তার বিশেষণ দেয়া কঠিন। সাকিব আল হাসান আসলে সব্যসাচি এক ক্রিকেটার। বহুমুখি প্রতিভা তার। গায়ে সাফল্যের পালক ভর্তি। সোনালী সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে অনেক উচ্চতায় এখন সাকিব আল হাসান।
Advertisement
তার নামের সাথে প্রায় আট বছরের বেশি সময় (২০০৯ সাল থেকে) ধরে বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডারের তকমা লেপ্টে আছে। মাঝে কয়েকবার ওই তকমা ছুটে গেলেও আবার কোন না কোন এক সময় ঠিক বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারের খেতাবটা নিজের করে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান।
অসি অলরাউন্ডার ইয়ান ডেভিডসন, ইংলিশ অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম এবং পাকিস্তানের বিশ্বকাপ বিজয়ের নায়ক ইমরান খানের সাথে একই টেস্টে শতরান ও ১০ উইকেট শিকারের দুর্লভ রেকর্ড রয়েছে সাকিবের।
আজ শেরে বাংলায় সাফল্যের নতুন কীর্তি গড়লেন বাংলাদেশের এই প্রাণ ভোমরা। শ্রীলঙ্কার দুই স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন, রঙ্গনা হেরাথ আর প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইনের সাথে এক বিরল রেকর্ডের অংশীদার হলেন সাকিব।
Advertisement
টেস্টে নয়টি প্রতিদ্ব›িদ্ব দেশের বিরুদ্ধে ৫ বা তার বেশি উইকেট দখলের দুর্লভ কৃতিত্বটাতেও ভাগ বসালেন এ বাঁ-হাতি স্পিনার। সোমবার ৬৮ রানে অসিদের প্রথম ইনিংসের অর্ধেকটার পতন ঘটিয়ে সাকিব পাদপ্রদীপের আলোয়। ব্যাট হাতে ৮৪ রানের সংগ্রামী ইনিংস খেলার পর আবার বল হাতে ৫ উইকেট- নজর কাড়া অলরাউন্ড পারফরমেন্সে ভক্ত ও সমর্থকদের প্রশংসাধন্য সাকিব আল হাসান। তাকে নিয়েই তাই যত কথা।
সাকিবের অমন নজরকাড়া চৌকশ পারফরমেন্সে হয়ত ঢাকা পড়ে গেছে; কিন্তু ক্রিকেট বোদ্ধা ও বিশেষজ্ঞদের চোখ এড়ায়নি মেহেদী হাসান মিরাজের বোলিং। তাই তো সোমবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে এ তরুণ অফ স্পিনারের প্রশংসা-স্তুতি গেয়েছেন অনেকেই।
তাদের কথা, সাকিবের মত ৫ উইকেট হয়ত পাননি; কিন্তু আসল কাজটি মিরাজই করে দিয়েছেন। সেটা কি? অসি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে সাজঘরে ফেরানো।
আগের দিন ওয়ার্নারকে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে ভাইটাল ব্রেক থ্রুটা এনে দেয়া মিরাজ আজ সকালের সেশনে বাজিমাত করেন অসি ক্যাপ্টেন স্টিভেন স্মিথকে বোল্ড করে। কাকতালীয়ভাবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের দুই স্তম্ভই ৮ রানে আউট হন।
Advertisement
তার বলে স্মিথ ৮ রানে সাজঘরে ফিরলে মুশফিক বাহিনী সবচেয়ে বেশি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। আর অস্ট্রেলিয়া ব্যাকফুটে চলে যায়। সেখান থেকে আর শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারেনি সফরকারীরা।
আগের দিন খেলা শেষে সাকিব আল হাসান জানিয়েছিলেন, তাদের যত চিন্তা স্মিথকে নিয়ে। বিশ্বমানের এ ব্যাটসম্যানই পারেন খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে।
এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারতের মাটিতে ভারতীয়দের সাঁড়াসি বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে চার টেস্টে তিন সেঞ্চুরিসহ ৪৯৯ রান করা স্মিথ স্পিন ভাল খেলেন, উপমহাদেশের মাটিতে বড় ইনিংস খেলার পর্যাপ্ত মেধা-প্রজ্ঞা ও ধৈর্য্য-সংযমও আছে। সব মিলিযে বাংলাদেশ শিবিরের লক্ষ্য ছিল স্মিথকে যতটা সম্ভব কম সময় ও সংগ্রহে সাজঘরে ফেরানো।
সে লক্ষ্য পূরণের কাজটি করেন মিরাজ। তার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে বোল্ড হয়ে যান স্মিথ। অসি অধিনায়ককে সাজঘরে ফেরাতে রীতিমত এক কৌশল এঁটেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিক।
সোমবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এসে মিরাজ সে তথ্যই জানালেন। বললেন, স্মিথকে আউট করার আসল ফর্মুলার কথা। মিরাজ জানালেন, অসি অধিনায়ককে আউট করতে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম তাকে একটা ফাঁদ পাতার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
কি সেই পরামর্শ? মিরাজের ব্যাখ্যা, ‘গতকাল (রোববার) রাতে মুশফিক ভাই আমাকে একটা পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেন, শোন স্টিভেন স্মিথ বেশিরভাগ সময় স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে সামনে বেরিয়ে এসে খেলে। তাই স্মিথের বিরুদ্ধে রাউন্ড দ্য উইকেট বল করবি। তাতে করে সে উইকেট ছেড়ে সামনে বেরিয়ে আসলেও মারার জায়গা কম পাবে। আমি সে পরামর্শ মেনে ডানহাতি স্মিথের বিরুদ্ধে রাউন্ড দ্য উইকেটে বোলিং করি। আর তাতেই ধরা দেয় সাফল্য।’
বাস্তবেও তাই ঘটেছে। অফস্পিনার মিরাজের রাউন্ড দ্য উইকেটের ডেলিভারি সামনের পায়ে বেরিয়ে অন ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাটে আনতে ব্যর্থ হন স্মিথ। লেগ-মিডল স্ট্যাস্পে পিচ পড়া ডেলিভারি স্মিথের ব্যাট ও প্যাডকে ফাঁকি দিয়ে উইকেট ভেঙ্গে দেয়।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি