প্রথম দিন শেষে সাকিব দাবি করেছিলেন, ‘আমরা চালকের আসনে।’ আজ (সোমবার) দ্বিতীয় দিন শেষে কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ? অফ স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের উপলব্দি, ‘এখনো ম্যাচ আমাদের হাতেই আছে।’
Advertisement
স্বাগতিক দলের তরুণ অফ স্পিনার একা নন, ভক্ত-সমর্থক সবার ধারণাও তাই। ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেও ড্রাইভিং সিটে মুশফিকের দল। এখন সবার প্রশ্ন একটাই- টাইগাররা অজিদের কত রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারবে?
আজ খেলা শেষে সে কৌতুহলি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। তবে বয়সে নবীন এ মেধাবি অফ স্পিনার সে জবাব দিতে গিয়ে বেশ দুরদর্শিতার পরিচয়ই দিলেন। প্রথমে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যত বেশি পারা যায়, ততবেশি রান করতে চাই।’
আবার বলেছেন, ‘প্রথম ইনিংসে ২৬০ রানে অলআউট হয়েও ৪৩ রানের লিড নিয়েছি। এখন শেষ পর্যন্ত যত রানেই এগিয়ে থাকি না কেন, আমাদের চেষ্টা থাকবে সেই রান নিয়েই লড়াই করা এবং ওই স্কোরকে রক্ষা করা।’
Advertisement
এটাই শেষ নয়। আরও আছে। ম্যাচে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে মিরাজের শেষ কথা, ‘আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০০ রান করতে পারলে মনে হয় ভাল হবে।’
প্রথম ইনিংসে ৪৩, আজ শেষ বিকেলে আরও ৪৫ (সৌম্যর উইকেট হারিয়ে)- মোট ৮৮ রানে এগিয়ে থাকা। তার সঙ্গে আরও ৩০০ রান যোগ হবার অর্থ- বাংলাদেশ সাড়ে তিনশোর ওপওে, মানে পৌনে চারশো রানকে মোটামুটি নিরাপদ ভাবছে।
সামনের দিনগুলোয় উইকেটের চরিত্র নাটকীয়ভাবে না পাল্টালে সাড়ে তিনশোর বেশি টার্গেট অসিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলেই মনে হয়।
প্রথম দিন শেষ আধ ঘণ্টা আর আজ প্রায় সারা দিন স্মিথ বাহিনীর ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, এ পিচে খেলতে তাদের রীতিমত কষ্ট হয়েছেছ। একজন ব্যাটসম্যানও স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেননি। উইকেট স্পিন সহায়ক। বল পড়ে এদিক ওদিক ঘুরেছে। বাউন্সও অসমান। কোনো কোনো বল লাফিয়ে উঠেছে। আবার কিছু ডেলিভারি নিচু হয়েও গেছে।
Advertisement
মোদ্দা কথা, স্বচ্ছন্দে খেলার পরিবেশ নয়। এ পিচে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ধৈর্য্য ধরে বলের মেধা ও গুণ বিচার করে খেলাই একমাত্র সমাধান; কিন্তু অজি ব্যাটসম্যানরা সে কাজটিই করতে পারেননি।
বাংলাদেশের তিন স্পিনার, বিশেষ করে সাকিব ও মিরাজ ভাল জায়গায় বল করে গেছেন। বিশেষ করে বোলারদের বুটে বোলিং মার্কের আশপাশে তৈরি ক্ষত ব্যবহার করেছেন বেশ দক্ষতার সঙ্গে। তাদের সমীহ জাগানো বোলিংয়ের যথাযথ জবাব ছিল না স্মিথ বাহিনীর কাছে।
এর মধ্যে অধিনায়ক স্মিথ আর ম্যাক্সওয়েল উল্টো আক্রমণ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছেন। স্মিথ মিরাজকে স্টেপ আউট করে অনসাইডে আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। আর ম্যাক্সওয়েল অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে সাকিবের বুদ্ধিদীপ্ত ডেলিভারিতে হয়েছেন স্ট্যাম্পড।
একজন অজি ব্যাটসম্যানও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। সর্বাধিক ৪৫ রান করেন ওপেনার রেনশ। আর দ্বিতীয় সর্বাধিক ৪১ রান আসে বাঁ-হাতি স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগারের ব্যাট থেকে। শফিউল ক্যাচ ফেলে না দিলে হয়ত অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ২০০‘ও হতো না।
সাকিবের বলে ১১ রানে ক্যাচ তুলে বেঁচে যান অজি ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স। শফিউল ডিপ কভারে তা ধরেও ফেলে দেন। কামিন্স শেষ পর্যন্ত ২৫ রান করলে স্কোরলাইন বড় হয়।
কাজেই মিরাজের কথামত, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০০ রান করতে পারলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের স্পিনারদের বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দে খেলতে খুবই কষ্ট হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের। দ্বিতীয় ইনিংসে সে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আড়াইশর বেশি টার্গেটই তাদের জন্য বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে।
যদিও ইতিহাস জানাচ্ছে, ১১ বছর আগে ফতুল্লায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৫৭ রানের লিড এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০৫ রানের লক্ষ্য বেধে দেয়ার পরও ৩ উইকেটে হেরে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের অনবদ্য সেঞ্চুরিই সেদিন জিতিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে।
তবে আশার কথা হলো, ফতুল্লার সেই উইকেটের সঙ্গে মিল নেই এবারের মিরপুরের উইকেট। দুটোতে ভিন্নতা আছে। তারওপর সেবার উল্লেখ করার মত শুধু স্পিনার ছিলেন মোহাম্মদ রফিক। এবার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং তাইজুল ইসলাম রয়েছেন। সঙ্গে পেসার মোস্তাফিজ আর শফিউল ইসলাম তো রয়েছেনই। সুতরাং, এবার আশায় বুক বাধতে তো আর দোষ নেই।
এআরবি/আইএইচএস/আইআই