিল। তিনি আউট হলেন লিওনের এমন এক বলে, যেটাতে উইকেট প্রত্যাশা ছিল না খোদ লিওনেরও। অথচ, কী সহজেই না সাকিব মিড অফে ক্যাচটা তুলে দিলেন প্যাট কামিন্সের হাতে।
Advertisement
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনটা অসাধারণ খেলছিল বাংলাদেশ। উইকেট বলতে গতকাল শেষ বিকেলে নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে পাঠানো তাইজুল আর ইমরুল কায়েস। প্রথম সেশন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটের বিনিময়ে ১৩৩ রান। অসিদের চেয়ে টাইগাররা ১৭৬ রানে এগিয়ে থেকে লাঞ্চে যান।
লাঞ্চ থেকে ফিরেই ভয়াবহ হয়ে ওঠে অসি বোলাররা। প্রথমেই ফেরান দুই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া তামিম ইকবালকে। এরপর ক্রিজে আসেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
ইনিংসের ৫৬তম ওভার করার জন্য অসি দলপতি স্মিথ বল তুলে দেন লিওনের হাতে। অসি স্পিনারের তৃতীয় বলটিকে চারে পরিণত করেন সাকিব। পরের বলটি অফে ঠেলে দিলেও কোনো রান পাননি। ওভারের পঞ্চম বলটি কোনো কারণ ছাড়াই উঠিয়ে খেলতে গেলেন সাকিব। বলটি মিড অফে উঠে গিয়ে কামিন্সের হাতে ধরা পড়েন। যেন অনেকটা ইচ্ছা করেই নিজের উইকেটটি লিওনকে উপহার দিয়ে এলেন সাকিব!
এমএএন/আইএইচএস/জেআইএম