ভারতের সিকিম প্রদেশের সীমান্তের কাছে বিরোধপূর্ণ অঞ্চল ডোকলাম নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যকার টানাপোড়েন শেষ হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গোপসাগর এলাকায় আধিপত্য বাড়াতে থাকা চীনকে ঠেকাতে বাংলাদেশকে পাশে চাইছে প্রতিবেশী ভারত।
Advertisement
সোমবার কলকতার নিউ টাউনে উপকূল নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। খবর- আনন্দবাজারের।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, জঙ্গি দমন ও বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে সমন্বয় বৃদ্ধির কৌশলে প্রতিবেশী বাংলাদেশকে আরও বেশি পাশে চায় ভারত। মূলত বঙ্গোপসাগর এলাকায় নিজস্ব উপস্থিতি জোরদারের অংশ হিসেবে এ ধরনের সামরিক কূটনীতির ওপর জোর দিচ্ছে দিল্লি।
ভারতীয় কোস্টগার্ড বাহিনী সূত্রে বলা হচ্ছে, আফ্রিকার সুদান থেকে চীনের সীমানা পর্যন্ত সাগরপথে যোগাযোগপথ তৈরি করছে বেংজিং। ওই পথে খনিজ তেল ছাড়াও সামরিক সরঞ্জামাদি বহনের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। ওই প্রকল্পের নাম ‘স্ট্রিং অব পার্লস’। চীনের নেতৃত্বে ভারত ওই প্রকল্পে না থাকলেও, বাংলাদেশকে স্ট্রিং অব পার্লসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে দেখছে।
Advertisement
চীন পরিকল্পিতভাবে স্ট্রিং অব পার্লস বাস্তবায়ন করলে কৌশলগত দিক থেকে ভারত কিছুটা পিছিয়ে পড়বে। ফলে এ উদ্যোগ থেকে বাংলাদেশকে নিজেদের দিকে নিয়ে আনতে পারলে দিল্লির লাভ। তাই ঢাকার সঙ্গে সমন্বয় বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী সূত্র বলছে, এ পরিকল্পনায় শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রকেও পাশে চায় ভারত। এরইমধ্যে ঘটনাচক্রে ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় নিযুক্ত একটি মার্কিন রণতরী সম্প্রতি গোয়া বন্দরে এসে ভিড়েছে।
ভারতীয় কোস্টগার্ডের আঞ্চলিক মুখপাত্র ডেপুটি কম্যান্ড্যান্ট ভিনন্দন মিত্র জানান, বঙ্গোপসাগরের উত্তর অংশে নিরাপত্তা অটুট রাখার জন্য ২০১৫ সালে এক সমঝোতা স্বাক্ষর করে ভারত ও বাংলাদেশ। তার অংশ হিসেবে সোমবার এ বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের অফিসার ও নাবিকদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে ভারত।
বঙ্গোপসাগরের এই অঞ্চলকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এলাকাটি চীনের অনেকটা কাছাকাছি। এর আগে মাঝেমধ্যেই বঙ্গোপসাগরে চীনা জাহাজ ও ডুবোজাহাজের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। ফলে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সমুদ্রের এ অঞ্চলটি দিল্লির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Advertisement
তাছাড়া এই এলাকায় খাঁড়ি, নদীঘেরা সুন্দরবনের মতো কার্যত অরক্ষিত এলাকাও রয়েছে। ফলে এ এলাকায় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে গেলে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। সেইসঙ্গে দরকার ঢাকার সক্রিয় সহযোগিতা। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে দিল্লিকে। ফলে বঙ্গোপসাগর এলাকায় ঢাকাকে সঙ্গে নিয়ে চীনের আধিপত্য রুখতে তৎপরতা শুরু করতে আগ্রহী দিল্লি।
আনন্দবাজারের খবর আরও বলা হয়, মাসখানেক আগেও ভারতীয় কোস্টগার্ডের সঙ্গে বৈঠক হয় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের। ওই বৈঠকে বাংলাদেশি এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, তাদের কাঠামোগত ঘাটতি ও উপকূল এলাকায় টহলদারির জন্য হোভারক্রাফটও নেই। তবে গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, হোভারক্রাফট কিনছে কোস্টগার্ড। তবে এটি ব্যবহারের জন্য ভারতের সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশি কোস্টগার্ড।
এসআর/জেআইএম