খেলাধুলা

ব্যর্থ সৌম্য, অগ্নি পরীক্ষার মুখে ইমরুল

তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কাছ থেকে বিশেষ ধন্যবাদের আশা করতেই পারেন। এই তিন জনের হাত ধরে ঢাকা টেস্টে এখনো চালকের আসনে বাংলাদেশ।

Advertisement

আর তাতেই বিতর্কের মুখে পড়া হাথুরুর মুখ রক্ষার উপক্রম হয়েছে। দল নির্বাচন নিয়ে, বিশেষ করে মুমিনুলকে বাদ দেয়া এবং ইমরুল কায়েসকে তিন নম্বরে খেলানো নিয়ে যারপরনাই অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল ভক্ত ও সমর্থকদের মনে।

তারপরও সিরিজ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর স্বপ্ন ছিলো অনেকের। আজ (সোমবার) দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সে স্বপ্ন বাস্তব রূপ পাবার সম্ভাবনা জেগেছে। বাংলাদেশ ভক্তদের বড় অংশ এখন ঢাকা টেস্টে জয়ের আশায় উন্মুখ।

আর তাতেই কোচ হাথুরুর দল সাজানো ও গেম প্ল্যান এবং ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে সমালোচনার ঝড় খানিক কমেছে; কিন্তু স্পেশালিস্ট ও সফলতম ওপেনার ইমরুল কায়েসের পরিবর্তে সৌম্য সরকারকে দিয়ে ইনিংসের সূচনা করার পরিকল্পনা গেছে ভেস্তে।

Advertisement

প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয়বারও ব্যর্থ সৌম্য। প্রথম ইনিংসে ফাস্ট বোলার কামিন্সের বলে ৮ রানে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরা এ বাঁ-হাতি ওপেনার আজ সাজঘরে ফিরেছেন ১৫ রান করে। আউট হবার ধরনটি ছিল রীতিমত চোখে লাগার মত।

দিনের শেষ কয়েক মিনিটের খেলা বাকি; এমন সময় বিশ্বের তাবৎ ব্যাটসম্যানই রয়ে সয়ে খেলে দিন পার করে দেন; কিন্তু সৌম্য সে প্রথাগত পথে না হেঁটে হাটলেন ভুল পথে। হঠাৎ তার মনে হলো অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার অ্যাগারের বলকে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাই। আর সেটাই তার জন্য হলো কাল।

বলের পিছনে শরীর ও পা নিয়ে যেতে না পারায় মাঝ ব্যাটে হলো না। বল বাতাসে ভেসে আকাশে উঠলো। মিড অন ফিল্ডার উসমান খাজা দৌড়ে পিছনে গিয়ে তা ধরে ফেললেন। আর এভাবেই ভেস্তে গেল কোচ হাথুরুসিংহের পরিকল্পনা।

যারা পরিসংখ্যান নিয়ে খুব বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তারা হয়ত সৌম্য সরকারকে দিয়ে ওপেন করানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবেন না। কারণ মূলতঃ সীমিত ওভারের ফরম্যাটের জন্য খুব লাগসই ও কার্যকর ব্যাটিং প্রতিভা সৌম্য সরকারের টেস্ট পরিসংখ্যান তেমন ভাল না হলেও ওপেনার সৌম্যর রেকর্ড মন্দ নয়। আট টেস্টে এ বাঁ-হাতির রান ৫০৪ রান। গড় ৩৩.৬০ করে; কিন্তু ওপেনার হিসেবে খেলতে নামা সৌম্য পাঁচ টেস্টে করেছেন ৩৯৭ রান। টেস্টে তার সর্বোচ্চ ৮৬ রানও ওপেন করতে নেমে।

Advertisement

টানা পাঁচ টেস্টে ওপেন। এ বছর জানুয়ারিতে ইমরুল ইনজুরিতে পড়ার পর ক্রাইস্টচার্চে ইনিংস ওপেন করার সুযোগ পান সৌম্য। আর প্রথম সুযোগেই ৮৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। পরের ইনিংসেও ৩৬।

সে থেকে এ পর্যন্ত টানা পাঁচ টেস্ট ওপেনার হিসেবে খেলা। এরমধ্যে আরও তিনবার পঞ্চাশের ঘরে পা রাখা। হায়দরাবাদে ভারতের বিরুদ্ধে ১৫ ও ৪২, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ৭১+ ৫৩। কলম্বোর পি সারায় শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬১ ও ১০। আর অস্ট্রেলিয়ার সাথে চলতি টেস্টে ৮ ও ১৫। এই হলো ওপেনার সৌম্যর পরিসংখ্যান।

অন্যদিকে যার জায়গায় তাকে খেলানো সেই ইমরুল কায়েসের রেকর্ডটিও একটু খুঁটিয়ে দেখা যাক- ২৯ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরি ও চার হাফ সেঞ্চুরিতে ইমরুলের রান ১৪৬৬। গড় ২৭.৬৬। ওপেনার হিসেবে সেই পরিসংখ্যানটা আরও সমৃদ্ধ। ওপেনার ইমরুল ২৫ টেস্টে ৪৮ ইনিংসে করেছেন ১২৫৮ রান। গড় ২৭.৩৪। শতরান দুটি। হাফ সেঞ্চুরি চারটি।

শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যই নয়। ইমরুল কায়েস হচ্ছেন বাংলাদেশের এক নম্বর ও সফলতম ওপেনার তামিম ইকবালের সেরা সঙ্গী। টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তিনটি ওপেনিং পার্টনারশিপ ৩১২, ২২৪ ও ১৮৫ রানই তামিম আর ইমরুলের।

সেই সফল ওপেনারকে তিন নম্বরে খেলানোর অর্থ মুমিনুলকে সুকৌশলে বাদ দেয়া। অথচ পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম তিন নম্বরে খেলতে নেমে শতরান (১১৫) করা ছাড়া ওয়ানডাউনে নেমে আর একটিও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি ইমরুল।

তিন নম্বরে নেমে ৪ টেস্টে ৭ ইনিংসে তার রান ২০৮। গড় ২৯.৭১। সেটা প্রথম ইনিংসে শতরান করে ফেলায়। এরপর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ান ডাউনে নেমে ৯+৩৪, এ বছর মার্চে কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের শততম টেস্টে ৩৪ ও ০।

আর এই টেস্টে প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরা ইমরুল এখন বিপদসঙ্কুল অবস্থায় আছেন। আগামীকাল কোন রান করতে না পারলে শূন্য রানে আউট হবার হ্যাটট্রিক হয়ে যাবে তার। পর পর তিন ইনিংসে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরার মত বড় ব্যর্থতা হবে সঙ্গী।

কাজেই মঙ্গলবার সকালে ইমরুলকে দিতে হবে কঠিন এক অগ্নি পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে তার তিন নম্বরে খেলার পথ এক রকম বন্ধ হয়ে যাবে। দেখা যাক কাল দ্বিতীয় ইনিংসে কী করেন ইমরুল?

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি